Avijit Roy Murder: how writer was killed in Dhaka by terrorists of Bangladesh dgtl
Avijit Roy Murder
সিনেমায় নারীর সম্ভ্রম রক্ষার ‘অস্ত্র’ই যখন অভিজিৎ খুনে অভিযুক্তদের মুক্ত করার হাতিয়ার
বাংলাদেশি লেখক, সমাজকর্মী তথা জনপ্রিয় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে বইমেলার বাইরে কুপিয়ে খুন করেছিলেন জঙ্গিরা। হত্যাকারীদের পুলিশি প্রহরার মধ্যে থেকেই ছিনতাই করে নেওয়া হয়েছে রবিবার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
ঢাকাশেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ১২:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশে তখনও ভাষাদিবসের ঘোর কাটেনি। দেশের রাজধানীতে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আয়োজিত বইমেলার ঠিক বাইরে ঘটে যায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড। যার জের এসে পড়ে বিশ্বের অন্যত্র।
ছবি: সংগৃহীত।
০২১৯
বাংলাদেশি লেখক, সমাজকর্মী তথা জনপ্রিয় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে বইমেলার বাইরে কুপিয়ে খুন করেছিলেন জঙ্গিরা। কর্মসূত্রে সে সময় অভিজিৎ থাকতেন আমেরিকায়। কিছু দিনের জন্য ছুটিতে এসেছিলেন নিজের দেশে। হামলায় জখম হন তাঁর স্ত্রী বন্যাও। তাঁর কানে কোপ পড়ে ধারালো অস্ত্রের। কোনও মতে রক্ষা পান তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
০৩১৯
সেই অভিজিৎ-হত্যাকারী জঙ্গিদের দু’জনকে রবিবার ঢাকার আদালত চত্বরে পুলিশি প্রহরার মধ্যে থেকেই ছিনতাই করা হল। বাংলাদেশের আদালতে দোষী সাব্যস্ত ওই দুই জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত অপরাধীদের দিনদুপুরে ছিনতাই সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা দেশে।
ছবি: সংগৃহীত।
০৪১৯
অভিজিৎ-হত্যাকারী জঙ্গিরা হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। দু’জনেই পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
ছবি: সংগৃহীত।
০৫১৯
জানা গিয়েছে, রবিবার গাজিপুরের কাশিমবাজার-২ সংশোধনাগার থেকে ১১ পুলিশের পাহারায় ঢাকায় আনা হয় সিফাত এবং সাকিবকে। দুপুর ১টা নাগাদ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের কারা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল।
ছবি: সংগৃহীত।
০৬১৯
অভিনব কায়দায় তাঁদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনতাই করে নেওয়া হয়। আদালত চত্বরে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন অন্যান্যরা। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের চোখে লঙ্কাগুঁড়ো গোলা জল স্প্রে করে দেন তাঁরা।
ছবি: সংগৃহীত।
০৭১৯
ঔপনিবেশিক ভারতে কর আদায়কারীদের সৈন্য নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে অত্যাচারের কাহিনি ফুটে উঠেছে কেতন মেহতা পরিচালিত ‘মির্চ মশালা’ ছবিতে। যেখানে অত্যাচারী আদায়কারীদের এক জন সোনবাইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তখন সে একটি লঙ্কার গুঁড়ো তৈরির কারখানায় আশ্রয় নেয়। শেষে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে সম্ভ্রম রক্ষা করে। সিনেমার পর্দায় যা ছিল আত্মরক্ষার অস্ত্র, বাস্তবে সেটাই হয়ে গেল জঙ্গিকে ছিনতাই করার ফিকির।
ছবি: সংগৃহীত।
০৮১৯
পুলিশের দাবি, সিফাতদের ছিনতাইকারীরাও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। স্প্রে করার পর পুলিশকর্মীদের তাঁরা মারধর শুরু করেন। ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে নিয়ে উধাও হয়ে যায় বাইক।
ছবি: সংগৃহীত।
০৯১৯
