All you need to know about the struggle of Vijayta Pandit dgtl
Vijayta Pandit
কুমার গৌরবের প্রাক্তন প্রেমিকা, বলিউড থেকে অনেক দূরে মিঠুন, প্রসেনজিতের এই নায়িকা
বিজয়েতা পণ্ডিতের জন্ম হরিয়ানার হিসার শহরে হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। তাঁর পরিবারের প্রায় সকলেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ১২:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বিজয়েতা পণ্ডিত। ১৯৮১ সালে রাজেন্দ্র কুমারের পরিচালনায় ‘লভ স্টোরি’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রেখে জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছিলেন অভিনেত্রী। এই ছবিতে কুমার গৌরবের সঙ্গে তাঁর জুটি দর্শকের মনে আলাদা ভাবে জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু অভিনয় জগতে তাঁর আসার কাহিনি ভিন্ন।
০২২০
বিজয়েতার জন্ম হরিয়ানার হিসার শহরে হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। তাঁর পরিবারের প্রায় সকলেই শাস্ত্রীয়সঙ্গীত চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিজয়েতারা তিন ভাই এবং চার বোন। ভাইবোনদের মধ্যে দিদি সুলক্ষণা অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনার ফাঁকে দিদির সঙ্গে শুটিং দেখতে যেতেন বিজয়েতা।
০৩২০
সেই সেটে উপস্থিত ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। অভিনেতা হিসাবে বহু বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলেও প্রথম বার প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেই ছবিতে অভিনেতা হিসাবে বেছেছিলেন তাঁর ছেলে কুমার গৌরবকে। নায়িকার সন্ধান করছিলেন রাজেন্দ্র। সেটে বিজয়েতার উপর নজর পড়ে তাঁর।
০৪২০
পরে, সুলক্ষণার কাছে বিজয়েতার জন্য অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান রাজেন্দ্র। তখন বিজয়েতার বয়স ১৪-১৫ বছর। পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে রাজেন্দ্রর প্রস্তাবে পরিবারের তরফে কেউ রাজি হননি। কিন্তু বিজয়েতা পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় চালিয়ে যাবেন বলায় বাড়ির লোকেরা সম্মতি দেন।
০৫২০
‘লভ স্টোরি’ ছবির শুটিং চলাকালীন কুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। পর্দায় তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন সকলের পছন্দ হয়। ফলে, পরিচালক-প্রযোজকেরা তাঁদের দু’জনকে একসঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব জানাতেন। একই ছবিতে অভিনয় করলে দু’জনে একসঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন তাঁরাও।
০৬২০
কিন্তু রাজেন্দ্র চাইতেন না তাঁর ছেলে কেরিয়ার ছেড়ে অন্য কোনও দিকে মন দিক। বিজয়েতার সঙ্গে কুমারের মেলামেশাও পছন্দ করতেন না তিনি। এই কথা জানতে পারায় কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেন বিজয়েতা। সমস্ত ছবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
০৭২০
অন্য কোনও ছবিতে কাজ করবেন ভেবে অপেক্ষা করতে থাকেন বিজয়েতা। কিন্তু ছবি-নির্মাতারা তাঁকে একা চাইছিলেন না। সকলেই কুমার-বিজয়েতার জুটিকে চাইছিলেন। ফলে, ফিল্ম জগৎ থেকে তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিলেন।
০৮২০
এই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘কার থিফ’ ছবিটি। এই ছবিতে সুনীল আনন্দ এবং আশা পারেখের সঙ্গে অভিনয় করেন বিজয়েতা। শুট চলাকালীন এই ছবির পরিচালক সমীর মলকানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি।
০৯২০
১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চারটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিজয়েতা। মিঠুন চক্রবর্তী, শক্তি কপূর, অনিল কপূর, অমরেশ পুরি, ড্যানি ডেনজংপার মতো বলি তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এমনকি, টলিউডে প্রসেনজিতের সঙ্গে ‘অমর সঙ্গী’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন বিজয়েতা।
১০২০
