Heavy rain in Himachal Pradesh, when is high rainfall termed as cloudburst dgtl
Cloudburst
মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরের রাজ্য, সাধারণ বৃষ্টির সঙ্গে এর ফারাক কোথায়?
মেঘভাঙা বৃষ্টি কেন এত বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, মেঘভাঙা বৃষ্টি আদতে ভারী বৃষ্টি। তবে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে এর ফারাক রয়েছে। কী সেই ফারাক?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ক্রমাগত ভারী বৃষ্টি, ধসে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড। শুক্রবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের। উদ্ধারে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির কারণে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে হিমাচল প্রদেশের। ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি হিমাচল, উত্তরাখণ্ডকে ভোগাচ্ছে মেঘভাঙা বৃষ্টি। এই মেঘভাঙা বৃষ্টি আসলে কী?
০২১৯
হালকা, ভারী না কি অতি ভারী বৃষ্টি হবে, তা বলতে পারে আবহাওয়া দফতর। তবে বৃষ্টির পরিমাণ উল্লেখ করতে পারে না। সে কারণে মেঘভাঙা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারেন না আবহবিদেরা।
০৩১৯
হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর এক্স (টুইটার) হ্যান্ডলে জানিয়েছিলেন, সে রাজ্যে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে বলেও রিপোর্ট মিলেছে। তিনি বাসিন্দাদের নদী, নালা, জলাশয়ের কাছে যেতে বারণ করেন। ধসপ্রবণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
০৪১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টি কেন এত বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, মেঘভাঙা বৃষ্টি আদতে ভারী বৃষ্টি। তবে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে এর ফারাক রয়েছে। কী সেই ফারাক? মেঘভাঙা বৃষ্টি নির্দিষ্ট একটি এলাকাতে হয়। খুব বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ভারী বৃষ্টি হলে তাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলে না।
০৫১৯
মূলত পার্বত্য এলাকাতেই হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি। তবে সমতলেও মেঘভাঙা বৃষ্টি হতে পারে।
০৬১৯
সব ভারী বৃষ্টি কিন্তু মেঘভাঙা বৃষ্টি নয়। এক ঘণ্টায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১০ সেন্টিমিটার বা তার বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হলে বলা হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি। ওই একই পরিমাণ এলাকায় আধ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হলে তাকেও মেঘভাঙা বৃষ্টি বলেই ধরা হয়।
০৭১৯
এমনিতে সারা দেশে কোনও বছরে স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ১১৬ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। এর অর্থ হল, দেশের সমস্ত জায়গায় যদি একই পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তা হলে যে জল মাটিতে দাঁড়াবে, তার উচ্চতা হবে ১১৬ সেন্টিমিটার।
০৮১৯
যদিও সারা দেশের সব জায়গায় মোটেও এক রকম বৃষ্টি হয় না। কোথাও এই গড়ের ১০ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়। কোথাও এই গড়ের অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়। হিসাবের সুবিধার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সারা বছর হওয়া বৃষ্টির পরিমাণ যোগ করে গড় করা হয়।
০৯১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এই বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের ১০ শতাংশ বৃষ্টি মাত্র এক ঘণ্টায় হয়। সে কারণে বিপর্যয়ের পরিমাণ এতটা বৃদ্ধি পায়।
১০১৯
খাতায়কলমে মেঘভাঙা বৃষ্টি না হলেও ২০০৫ সালের ২৬ জুলাই মুম্বইতে তার থেকেও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল সে দিন। মারা গিয়েছিলেন ৪০০ জন। বাণিজ্যনগরীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ১০০ কোটি আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
১১১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টি খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বর্ষার সময় বেশি হয়। মূলত হিমালয়ের পাদদেশের রাজ্যগুলিতে বেশি দেখা যায়। তার অন্যতম কারণ এখানকার টপোলজি, বায়ুপ্রবাহ, নিম্ন এবং উচ্চ অংশে তাপমাত্রার ফারাক।
১২১৯
হিমালয়ের পাদদেশে রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টি হলে অনেক সময়ই স্থানীয়রা তাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলে দাবি করেন। যদিও সব সময় তেমন ঘটে না। অনেক ক্ষেত্রেই ভারী বৃষ্টি হলেও তা খাতায়কলমে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয় না। এমনটাই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
১৩১৯
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, মেঘভাঙা বৃষ্টি খুব ছোট এলাকা জুড়ে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই হিমালয়ের পাদদেশে সে সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৃষ্টি মাপার কোনও যন্ত্র থাকে না। তাই কতটা বৃষ্টি হয়েছে, তা ধরা পড়ে না। স্থানীয়রা চোখের আন্দাজে দাবি করেন, মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যন্ত কোনও অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টি হলেও তার খবর পৌঁছয় না আবহাওয়া দফতরে।
১৪১৯
এই মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে হড়পা বান, ভূমি ধস হতে পারে। যেমন এখন হিমাচল প্রদেশে হচ্ছে। প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে।
১৫১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টির পূর্বাভাস কি দিতে পারে আবহাওয়া দফতর? আবহাওয়া দফতর বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারলেও কতটা বৃষ্টি হবে, তা জানাতে পারে না। কারণ, তা জানানোর মতো প্রযুক্তি নেই।
১৬১৯
আবহাওয়া দফতর সাধারণত বিস্তৃত এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। জেলাভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস তারা দিতে পারে। বৃষ্টি হতে পারে কি না, জানাতে পারে।
১৭১৯
ছোট এলাকায় আবহাওয়া কেমন থাকবে, বৃষ্টি হতে পারে কি না, তা জানাতে পারে না আবহাওয়া দফতর। ছোট এলাকায় আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা জানতে গেলে আরও উন্নত মানের প্রযুক্তির প্রয়োজন।
১৮১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টি হবে কি না, তার পূর্বাভাস দিতে না পারলেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে কি না, জানাতে পারে আবহাওয়া দফতর। বিপর্যয়ের চার থেকে পাঁচ দিন আগেই সেই পূর্বাভাস দিতে পারে হাওয়া অফিস। ছয় থেকে ১২ ঘণ্টা আগে জানাতে পারে, সেই বৃষ্টি অতি ভারী হতে চলেছে কি না। অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টির আঁচ করা যেতে পারে।
১৯১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টির সংখ্যা কি ইদানীং বৃদ্ধি পেয়েছে? মৌসম ভবন (আইএমডি) জানিয়েছে, মেঘভাঙা বৃষ্টির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে অতি ভারী বৃষ্টি, ঝড়, তাপপ্রবাহ, খরার মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু ভারতে নয়, গোটা পৃথিবীতেই। এর কারণ উষ্ণায়ন।