Elon Musk Company Starlink may get entry in Indian telecom market how concern is it dgtl
Elon Musk
ভেড়ার চামড়ায় নেকড়ে? পাচার হবে তথ্য? মাস্কের সংস্থার ভারতে প্রবেশ নিয়ে আশা-আশঙ্কার দোলাচল
ভারতের টেলিকম দুনিয়ায় পা রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকান ধনকুবের ইলন মাস্কের সংস্থা ‘স্টারলিঙ্ক’। বিদেশি সংস্থা ইন্টারনেট পরিষেবা দিলে ফাঁস হয়ে যাবে দেশের গোপন তথ্য?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
প্রযুক্তি বনাম জাতীয় সুরক্ষা। প্রশ্নের মুখে গোপনীয়তার অধিকার। ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে কি এই দু’টিকে ‘নিলামে চড়াবে’ নয়াদিল্লি? জল্পনার মধ্যেই অবশ্য নিরাপত্তার যাবতীয় আশ্বাস দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যদিও বিষয়টি নিয়ে টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি সুর চড়াতে শুরু করে দিয়েছে।
০২১৮
ভারতে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক (স্যাটেলাইট) ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে আগ্রহী বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ইলন মাস্কের সংস্থা ‘স্টারলিঙ্ক’, যাকে স্পেকট্রাম দেওয়া নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে দুই দেশীয় সংস্থা ‘জিয়ো’ এবং ‘ভারতী এয়ারটেল’-এর। জাতীয় সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার বিষয়টি তারাই সামনে এনেছে।
০৩১৮
মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ক চাইছে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট দেশের প্রতিটা কোনায় ছড়িয়ে দিতে স্পেকট্রাম বণ্টন করুক কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ বা ট্রাই। কিন্তু, জিয়ো ও এয়ারটেল স্পেকট্রাম নিলামের পক্ষে সওয়াল করেছে।
০৪১৮
স্টারলিঙ্ক জানিয়েছে, সারা বিশ্বে এই পদ্ধতিতে টেলি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে স্পেকট্রাম দেওয়া হয়। জিয়ো এবং এয়ারটেলের আবার যুক্তি, এতে সমস্ত সংস্থা সমান সুযোগ পাবে না। এর জন্য নিলামই একমাত্র পথ, যেখানে স্পেকট্রামের অধিকার নিয়ে কারও কিছু বলার থাকবে না।
০৫১৮
এই পরিস্থিতিতে মাস্কের সংস্থাকে নিয়ে কেন্দ্রকে সতর্ক করেছে পরামর্শদাতা সংস্থা ‘কূটনীতি ফাউন্ডেশন’। তাঁরা একে ‘ভেড়ার চামড়া গায়ে নেকড়ের প্রবেশ’ বলে উল্লেখ করেছে। এতে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনার কথা বলেছে এই পরামর্শদাতা সংস্থা।
০৬১৮
কূটনীতি ফাউন্ডেশনের যুক্তি, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার বেশে ঢুকে দেশের গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে স্টারলিঙ্ক। শুধু তা-ই নয়, ওয়াশিংটনের নানা মতামত নয়াদিল্লির উপর চাপিয়ে দিতে এই সংস্থাকে সুক্ষ্ম ভাবে কাজে লাগাতে পারেন ইলন মাস্ক।
০৭১৮
উল্লেখ্য, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত মাস্ক। তিনি যে এ বার ট্রাম্পের ‘কিচেন ক্যাবিনেটে’ থাকবেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা ‘টেসলা’ ও সমাজমাধ্যম কোম্পানি ‘এক্স’-এর কর্ণধার কোন দফতর পাচ্ছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
০৮১৮
পরামর্শদাতা সংস্থা কূটনীতি ফাউন্ডেশনের দাবি, আমেরিকার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে স্টারলিঙ্কের কর্ণধার মাস্কের যোগাযোগ স্থাপন সময়ের অপেক্ষা, যা এ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। এতে তথ্য ফাঁসের ১০০ শতাংশের সুযোগ থাকছে।
০৯১৮
‘‘যে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া হবে, তা পরিচালিত হবে দেশের বাইরে থেকে। ইন্টারনেট ও ফোনকল পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সীমারেখা কোনও গুরুত্ব পাবে না। ফলে গ্রাহকের তথ্য সরাসরি ওয়াশিংটন প্রশাসনের হাতে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব নয়।’’ সতর্কবার্তায় বলেছে কূটনীতি ফাউন্ডেশন।
১০১৮
