এই ইস্যুতে ১৭ অক্টোবর মুখ খোলেন চিনের জাতীয় উপদেষ্টা সংস্থার এক বর্ষীয়ান সদস্য। কোনও রাখঢাক না করে তিনি বলেছেন, ‘‘সাদা-বাড়ির কুর্সিতে (পড়ুন হোয়াইট হাউস, যা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) কমলা হ্যারিসকে দেখতে চায় বেজিং। কারণ, ট্রাম্পের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপের দিকে গিয়েছিল। যা সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।’’
আমেরিকার ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোনও মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। ফলে চিনের ইচ্ছাপূরণ হলে আলান্টিকের পারের দেশটিতে তৈরি হবে নয়া ইতিহাস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা বর্তমানে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে মনোনয়ন জমা করেছেন তিনি। অন্য দিকে, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) জাতীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য জিয়া কিংগুও অবশ্য প্রকাশ্যে আমেরিকার রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘এতে মনে হতে পারে যে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে বেজিং। সেই অভিযোগ আমরা কোনও ভাবেই গায়ে মাখতে চাই না।’’ তবে চিন যে হ্যারিসকেই হোয়াইট হাউসে চাইছে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
চিনের রাজনীতিতে এই জাতীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর গুরুত্ব অপরিসীম। একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে এটি। অনেকেরই ধারণা, জাতীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সিদ্ধান্ত পায়ে ঠেলার ক্ষমতা নেই স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়েরও। ফলে আমেরিকার নির্বাচনে হ্যারিসকে জেতাতে পিছন থেকে বেজিং কলকাঠি নাড়তে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে যে সব কিছু ঠিক করা গিয়েছে, এমনটা নয়। চিনের জাতীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যের কথায়, ‘‘বর্তমান আমেরিকার প্রশাসনকে নিয়েও আমাদের সমস্যা রয়েছে। ট্রাম্প বেজিংয়ের বিরুদ্ধে যে সমস্ত কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে তা পেয়েছেন বাইডেন। ফলে আদর্শগত দিক থেকে একেবারে উল্টো রাস্তায় তিনি যে হাঁটতে পারবেন না, তা সকলেরই জানা ছিল।’’
কিন্তু, তা সত্ত্বেও বাইডেনের আমলে বেজিং-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছে চিন। ‘‘গত চার বছরে আমাদের নিয়ে আমেরিকার নীতি অনেক বেশি স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য হয়েছে। আমরা ফের একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। নানা বিষয়ে জড়িত হচ্ছি। আধিকারিক পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক।’’ বলেছেন চিনা জাতীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জিয়া।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চিন সাগর ও তাইওয়ানের উপর দীর্ঘ দিন ধরেই অন্যায্য দাবি জানিয়ে আসছে চিন। যা নিয়ে সরাসরি বেজিংকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি, বৈদ্যুতিন গাড়ি রফতানির ক্ষেত্রেও চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আমেরিকা। এ হেন সংঘাতের পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট শি-র সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যা উত্তেজনা কমানোর হাতিয়ার বলে মনে করছে ওয়াশিংটন।
২০১৯ সালে চিনা শহর উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। যার সবচেয়ে বড় আঘাত সইতে হয়েছিল আমেরিকাকে। ওই সময়ে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। যা সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর পরই বেজিংয়ের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক লড়াইতে নামেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় শুল্ক যুদ্ধ।
এর পরই আমেরিকায় চিনা পণ্যের আমদানি বন্ধ করতে তৎপর হন ট্রাম্প। বেজিং থেকে আসা যাবতীয় সামগ্রীর উপর মোটা অঙ্কের শুল্ক চাপান তিনি। পাশাপাশি, চিনকে আমেরিকান পণ্য ব্যবহারে বাধ্য করার চেষ্টা করেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। চিনা পণ্যের এই শুল্ক নীতি অব্যাহত রেখেছে বাইডেন প্রশাসন। তবে গত বছর (পড়ুন ২০২৩) চিনে পণ্য রফতানির পরিমাণ বাড়াতে পেরেছে ওয়াশিংটন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy