পতঞ্জলির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গড়ায় আদালতে। সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়। মামলার শুনানি চলাকালীন একাধিক বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রামদেবকে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
করোনা নিরাময় হবে একটা ওষুধেই! এমন দাবি করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল যোগগুরু রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি। করোনার তৃতীয় ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়ার আগে ‘করোনিল’ নামক ওই ওষুধ বাজারে এনেছিল তারা। বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দাবি করা হয়, ‘করোনিলই কোভিড-১৯-এর প্রথম প্রমাণভিত্তিক ওষুধ’। এই দাবি নিয়েই সরগরম হয় জাতীয় রাজনীতি।
০২১৫
রামদেবের কোম্পানির তৈরি ওযুধের বিজ্ঞাপন মানুষের মনে বিভ্রান্ত তৈরি করছে, এমনই দাবি তোলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। আইএমএ-র আরও অভিযোগ ছিল, পতঞ্জলির বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং চিকিৎসককে অসম্মান করা হয়েছে।
০৩১৫
একই সঙ্গে আইএমএ-র অভিযোগ ছিল, কোভিড প্রতিরোধী না-হওয়া সত্ত্বেও শুধু করোনিল কিট বিক্রি করেই আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছিল রামদেবের পতঞ্জলি। আর তার জন্য ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করে আইএমএ-র।
০৪১৫
পতঞ্জলির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গড়ায় আদালতে। সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়। মামলার শুনানি চলাকালীন একাধিক বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রামদেব এবং পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) তথা রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণকে। এমনকি, কেন্দ্রীয় সরকারকেও ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত।
০৫১৫
আদালতে উপস্থিত হয়ে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে রামদেব এবং বালকৃষ্ণকে। শুধু তা-ই নয়, আদালত অবমাননার অভিযোগও ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় হলফনামা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান রামদেবরা। যদিও আদালত তাঁদের ক্ষমা গ্রহণ করেনি। গত বুধবার এই মামলা শুনানিতে শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে, ‘‘আমরা অন্ধ নই’’।
০৬১৫
পুরো বিষয়টি নিয়ে আদালত ‘‘উদার হতে চায় না’’ বলেও মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানিয়েছিল, পুরো বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের উত্তরে সন্তুষ্ট নয় শীর্ষ আদালত।
০৭১৫
২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে করোনিল বাজারে এনেছিল পতঞ্জলি। সেই ওষুধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। করোনিল নিয়ে প্রচার করতে গিয়ে পতঞ্জলি দাবি করেছিল, এই ওষুধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও পরে হু পতঞ্জলির দাবি নস্যাৎ করে দেয়।
০৮১৫
আইএমএ দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উপস্থিতিতে পতঞ্জলি যে ওষুধ বাজারে আনে তাতে হু-এর মিথ্যা শংসাপত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার ব্যাখ্যারও দাবি করেছিল আইএমএ। বিরোধীরাও এই ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করে।
০৯১৫
শুধু এই বিজ্ঞাপন নয়, রামদেবের একটি ভিডিয়ো নিয়েও প্রশ্ন তোলে আইএমএ। সেই ভিডিয়োতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে যোগগুরুকে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘অ্যালোপ্যাথি লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। কোনও আধুনিক ওযুধ কোভিড নিরাময় করতে পারছে না।’’ এই ঘটনায় রামদেবকে আইনি নোটিস পাঠায় আইএমএ।
১০১৫
করোনা রোগের চিকিৎসায় সহযোগী ওষুধ হিসেবে করোনিল ব্যবহার করলে তাতে রোগীর উন্নতি হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে দেশের নানা মহলে। লোকসভায় লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পওয়ার জানিয়েছিলেন, আয়ুষ মন্ত্রকের তরফে দেওয়া ছাড়পত্রে করোনিল ওষুধকে ‘ইমিউনিট বুস্টার’-এর পরিবর্তে ‘করোনা চিকিৎসার ওষুধ’ হিসেবেই উল্লেখ করা হোক, এই মর্মে সম্প্রতি একটি আবেদন করে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ। তার পরই মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে গঠিত ওই পর্যালোচনা কমিটি সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জানিয়েছে, করোনিল ওষুধকে কোভিডের চিকিৎসায় সহযোগী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গত বছর নভেম্বরে পতঞ্জলিকে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসাবে নিজেদের ওষুধ সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ প্রচার করার বিষয়ে সতর্ক করেছিল শীর্ষ আদালত। জরিমানা হতে পারে বলেও মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছিল।
১৩১৫
চলতি বছরে ১৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট একটা বেনামি চিঠি পায়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের উদ্দেশে সেই চিঠি লেখা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, আদালতের নির্দেশের পরেও পতঞ্জলি বিজ্ঞাপন বন্ধ করেনি।
১৪১৫
পতঞ্জলির বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় রামদেবকে তলবও করা হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত ‘পতঞ্জলি’কে সমস্ত বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এবং সংবাদপত্রে সব ‘মিথ্যা’ বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতে উপস্থিত হয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চান রামদেব। পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে হলফনামা জমা দেন তিনি।
১৫১৫
যদিও রামদেবের ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে উত্তরাখণ্ড সরকারকেও ভর্ৎসনা করে বিচারপতি হিমা কোহলির ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, উত্তরাখণ্ড সরকারের লাইসেন্সিং বিভাগের তিন জন আধিকারিককে একসঙ্গে বরখাস্ত করা উচিত। ডিভিশন বেঞ্চের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান উত্তরাখণ্ডের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর জয়েন্ট ডিরেক্টর মিথিলেশ কুমার। বিচারপতি কোহলি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন আমরা ক্ষমা করব?’’ পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের উত্তরে সন্তুষ্ট নয় শীর্ষ আদালত।