মোট তিনটি বাইকে করে এসেছিলেন জঙ্গিরা। বাইকগুলিকে অনুসরণ করা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজেও কিছু দূর পর্যন্ত বাইকগুলি দেখা গিয়েছিল। পরে আর বাইকের কোনও চিহ্ন খুঁজে পায়নি পুলিশ।
ছবি: সংগৃহীত।
১০১৯
দাগী আসামিরা পুলিশের হাত থেকে এ ভাবে পালিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ জুড়ে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। আদালত চত্বরগুলিতে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জঙ্গিরা যাতে কাঁটাতার পেরিয়ে কোনও ভাবেই ভারতে পৌঁছতে না পারেন, তা-ও নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
ছবি: সংগৃহীত।
১১১৯
বাংলাদেশ জুড়ে সিফাত এবং সাকিবের খোঁজে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জঙ্গিদের সম্ভাব্য আড্ডা হিসাবে কয়েকটি জায়গার খবর পেয়েছে পুলিশ। রবিবার রাতেই একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত।
১২১৯
ঠিক কী করেছিলেন সিফাত, সাকিবরা? জানা যায়, ২০১৫ সালে অভিজিৎ-হত্যার কাজে যে জঙ্গিদলের হাত ছিল, তাতে শামিল হয়েছিলেন এই দু’জনও। অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী বন্যার উপর আক্রমণ করেন তাঁরা।
ছবি: সংগৃহীত।
১৩১৯
২৬ তারিখ রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ একুশের বইমেলা থেকে ফিরছিলেন সস্ত্রীক অভিজিৎ। আচমকা তাঁদের পথ আটকান এক দল দুষ্কৃতী। রিক্সা থেকে নামিয়ে দু’জনকে রাস্তার এক ধারে সরিয়ে আনা হয়। তার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে চলে এলোপাথাড়ি কোপ।
ছবি: সংগৃহীত।
১৪১৯
অভিজিতের মাথায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে পর পর ধারালো অস্ত্রের কোপ মারেন দুষ্কৃতীরা। কেটে নেওয়া হয় বন্যার বাঁ হাতের আঙুল। বন্যার ঘাড়েও কোপ মারা হয়েছিল।
ছবি: সংগৃহীত।
১৫১৯
রক্তাক্ত অবস্থায় অভিজিৎ এবং বন্যাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মারা যান অভিজিৎ। তবে চিকিৎসকরা বন্যাকে বাঁচিয়ে তোলেন। পরবর্তীকালে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বন্যা দাবি করেছেন, ঘটনার দিন কাছেই পুলিশ ছিল। কিন্তু তাঁদের উপর নৃশংস আক্রমণ দেখেও কোনও পুলিশ এগিয়ে আসেননি।
ছবি: সংগৃহীত।
১৬১৯
অভিজিৎ-খুনের পরের দিনই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’। আল কায়দার জঙ্গি আদর্শে অনুপ্রাণিত এই গোষ্ঠীর মাথা সিফাত এবং সাকিব। তাঁদের গ্রেফতারের পর ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত।
ছবি: সংগৃহীত।
১৭১৯
পুলিশি জেরার মুখে জোর গলায় খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন সাকিবরা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, আরও বেশ কয়েক জন তথাকথিত প্রগতিশীল ও মুক্তমনা লেখক এবং সমাজকর্মী তাঁদের হিটলিস্টে রয়েছেন, কারণ তাঁদের সকলকেই ‘ধর্মদ্বেষী ও নাস্তিক’ বলে মনে করেন জঙ্গিরা।
ছবি: সংগৃহীত।
১৮১৯
উল্লেখ্য, এই দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আরও এক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগ ওঠে। অভিজিৎ-হত্যার কয়েক মাস পরেই তাঁর বইয়ের অন্যতম প্রকাশক এবং জাগৃতি প্রকাশনের মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে একই ভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে হত্যার দায়ও স্বীকার করে নেয় ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯১৯
সেই খুনিদের রবিবার দিনদুপুরে পুলিশের চোখে লঙ্কাগুঁড়ো ছিটিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হল। দেশের মানুষ যা নিয়ে আতঙ্কিত। সাকিব এবং সিফাতের খোঁজ দিতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।