এ ব্যাপারে ব্রাজ়িল, ইরান ও ইউক্রেনের উদাহরণ সামনে এসেছে। এই তিন দেশে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে স্টারলিঙ্ক। তিন জায়গাতেই দেশের গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ ওঠে মাস্কের সংস্থার বিরুদ্ধে। তিনটি দেশেই নাগরিকদের তথ্য চুরির নেপথ্যে স্টারলিঙ্ককে দায়ী করা হয়েছে।
১১১৮
অন্য দিকে, ইতিমধ্যেই কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে দু’টি সংস্থাকে ছাড়পত্র দিয়েছে ট্রাই। সেগুলি হল, ওয়ানওয়েব এবং জিয়ো-এসইএস। দু’টি সংস্থার কেউই স্পেকট্রাম পায়নি। ফলে ওই পরিষেবা চালু করতে পারেনি তারা। স্পেকট্রাম কী ভাবে দেওয়া হবে এবং তার জন্য কত টাকা দিতে হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। সূত্রের খবর, চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কিছু চূড়ান্ত করবে ট্রাই।
১২১৮
বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ভারতেই রয়েছে। এ বার সেই বাজার দখলের লড়াইয়ে নামছে মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ক। এই সংস্থার নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে টেসলা-কর্তার সংস্থা। আর তাই স্টারলিঙ্কের পরিষেবা চালু করা নিয়ে সরকারের ফের ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছে কূটনীতি ফাউন্ডেশন।
১৩১৮
বর্তমানে ভারতের ব্রডব্যান্ড বাজারের একটা বড় অংশ দখল করে রেখেছে মুকেশ অম্বানীর সংস্থা রিলায়্যান্স জিয়ো। এর প্রায় ১.৪ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছেন। আর জিয়োর মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংস্থা ৫০ কোটির বেশি। অম্বানীর সংস্থার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হল ভারতী এয়ারটেল। তাদের ৩০ কোটির বেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন।
১৪১৮
মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নাম ‘স্পেসএক্স’। এই সংস্থাই স্টারলিঙ্ককে তৈরি করেছে। এটি প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। এই পরিষেবা চালু করার জন্য পৃথিবীর নিম্নকক্ষে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে স্পেসএক্স। এগুলি মাটিতে থাকা ট্রান্সসিভারের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম।
১৫১৮
রুশ আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত ইউক্রেনকে পরিকাঠামোগত সাহায্য করার দরুণ খবরের শিরোনামে আসে স্টারলিঙ্ক। মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধে বর্তমানে মাস্কের সংস্থার পরিষেবার উপরেই ভরসা করছে ইউক্রেনীয় সেনা। সেখানে চিরাচরিত তারভিত্তিক মোবাইল পরিষেবা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ফলে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক পরিষেবার উপর ভরসা করতে হচ্ছে।
১৬১৮
এ হেন স্টারলিঙ্ক আদৌ ভারতের মাটিতে পা রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ভারতেও স্পেকট্রাম বণ্টন হবে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় শর্ত পূরণ করলে তবেই তা পাবে স্টারলিঙ্ক। এ ব্যাপারে কোনও আপস করা হবে না।’’
১৭১৮
বছর কয়েক আগে ইজ়রায়েলি স্পাইঅয়্যার ‘পেগাসাস’কে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর গোপনীয়তার অধিকার ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ে মোবাইল ফোনে ‘আড়ি পাতা’ হচ্ছে বলে সরব হন বিরোধী নেতা-নেত্রীদের একাংশ। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। স্টারলিঙ্ক এ দেশে ব্যবসা শুরু করলে তেমনই কিছু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
১৮১৮
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের আবার দাবি, মাস্কের সংস্থা ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া শুরু করলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে রিলায়্যান্স জিয়ো। ফলে টেলিকমের দুনিয়ায় নিজের প্রভাব বজায় রাখতে একাধিক পদক্ষেপ করতে পারে এই সংস্থা। আর তখনই মাস্ক ও অম্বানী— বিশ্বের দুই ধনকুবেরের মধ্যে টেলিকম নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখার সুযোগ পাবে আমজনতা।