পর পর হিন্দি এবং বাংলা ছবিতে অভিনয় করলেও বিজয়েতার জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। তাঁর দিদি সুলক্ষণার সঙ্গে সঞ্জীব কুমারের গভীর সম্পর্ক ছিল। সঞ্জীব হৃদ্রোগে মারা যাওয়ার পর সুলক্ষণা মানসিক অবসাদের শিকার হন। তাঁকে সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে বিজয়েতার উপর। আর্থিক উপার্জনের জন্য তিনি তাঁর দুই ভাই সুরকার জুটি যতীন-ললিতের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। তাঁদের স্টুডিয়োতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন বিজয়েতা।
১১২০
সেখানেই তাঁর আলাপ হয় আদেশ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। তিনিও সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কখন যে ভালবাসায় পরিণত হয় তা বুঝতেই পারেননি বিজয়েতা।
১২২০
১৯৯০ সালে আদেশের সঙ্গে বিয়ে হয় বিজয়েতার। দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরিবারের সকলে গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিজয়েতার সঙ্গে সঙ্গীতের সখ্য বহু দিনের। তাই যতীন-ললিত যে ছবির গানের সুর করতেন অনেক ক্ষেত্রে বোন বিজয়েতা সেই ছবিতে গান করতেন। শুধু হিন্দি ছবিতেই নয়, বাংলা ছবিতেও গান গেয়েছিলেন তিনি।
১৩২০
কিন্তু সঙ্গীত জগতে পদার্পণের কয়েক বছর পর সমস্যা দেখা দেয়। এমন বহু বার হয়েছে যখন বিজয়েতাকে দিয়ে প্রথম বার গান গাওয়ানোর পর সুরকারেরা অলকা ইয়াগনিকের কাছে যেতেন। শেষ পর্যন্ত অলকাকে দিয়েই গানগুলি গাওয়ানো হত।
১৪২০
এক সাক্ষাৎকারে বিজয়েতা দাবি করেছিলেন, তিনি যে সুর-তাল-লয়ে গাইতেন, অলকা সেটাই অনুকরণ করতেন। এর ফলে অলকার অনুশোচনা হত বলেও দাবি করেন তিনি।
১৫২০
২০০২ সালে সুলক্ষণার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হতে থাকে। তার সঙ্গে তাঁর আর্থিক অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়ে। বিজয়েতা তখন দিদির বাড়ি বিক্রি করে সেই টাকায় সুলক্ষণার চিকিৎসা করাতেন। সুলক্ষণাকে নিজের বাড়িতে এনেও রেখেছিলেন তিনি।
১৬২০
পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আদেশ একটি বিলাসবহুল বাংলো কেনার সিদ্ধান্ত নেন। অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকও করে ফেলেন বাংলোটি। কিন্তু এর পর আদেশের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। মুম্বইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হলেও আদেশকে সুস্থ করতে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ খরচ হত তা জোগাড় করার সাধ্য ছিল না আদেশ-বিজয়েতার।
১৭২০
তাই প্রথমে তাঁরা এক কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ গাড়িটি বিক্রি করেন। আদেশের স্টুডিয়োটিও ভাড়া দিতে হয়। বিজয়েতার জন্মদিন উপলক্ষে আদেশ তাঁকে যে বহুমূল্য গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন, তাও বিক্রি করে দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত খরচের ভার সামলাতে না পেরে বাংলোটি কেনার জন্য যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা ফেরত নিতে যান বিজয়েতা।
১৮২০
কিন্তু এই বাংলোর মালিকানা তখন ‘রামায়ণ’ নির্মাতা রামানন্দ সাগরের ছেলে মোতিসাগরের কাছে। শোনা যায়, বিজয়েতার কাছে সব শোনার পরেও টাকা ফেরত দেননি তিনি। পরে টাকা ধার নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরেও আদেশকে বাঁচাতে পারেননি বিজয়েতা। স্বামীকে হারানোর শোকে কাতর হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
১৯২০
সেই শোক কাটতে না কাটতেই আরও এক বার ধাক্কা খান তিনি। ২০১৮ সালে তাঁর এক বোন সন্ধ্যা হঠাৎ গায়েব হয়ে যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা। তার পর আর বাড়ি ফিরে না আসেননি তিনি। পরে তাঁর কঙ্কালসার দেহ উদ্ধার করা হয়। স্বামীর পর বোনকেও হারান বিজয়েতা।
২০২০
বর্তমানে বিজয়েতা সঙ্গীত জগৎ এবং সিনেমা জগৎ থেকে বহু দূরে। তবে বড় ছেলে অভিতেশ মায়ের পেশা অনুসরণ করে সঙ্গীতচর্চা শুরু করেছেন। অভিনেতা টাইগার শ্রফের দুটো নাচের ভিডিয়োয় গান গেয়েছেন তিনি। ছোট ছেলে ডাক্তারির পড়াশোনা করছেন। দুই ছেলেকে নিয়েই এখন দিন কাটাচ্ছেন বিজয়েতা।