French lawmaker asked America to return statue of liberty to France dgtl
statue of liberty
১৩৯ বছর আগে আমেরিকাকে দেওয়া ‘স্বাধীনতা’ ফেরত চাইল ফ্রান্স! উত্তাপ বাড়বে দুই দেশের সম্পর্কে?
১৩৯ বছর আগে আমেরিকাকে দেওয়া উপহার ফেরত চাইল ফ্রান্স। ফরাসি আইনপ্রণেতা রাফায়েল গ্লাকসম্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন সম্প্রতি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ১১:৫৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
নিউ ইয়র্কের নাম শুনলেই সবার আগে যে সৌধটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেটি হল স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। আমেরিকার গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতীক। নিউ ইয়র্কের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ স্ট্যাচু অফ লিবার্টি স্বাধীনতা, মুক্তি এবং আশার প্রতীক। ১৮৮৬ সালে বন্ধুত্বের স্মারক হিসাবে মূর্তিটি আমেরিকার হাতে তুলে দেয় ফ্রান্স। ১৯২৪ সালে ৯৩ মিটার, অর্থাৎ ৩০৫ ফুট উঁচু এই মূর্তিটি সে দেশের জাতীয় সৌধ হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
০২১৯
১৩৯ বছর আগে আমেরিকাকে দেওয়া সেই উপহার ফেরত চাইল ফ্রান্স। ফরাসি আইনপ্রণেতা রাফায়েল গ্লাকসম্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন সম্প্রতি। ফরাসি আইনপ্রণেতার দাবি, যে কারণে এটি আমেরিকার হাতে উপহার দেওয়া হয়েছিল সেই মূল্যবোধ আর যুক্তরাষ্ট্রে নেই।
০৩১৯
তাঁর এই ক্ষোভ মূলত ট্রাম্প ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। আমেরিকার সর্বময় কর্তা প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের কর্মকাণ্ড ফ্রান্সের দেওয়া এই সৌধের মূল উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধের বিপরীত। তাঁর মতে স্বাধীনতা ও মূল্যবোধের প্রতীক হিসাবে যে স্মারক আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল তা হারিয়েছে দেশটি।
০৪১৯
৪৫ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্টের সদস্য জানান, তিনি মনে করেন না যে আমেরিকা আর স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই সেই মূর্তি নিজের দেশে ফিরে আসুক, এটাই তিনি চান।
০৫১৯
গত রবিবার এক জনসমাবেশে গ্লাকসম্যান বলেন, ‘‘মূর্তিটি আমাদের ফিরিয়ে দিন। আমেরিকার কিছু মানুষ অত্যাচারীদের পক্ষ নিয়েছেন। বৈজ্ঞানিক স্বাধীনতার বিশ্বাসকে খর্ব করছেন, গবেষকদের বরখাস্ত করছেন। এই মূর্তি যে মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে, তাঁরা তা রক্ষা করতে পারছেন না।’’ মূর্তিটি যে আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে তা আমেরিকা আর অনুসরণ করে না বলে মন্তব্য করেন গ্লাকসম্যান।
০৬১৯
এর পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউসও। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ফেরানোর প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে আমেরিকা। তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ফ্রান্সে ফেরত দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই ওয়াশিংটনের। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট ১৭ মার্চ সোমবার আক্রমণ করেছেন ফরাসি আইনপ্রণেতাকে।
০৭১৯
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে লিভিট জানান, তিনি অজ্ঞাতনামা নিম্নস্তরের ফরাসি রাজনীতিবিদকে মনে করিয়ে দিতে চান, আমেরিকার কারণেই ফরাসিদের এখন জার্মান ভাষায় কথা বলতে হচ্ছে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং ফ্রান্সের মিত্রতাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। লিভিট বলেন ‘‘ফ্রান্সের উচিত আমেরিকার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।’’
০৮১৯
সম্পূর্ণ তামার তৈরি মূর্তিটি আমেরিকান বিপ্লবের সময় প্রতিষ্ঠিত মিত্রতার স্মারক। ১৮৮৪ সালে ফ্রান্সে এই মূর্তি তৈরি করা হয়। এর পর মূর্তিটি কয়েক ভাগে আলাদা করে জাহাজে করে নিউ ইয়র্কে পাঠানো হয়। যেখানে মূর্তিটিকে সংযুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয়। এটিকে সর্বসমক্ষে আনা হয় ১৮৮৬ সালে। সেই বছরের অক্টোবরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্লোভার ক্লিভল্যান্ড ওই মূর্তির উদ্বোধন করেন।
০৯১৯
ফ্রান্স ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মজবুত করতে ১৮৬৫ সালে এদুয়া দে লাবুলে আমেরিকার জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির প্রস্তাব দেন ফরাসি সরকারকে। লাবুলে ছিলেন তৎকালীন বিশিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, মার্কিন সংবিধানের এক জন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, মূর্তির মাধ্যমে ফ্রান্স ও আমেরিকার মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক দৃঢ় করা।
