Finance Minister Nirmala Sitharaman Reveals Key Reason Behind Foreign Investors Sell Off in Indian Stock Market dgtl
Stock Market Downfall
মুনাফা লুটে টাকা নিয়ে চম্পট! বিশেষ এক শ্রেণির লগ্নিকারীদের ‘খলনায়ক’ বলে হাসির খোরাক নির্মলা
ভারতের শেয়ার বাজারের সূচক ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে লগ্নিকারীদের। এর জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার নিম্নমুখী শেয়ারের সূচক। ফলে বিপুল লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে লগ্নিকারীদের। এর দায় পুরোপুরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ঘাড়েই চাপালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ভারতীয় বাজার থেকে তাঁরা টাকা তুলে নেওয়ায় সেনসেক্স এবং নিফটি নীচে নেমেছে বলে দাবি করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী।
০২১৯
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাজেট-পরবর্তী সাংবাদিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা। সেখানে শেয়ার বাজার সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের বাজারে বিনিয়োগ করে মোটা মুনাফা করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এ বার স্টক বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন তাঁরা। ফলে নিম্নমুখী হয়েছে সেনসেক্স এবং নিফটি।’’
০৩১৯
যদিও নির্মলার এই যুক্তি নামতে নারাজ আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, বাজারের এই পতনের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৮৫ হাজারে চড়েছিল সেনসেক্স। বিদেশি লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রে মুনাফা হয়ে যাওয়ায় টাকা তোলার সেটাই ছিল আদর্শ সময়। কিছু বিনিয়োগকারী টাকা তুলেও নেন। কিন্তু সেটাকে বাজারের লাগাতার পতনের কারণ বলা ঠিক হবে না।
০৪১৯
ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (ফরেন ইন্সস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর বা এফআইআই) লগ্নির পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। অক্টোবর এবং নভেম্বরে তারাই দু’টি বাজার থেকে তুলে নেয় যথাক্রমে ৯৪ হাজার ১৭ কোটি এবং ২১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে অবশ্য ফের ১৫ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগ করেন বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা।
০৫১৯
কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে ফের বাজার থেকে বিপুল টাকা তুলে নিয়েছেন বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। জানুয়ারিতে ৭৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রত্যাহার করেন তাঁরা। আর ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ পর্যন্ত বম্বে ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে গায়েব হয়েছে ২৫ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বিদেশি লগ্নিকারীদের থেকে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা হারিয়েছে বাজার।
০৬১৯
এ ব্যাপারে জারি করা ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ় ডিপোজিটারি লিমিটেডের (এনএসডিএল) তথ্যেও রয়েছে চমক। এই সংস্থার দাবি, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতীয় বাজারে স্টক বিক্রি করে ১,২০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছে বিদেশি পোর্টফোলিয়ো লগ্নিকারীরা (ফরেন পোর্টফোলিয়ো ইনভেস্টমেন্ট বা এফপিআই)। গত বছরই বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার কিনতে ১২.৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন তাঁরা।
০৭১৯
বিশ্লেষকদের দাবি, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশের বাজার থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়েছেন, এ কথা সত্যি। কিন্তু, তাঁরা বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, এমনটা নয়। এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত এফপিআইগুলি ২,১০০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু শেয়ার সূচক ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ায় ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হারিয়েছেন তাঁরা। শতাংশের নিরিখে যা ১৪.২।
০৮১৯
বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের বেহাল দশা নিয়ে মুখ খুলেছেন অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব সচিব তুহিনকান্ত পাণ্ডে। তাঁর কথায়, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে একের পর এক দেশে শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করে চলেছেন। এর প্রভাব ভারতীয় বাজারের উপর পড়েছে। তবে এফপিআইগুলি এখানকার উদীয়মান বাজার ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, এমনটা নয়।’’
০৯১৯
শেয়ার বাজারের অস্থিরতার জন্য বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তাকেও দায়ী করেছেন রাজস্ব সচিব। তবে ভারতের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। ‘‘বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেলে বিদেশি লগ্নিকারীদের মধ্যে টাকা তুলে নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এখানেও সেটাই হচ্ছে।’’ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন তুহিনকান্ত। প্রসঙ্গত, ভারতের বাজারে বিনিয়োগকারী বিদেশি লগ্নিকারীদের সিংহভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
