Anil Gochikar, the 'Bahubali' Sevayat or bodyguard of Lord Jagannath became social media sensation during Ratha Yatra in Puri dgtl
puri
পুরীর রথযাত্রায় রথ টানেন ‘বাহুবলী’! আন্তর্জাতিক খেতাবও জিতেছেন এই সেবায়েত
আঁটসাঁট করে বাঁধা খাটো ধুতি। আদুর গা ঠেলে বেরোচ্ছে দীর্ঘ দিনের যত্নে লালিত পেশি। এই সেবায়েতের ছবিতে ছেয়ে গিয়েছিল নেটমাধ্যম। অনেকেই তাঁকে বাস্তবের ‘বাহুবলীর’ তকমা দেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
চলতি বছরের জুলাইয়ে পুরীর রথযাত্রায় এক সেবায়েতকে দেখে চমকে গিয়েছেন ভক্তেরা। আঁটসাঁট করে বাঁধা খাটো ধুতি। মাথায় ফেট্টি। আদুর গা ঠেলে বেরোচ্ছে দীর্ঘ দিনের যত্নে লালিত পেশিসমূহ। একমুখ দাড়িগোঁফের আড়ালে শান্তস্নিগ্ধ মায়ালু দু’টি চোখ। বিশাল বপুর এই সেবায়েতের ছবিতে ছবিতে ছেয়ে গিয়েছিল নেটমাধ্যম। অনেকেই তাঁকে বাস্তবের ‘বাহুবলীর’ তকমা দিয়েছিলেন।
০২১৫
এসএস রাজামৌলীর ‘বাহুবলী’ হিসাবে প্রভাসের পেশির কামাল তো বড় পর্দায় দেখেছেন। তবে ঘরের কাছেই যে ‘আসল বাহুবলী’ রয়েছেন, তা জানতেন কি?
০৩১৫
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত হিসাবে যুগ যুগ কাটিয়ে দিয়েছেন ওই ‘বাহুবলীর’ পূর্বপুরুষেরা। তাঁদের মতো তিনিও সেবায়েত হিসাবে মন্দিরের অন্দরে কাজ করেন।
০৪১৫
নেটমাধ্যমে ওই ‘বাহুবলীকে’ নিয়ে হইচই শুরু হতেই তাঁর খোঁজ শুরু করেছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি। তাদের রিপোর্ট জানিয়েছে, ওই ‘বাহুবলী’ হলেন ৪৩ বছরের অনিল গোচিকার। পুরীর মন্দিরের ‘প্রতিহারী’ হিসাবে বছরের পর বছর ধরে জগন্নাথের সেবায় নিয়োজিত তিনি।
০৫১৫
সাধারণত, জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরের কাজেই ব্যস্ত থাকেন সেবায়েতরা। তবে অতিমারির আবহে গত রথযাত্রায় ভক্তসমাগম নিষিদ্ধ করায় অনিলের মতো সেবায়েতরা মন্দিরে চৌহদ্দি ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন রথ টানতে। সে সময় অনিলের সঙ্গে তাঁর ভাই দামোদরও ছিলেন। তবে দু’জনের মধ্যে পেশিবহুল চেহারার জোরে নজর কেড়েছেন অনিল।
০৬১৫
রাতারাতি তারকার খ্যাতি পাওয়া অনিল জানিয়েছেন, কম বয়সে থেকেই আখড়ায় দেহসৌষ্ঠব গড়ার কাজে মন দিয়েছিলেন তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘‘২০১০ সাল থেকে আমি জিম করা শুরু করি। দাদা সুনীলই আমার প্রেরণা। সে-ও বডিবিল্ডার। তাঁকে দেখেই ব্যায়াম করায় মন দিয়েছিলাম।’’
০৭১৫
২০১০ সাল থেকে প্রতি দিন দুপুরবেলাটা ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন অনিল। এই ১২ বছরে নিষ্ঠার ফলও পেয়েছেন তিনি। রাজ্য-দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বডিবিল্ডার হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নজর কেড়েছেন তিনি।
০৮১৫
রুপোলি পর্দায় নায়কোচিত চেহারার অনিলের ঝুলিতে রয়েছে ‘মিস্টার ওড়িশা’ খেতাব। অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও। সে সবে সাফল্যও পেয়েছেন। তিন বারের ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ খেতাবের পাশাপাশি চার বারের ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ জিতেছেন।
০৯১৫
২০১৪ সালে বডিবিল্ডিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জয়। এর পর ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল বডিবিল্ডার্স চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিয়েছিলেন অনিল। দুবাইয়ের সেই প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে নেন তিনি।
১০১৫
দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও তাকে পেশা করেননি অনিল। বরং পূর্বপুরুষের মতো জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত হিসাবেই কাটিয়ে দিয়েছেন বহু বছর। অনিল বলেন, ‘‘জগন্নাথের সেবা না করলে এ দেহ কোন কাজে আসবে!’’
১১১৫
অনিল বলেন, ‘‘আগেকার দিনে পুলিশ বা প্রশাসন জগন্নাথের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন না। সে সময় সেবায়েতরাই সে কাজ করতেন।’’ সেই ঐতিহ্য আজও বজায় রেখেছেন পুরীর মন্দিরের সেবায়েতরা। বিনা বেতনেই সে কাজ করেন তাঁরা। পরিবর্তে মন্দিরের প্রসাদ পান।
১২১৫
দেহসৌষ্ঠব গড়ায় মন দেওয়া অনিল মাছ-মাংস ছুঁয়েও দেখেন না। তিনি নিরামিশাষী। এমনকি, মদ-সিগারেট বা তামাকজাতীয় সব ধরনের নেশা থেকে দূরে থাকেন।
১৩১৫
নিরামিশাষী হলেও নিজের ডায়েট নিয়ে সচেতন অনিল। প্রতি দিন ডাল, সয়াবিন, ব্রকোলির মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। সেই সঙ্গে দেশি ঘি থেকে তাঁর ফ্যাটের চাহিদা পূরণ হয়। অনিলের কথায়, ‘‘নিরামিশাষী হওয়ায় বডিবিল্ডিংয়ের জন্য আমাদের আরও বেশি ব্যায়াম করতে হয়।’’
১৪১৫
অতিমারির সময় বহুড়া যাত্রার দিনই রাস্তায় নেমে রথের রশিতে টান দিয়েছিলেন অনিল। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী, বহুড়া যাত্রার দিন নিজেদের মাসির বাড়ি থেকে পুরীর মন্দিরের গর্ভগৃহ ফিরে আসেন জগন্নাথ, বলভদ্র এবং তাঁদের বোন সুভদ্রা।
১৫১৫
রথ টানার সুযোগ পেয়ে গর্বিত অনিল। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত প্রতিহারী সেবায়েতরা মন্দিরের ভিতরের কাজ করেন। তবে কোভিডের জন্য আমার কাছে সোনার সুযোগ এসেছিল। গ্র্যান্ড রোডে নেমে রথের দড়িতে টান দিতে পেরেছি। ওই মুহূর্তটা জীবনে ভুলব না।’’