Earthquake in Iran Israel triggered theories of covert nuclear testing of Tehran dgtl
Iran Israel Conflict
হঠাৎ কেঁপে উঠল শিয়া-ইহুদি ভূমির মাটি, মাটির নীচে গোপনে পরমাণু পরীক্ষা করে ফেলল ইরান?
চলতি বছরের ৫ অক্টোবর ইরান ও ইজ়রায়েলে ভূকম্পন অনুভূত হতেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে জল্পনা। তবে কি ভূগর্ভস্থ পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ইরান?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
একসঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে লড়ছে ইজ়রায়েল। এই আবহে ইহুদিদের ঘুম উড়িয়ে কি পরমাণু হাতিয়ার তৈরি করে ফেলল ইরান? শিয়া মুলুক থেকে ভূকম্পনের খবর আসায় এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। যা যুদ্ধের তীব্রতাকে কয়েক গুণ বাড়াবে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।
০২১৬
শনিবার, ৫ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টা নাগাদ হঠাৎ করেই কেঁপে ওঠে ইরানের সেমনান প্রদেশের আরাদান শহর। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৪.৫। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এর কিছু ক্ষণ পরে ইজ়রায়েলের মাটিও কেঁপে ওঠে। যদিও এই দুই কম্পনের কারণ একই কি না তা পরিষ্কার নয়।
০৩১৬
আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (ইউএস জিয়োলজিক্যাল সার্ভে) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। যার থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে ইরানের রাজধানী শহর তেহরানেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
০৪১৬
ওই ঘটনার কিছু ক্ষণ পর কেঁপে ওঠে ইজ়রায়েলের মাটিও। ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্র (ইউরোপীয়ান মেডিটেরেনিয়ান সিসমিক সেন্টার বা ইএমএসসি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১২টা নাগাদ ইহুদি ভূমিতে কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে এর তীব্রতা ছিল খুবই কম।
০৫১৬
সূত্রের খবর, ইরানের পরমাণু কেন্দ্রের খুব কাছে হয়েছে এই ভূমিকম্প। ফলে এটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, না কি পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে চলছে জোর তর্ক। দীর্ঘ দিন ধরেই আণবিক হাতিয়ার তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তেহরান। শিয়া মুলুকের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা এর প্রায় কাছে পৌঁছে গিয়েছেন বলে ইতিমধ্যেই দাবি করেছে আমেরিকা। ফলে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
০৬১৬
এই প্রসঙ্গে নেটাগরিকদের একাংশের দাবি, ভূগর্ভস্থ পরমাণু পরীক্ষাই চালিয়েছে ইরান। তারই অভিঘাতে ওই কম্পন অনুভূত হয়েছে। তাঁদের কথায়, তেহরানকে এ বার থেকে পরমাণু হাতিয়ারের দেশ বলতে হবে।
০৭১৬
বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরাও। কারণ ইরানে হওয়া ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। যা পরমাণু হাতিয়ারের পরীক্ষার জন্য আদর্শ। তাঁদের দাবি, এই কায়দায় আণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো দেশের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তালিকায় রয়েছে ভারতের নামও।
০৮১৬
অক্টোবরের গোড়াতেই ইজ়রায়েলের উপর প্রায় ২০০ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ইরান। যার অধিকাংশই আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) সাহায্যে মাঝ আকাশে ধ্বংস করেছে ইহুদি ফৌজ। পাশাপাশি, ওই ঘটনার প্রত্যাঘাতের হুমকি দিয়েছেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
০৯১৬
সমর বিশেষজ্ঞদের কথায়, ইরান সত্যি সত্যিই পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে সেখানে প্রত্যাঘাত করা মোটেই সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে মুখোমুখি লড়ায়ের ময়দানেই দেখা যাবে দুই আণবিক শক্তিধর দেশকে। যার আঁচে পুড়তে পারে গোটা পশ্চিম এশিয়া।
১০১৬
ইরানের সবচেয়ে বড় পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র হল ‘নাটাঞ্জ’। এই কেন্দ্র বহু বার উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ইহুদিরা। পাশাপাশি, শিয়া মুলুকটির পরমাণু হাতিয়ার তৈরির পরিকল্পনায় প্রবল আপত্তি রয়েছে আমেরিকার। ফলে এই দুই দেশের গুপ্তচরদের নজর এড়িয়ে পরমাণু অস্ত্রের গবেষণা চালিয়ে যেতে মাটির তলায় নাটাঞ্জ কেন্দ্রটিকে তৈরি করেছে তেহরান।
১১১৬
ফলে শিয়া মুলুকটির গবেষকদের যে ভূগর্ভস্থ পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এই সংক্রান্ত কোনও ছবি প্রকাশ্যে আসেনি। পরমাণু হাতিয়ারের পরীক্ষা নিয়ে তেহরানও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
১২১৬
তবে এ ব্যাপারে উল্টো মতও রয়েছে। সাধারণত, ভূগর্ভস্থ পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে অনেকটা জায়গা জুড়ে মাটিতে ফাটল দেখা যায়। ইরানি শহর আরাদানে তেমন কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ত, জনবসতিপূর্ণ এলাকার এত কাছে পরমাণু পরীক্ষার ঝুঁকি প্রতিরক্ষা গবেষক ও ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসি নেবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
১৩১৬
তৃতীয়ত, পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর সাধারণত যে কোনও দেশ ফলাও করে তা প্রচার করে থাকে। কিন্তু ৫ অক্টোবরের পর দু’দিন কেটে গেলও তা নিয়ে মুখে রা কাটেনি তেহরান। ফলে তার আণবিক হাতিয়ারের ক্লাবের সদস্যপদ পেয়ে যাওয়া নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা।
১৪১৬
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রথম বার পরমাণু হাতিয়ার তৈরি করে আমেরিকা। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ অগস্ট তা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর ফেলেছিল ওয়াশিংটন। ফলে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দ্বীপরাষ্ট্রের ওই দুই শহর। প্রাণ হারান কয়েক লক্ষ মানুষ। আমেরিকার ওই পরমাণু হামলার পরই শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
১৫১৬
আমেরিকার পর আর কোনও দেশ অবশ্য এখনও পর্যন্ত পরমাণু হামলা চালায়নি। তবে এই ব্রহ্মাস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে ইউরোপ ও এশিয়ার বহু রাষ্ট্রই। তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইজ়রায়েল।
১৬১৬
পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। ইসলামীয় দেশগুলির মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের হাতে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। ইরান এটি তৈরি করতে পারলে দ্বিতীয় ইসলামীয় দেশ হিসাবে আণবিক হাতিয়ারের অধিকারী হবে।