১০১৯
বিশাল আকারের শিল্পকর্মটি রূপায়ণের দায়িত্বভার ন্যস্ত হয় খ্যাতনামী ফরাসি শিল্পী ফ্রেডরিখ-অগুস্তে বার্তোলদির উপর। আর এক ফরাসি প্রকৌশলী গুস্তাভ আইফেল ধাতব কাঠামো বানিয়ে তার রূপ দিয়েছিলেন। কাঠামোটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে মূর্তির তামার দেহটি আলাদা ভাবে নড়াচড়া করানো সত্ত্বেও সেটা সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়।
১১১৯
ফরাসি আইনপ্রণেতার মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার নিয়ে আরও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, যেটি একসময় বিশ্বের স্বাধীনতার প্রতীক ছিল, তা হঠাৎ সাংস্কৃতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১২১৯
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুর্সি দখলের পর থেকে ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমেই তলানিতে ঠেকেছে ওয়াশিংটনের। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং জ়েলেনস্কির বাদানুবাদের পর ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন।
১৩১৯
আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের যে সমস্ত দেশের বন্ধুত্ব রয়েছে, মূলত তাঁরাই জ়েলেনস্কিকে সমর্থন করেছেন। ট্রাম্প আমেরিকার কুর্সিতে বসার পর থেকে এই মিত্র দেশগুলি আতঙ্কিত।
১৪১৯
ইউরোপের ২৭টি দেশের উপর শুল্ক-হামলা করতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উপর শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডা, মেক্সিকো এবং চিনের উপর ইতিমধ্যেই শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
১৫১৯
তিনটি দেশই আমেরিকাকে কড়া বার্তা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের সঙ্গেও বাণিজ্যিক যুদ্ধের পথে হাঁটলে তা আমেরিকার জন্য খুব একটি সুবিধার হবে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলি ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য জয়লাভ করার পর উৎফুল্লই হয়েছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ফিরে আসা ইস্তক ইউরোপের দেশগুলির খোলাখুলি সমালোচনা শুরু করেছেন ট্রাম্প।
১৬১৯
ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি থেকে শুরু করে স্পেন, ডেনমার্ক, পর্তুগাল, ইটালি হোক বা সুইডেন, নরওয়ে— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশই গত তিন বছর ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করে আসছে।
১৭১৯
জ্বালানি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এত দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে কিভ। ইউক্রেনীয় শস্যেই ইইউ-ভুক্ত সমস্ত দেশের আমজনতার পেট ভরে, এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। যুদ্ধে ইউক্রেনের হার হলে পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে পড়বে তার বড় প্রভাব। সে ক্ষেত্রে জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলিতে দেখা দিতে পারে খাদ্যসঙ্কট। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জ়েলেনস্কি বেনজির বাদানুবাদের পর একযোগে তাই ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা মুখ খুলেছেন।
১৮১৯
সংবাদমাধ্যম পলিটিকো উল্লেখ করেছে, লিবার্টি দ্বীপে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভটি মার্কিন সরকারের সম্পত্তি হওয়ায় গ্লাকসম্যানের অনুরোধ বাস্তবে কার্যকর হবে এমন সম্ভাবনা কম। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাংস্কৃতিক শাখা ইউনেস্কো বলেছে, বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সম্পদের তালিকায় এই মূর্তিটি রয়েছে। তারাও উল্লেখ করেছে যে এই প্রতীকী সৌধটি মার্কিন সরকারের সম্পত্তি।
১৯১৯
এই মুহূর্তে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ একটি সূক্ষ্ম রেখার উপর হাঁটছেন। এক দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার এবং তাঁর নীতিগত কিছু পরিবর্তনকে সামলাতে চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে হোয়াইট হাউসের কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে প্রতিবাদও করেছেন তিনি। বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্কবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তিনি। তাই এই ধরনের দাবি ট্রাম্প এবং ফরাসি সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।