How Abhishek Banerjee is not getting relief in Kuntal Ghosh’s letter case for 50 days in Calcutta High Court dgtl
Abhishek Banerjee Kuntal Ghosh Case
২৯ মার্চ থেকে ১৮ মে: সুপ্রিম কোর্ট, বেঞ্চ বদল, জরিমানা— অভিষেকের ‘অস্বস্তি’র ৫০ দিন
শহিদ মিনারের সভায় অভিষেকের একটি মন্তব্য থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর থেকে ধাপে ধাপে এগিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ। ৫০ দিন ধরে কখনও সুপ্রিম কোর্টে, কখনও হাই কোর্টে ‘স্বস্তি’ খুঁজেছেন অভিষেক।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ১৩:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার পরে হাই কোর্টে মামলার বেঞ্চ বদল হয়েছিল। তবু ‘স্বস্তি’ পেলেন না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগের বিচারপতির রায় বহাল রইল নতুন বিচারপতির বেঞ্চেও।
০২২১
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেককে নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যে পর্যবেক্ষণ ছিল, তা পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে বিচারপতি অমৃতা সিন্হার বেঞ্চে।
০৩২১
বিচারপতি সিন্হারও এ ক্ষেত্রে একই পর্যবেক্ষণ— ইডি এবং সিবিআই তদন্তের প্রয়োজনে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। তদন্তে অভিষেক সহযোগিতা করবেন। যে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে বিচারপতির এই রায়, তা ফিরে দেখতে হলে মাস দুয়েক পিছনে যেতে হবে।
০৪২১
২৯ মার্চ, ২০২৩। শহিদ মিনারে তৃণমূলের ছাত্রযুব সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। সে দিন থেকেই গোলমালের সূত্রপাত।
০৫২১
শহিদ মিনারের সেই সভায় ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে একটি মন্তব্য করেছিলেন অভিষেক। সেই মন্তব্যের পর থেকেই ধাপে ধাপে এগিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ।
০৬২১
অভিষেক সে দিনের সভায় প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি মদন মিত্র, কুণাল ঘোষেদের দিয়ে তাঁর নাম বলানোর চেষ্টা করছে। এ ভাবে তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে না বলেই জানিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
০৭২১
জনসভা থেকে অভিষেকের এই মন্তব্যের দু’দিন পর, ৩১ মার্চ প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ নিম্ন আদালতে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে অভিষেকের নাম নেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত ওই নেতা।
০৮২১
চিঠিতে কুন্তল অভিযোগ করেছিলেন, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছেন ইডি এবং সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। এই চিঠির প্রতিলিপি পরের দিন যায় হেস্টিংস থানাতেও। বিষয়টিতে পুলিশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন কুন্তল।
০৯২১
কুন্তলের চিঠির পর তদন্তকারী সংস্থা ইডি এ বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাদের বক্তব্য ছিল, গ্রেফতারির পর থেকে এত দিন কুন্তল কোনও অভিযোগ করেননি। অথচ শহিদ মিনারের সভায় অভিষেকের ওই মন্তব্যের পরেই তিনি নিম্ন আদালতে চিঠি দিলেন।
১০২১
অভিষেকের মন্তব্য এবং কুন্তলের এই চিঠির মধ্যে ‘যোগসূত্র’ রয়েছে বলে আদালতে দাবি করে ইডি। এতে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলেও উচ্চ আদালতে জানায় তারা। তার পরেই মামলাটি গ্রহণ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
১১২১
মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতির ‘পর্যবেক্ষণ’ ছিল, ইডি এবং সিবিআই প্রয়োজনে অভিষেককে ডেকে নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। যদিও মামলার রায়ে অন্য কথা বলেছিলেন বিচারপতি।
১২২১
বিচারপতি মামলার রায়ে জানান, শহিদ মিনারে অভিষেকের বক্তব্য ইডি, সিবিআইয়ের তদন্তের বাইরে রাখা উচিত নয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক।
অভিষেকের একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ওই সংক্রান্ত মামলা যদি তাঁর হাতে থাকত, তবে তিনি অভিষেকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করতেন। মন্তব্যের সপক্ষে প্রমাণও দেখতে চাইতেন।
১৫২১
আদালতের বাইরে সাক্ষাৎকারে বিচারপতির এহেন মন্তব্যকেই শীর্ষ আদালতে ‘হাতিয়ার’ করেন অভিষেকের আইনজীবী। তিনি জানান, তাঁর মক্কেলকে ওই বিচারপতি যেন আগে থেকেই ‘টার্গেট’ করে রেখেছেন। বিচারপতির সাক্ষাৎকার থেকেই তা স্পষ্ট।
১৬২১
সুপ্রিম কোর্ট এর পরেই আদালতের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নিয়োগ দুর্নীতির মূল দু’টি মামলা থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেয়। হাই কোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম মামলাগুলি পাঠান বিচারপতি অমৃতা সিন্হার বেঞ্চে।
১৭২১
বিচারপতি সিন্হার বেঞ্চে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান অভিষেক। মামলা থেকে তিনি অব্যাহতিও চান বিচারপতি সিন্হার বেঞ্চের কাছে।
১৮২১
কিন্তু বিচারপতি সিন্হার পর্যবেক্ষণ, অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি। তা হলে তাঁর তদন্তে সহযোগিতা করতে সমস্যা কোথায়? সাধারণ নাগরিক হিসাবেই তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত অভিষেকের।
১৯২১
বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণা করেছেন বিচারপতি সিন্হা। তিনি অভিষেক এবং কুন্তলের আগের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রয়েছে। অর্থাৎ, প্রয়োজনে অভিষেককে ইডি বা সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
২০২১
বিচারপতি সিন্হার রায়ে আরও বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা বা প্রত্যাহারের যে আবেদন অভিষেক করেছিলেন, তার কোনও সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে এবং কুন্তলকে ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে।
২১২১
জরিমানার টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে হবে অভিষেকদের। তবে বিচারপতির এই রায়ের বিরুদ্ধেও আবার সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন অভিষেক। অভিষেক এবং কুন্তল আপাতত সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছেন। দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়েছিল। মামলাটি গ্রহণ করলেও দ্রুত শুনানির আর্জি মঞ্জুর করা হয়নি। প্রধান বিচারপতি অভিষেকদের আর্জি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।