১০১৯
চলতি আর্থিক বছরের (পড়ুন ২০২৪-’২৫) তৃতীয় ত্রৈমাসিকে খারাপ ফল করে অধিকাংশ ভারতীয় সংস্থা। অন্য দিকে গত বছরের নভেম্বরে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে না হতেই ডলারের নিরিখে টাকার দাম অনেকটা কমে যায়। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো, সুদের হার হ্রাস করেছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজ়ার্ভ। শেয়ার বাজারের পতনের জন্য এই কারণগুলিকে দায়ী করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
১১১৯
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সর্বকালীন উচ্চতায় ওঠে নিফটি ৫০। ওই দিন সূচক পৌঁছেছিল ২৬ হাজার ২১৬ পয়েন্টে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এতে ১২.৪ শতাংশের পতন দেখা গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরের ভিত্তিতে এমএসসিআই ইন্ডিয়া সূচকের ৫.৮৮ শতাংশ মোট রিটার্ন, এমএসসিআই ইমাজ়িং মার্কেটস সূচকের ১৫.৩৫ শতাংশ মোট রিটার্নের তুলনায় অনেকটাই কম।
১২১৯
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর অর্থ হল, যে দেশ আমেরিকার পণ্যে যতটা শুল্ক আরোপ করবে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রটির থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ততটাই শুল্ক চাপাবে। এতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে বলে দাবি করেছেন রিপাবলিকান পার্টির বর্ষীয়ান নেতা তথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
১৩১৯
এই পরিস্থিতিতে ১৩ এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজধানী ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সেরেছেন তিনি। সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে চলা বাণিজ্যকে ৫০ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। এর জন্য স্বাক্ষরিত হবে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি। বর্তমানে তা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন।
১৪১৯
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, ‘‘সরকার ভারতকে বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসাবে গড়ে তুলেছে। আমেরিকার বাজারে আমাদের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাসের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’’ চলতি বছরের মাঝামাঝি ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হলে তার প্রভাব বাজারের উপরে পড়বে বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। ওই সময় সেনসেক্স এবং নিফটির ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৫১৯
আর্থিক পরিষেবা বিভাগের কেন্দ্রীয় সচিব এম নাগরাজু জানিয়েছেন, সরকার আমানতের উপর বিমা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। ২০২১ সালে শেষ বার এটি বাড়ানো হয়। ওই সময়ে এক লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে এটিকে পাঁচ লক্ষ টাকা করা হয়েছিল। কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে বিমা সংস্থাগুলির স্টকের সূচক চাঙ্গা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৬১৯
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মুম্বইভিত্তিক নিউ ইন্ডিয়া কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিমিটেডের বোর্ডকে এক বছরের জন্য বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কটির বিরুদ্ধে খারাপ প্রশাসন চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। এর পরেই আমানতের উপর বিমার পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্র, খবর সূত্রের।
১৭১৯
ভারতের বাজারে রয়েছে একাধিক বিদেশি ব্যাঙ্কের শাখা। এ ছাড়া ক্ষুদ্র আর্থিক ব্যাঙ্ক, পেমেন্ট ব্যাঙ্ক, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকেও ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে আরবিআই। এই সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত বিমা প্রকল্পের আওতাধীনে রয়েছে।
১৮১৯
আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, শেয়ার বাজারের এই পতন চিরস্থায়ী নয়। কারণ, বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তকমা ধরে রেখেছে ভারত। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। বর্তমানে অবশ্য কিছুটা নেমে সেটা ৬.৪ শতাংশে চলে এসেছে। কেন্দ্রের মূলধন ব্যয় কমানো এবং পারিবারিক খরচ হ্রাসের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৯১৯
গত বছরের শেষের দিকে ডলারের নিরিখে টাকার দাম লাগাতার কমতে থাকায় প্রশ্নের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা। তাঁর পাল্টা যুক্তি ছিল, ‘‘টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। ডলার শক্তিশালী হয়েছে।’’ এ বারও বাজারের পতনকে অতি সরলীকরণ করা হচ্ছে বলে তাঁর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা। শুধু তা-ই নয়, এই ইস্যুতে তাঁকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।