All you need to know about Haiti’s Mud cookie dgtl
Haiti Mud Cookie
অর্থের অভাব না শুধুই অন্ধবিশ্বাস? কোন কারণে কাদার রুটি খেয়ে দিন গুজরান করে হাইতির একাংশ
বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাইতির অনেক মানুষের এক বেলার খাবার জোটানোরও ক্ষমতা নেই। তাই পেট ভরানোর তাগিদে কাদার তৈরি রুটি খান তাঁরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ১৩:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
হাইতি। ক্যারিবিয়ান সাগরের অ্যান্টিলিস দ্বীপপুঞ্জের হিস্পানিওলা দ্বীপে, কিউবা এবং জামাইকার পূর্বে এবং বাহামা, তুর্কস এবং কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত এই দেশকে বিশ্বের অন্যতম গরিব দেশ হিসাবে গণ্য করা হয়।
০২২২
ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে এই দ্বীপরাষ্ট্রের আয়তন মাত্র ২৭,৭৫০ বর্গ কিমি। মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি।
০৩২২
ছোট এই দেশের বাসিন্দাদের একাংশ এতটাই গরিব যে, অনেক সময় কাদা দিয়ে তৈরি রুটি খেয়েও দিন গুজরান করতে হয় তাঁদের।
০৪২২
হাইতির অন্যতম গরিব এলাকা শার্লিন ডুমাস। এই বস্তি এলাকার মানুষ দুপুরের খাবার হিসাবে সাধারণত এই বিশেষ কাদার রুটি খেয়ে থাকেন।
০৫২২
মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাইতির অনেক মানুষের এক বেলার খাবার জোটানোরও ক্ষমতা নেই। পেট ভরানোর তাগিদে কাদার তৈরি রুটিকেই তাই অবলম্বন করে নিয়েছেন তাঁরা।
০৬২২
কৃষি, পরিবহণ এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ব জুড়ে খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই।
০৭২২
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়লেও, ক্যারিবিয়ান সাগরে শুধুমাত্র আমদানির উপর নির্ভর করে থাকা দেশগুলিতে এর প্রভাব অনেক বেশি।
০৮২২
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে গত দুই দশকে খাবারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
০৯২২
২০০৭ সালে হওয়া ঘূর্ণিঝড় এবং ২০১০ সালে হওয়া ভূমিকম্পের কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জে তরফে হাইতিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে এখনও ঠিক ভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি সেই দেশ। আর সেই কারণে এখনও নাকি সে দেশের বহু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কাদার তৈরি রুটির উপর নির্ভর করে রয়েছেন।
১০২২
তবে শুনলে অবাক হতে হবে যে, কাদার রুটি তৈরি করতে যে মাটি লাগে, তা নিয়েও রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন হাইতির এক দল মানুষ।
১১২২
হাইতিতে যে কাদা দিয়ে রুটি তৈরি হয়, তা নিয়ে আসা হয় হিনচে শহর থেকে। বিক্রি হয় ‘লা স্যালাইন’ বাজারে। বাজারের শাকসব্জি এবং মাংসের পাশাপাশি বিক্রি হয় এই মাটিও।
১২২২
প্রথমে বাজার থেকে সেই শুকনো মাটি কিনে আনা হয়। মাটি গুঁড়ো করে সেখান থেকে বাদ দেওয়া হয় নুড়ি-পাথর। এর পর সেই মাটিকে আরও মিহি করে গুঁড়িয়ে তা জলে ভিজিয়ে কাদার মণ্ড তৈরি হয়।
১৩২২
এর পর কাদার ওই মণ্ডে নুন এবং মশলা মিশিয়ে রুটির মতো গোল করে বেলে নেওয়া হয়। গোলাকৃতি কাদার রুটি তৈরি হয়ে গেলে তা শুকোনোর জন্য রোদে ফেলে রাখা হয়।
১৪২২
কাদার রুটি রোদে দু’-তিন দিন শুকিয়ে নেওয়ার পর তা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। অনেক সময় তা বাজারেও বিক্রি করা হয়। তবে খুবই সামান্য মূল্যে।
১৫২২
হাইতির বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শুধুমাত্র কম দামের জন্য নয়, ‘পুষ্টিগুণের’ জন্যও তাঁরা কাদার রুটি খেতে পছন্দ করেন।
১৬২২
হাইতির অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং শিশুদের জন্য কাদার রুটি অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, কাদার রুটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং শিশুদের শরীরে অ্যান্টাসিড এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূর্ণ করে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা এই রুটি খেলে সন্তানরা স্বাস্থ্যবান হবে বলেও প্রচলিত রয়েছে সে দেশে।
১৭২২
যদিও চিকিৎসকদের মতে, হাইতিবাসীদের এই ধারণা ভ্রান্ত। কাদার রুটি খেলে উপকারের থেকে অপকার বেশি বলেই মত চিকিৎসকদের।
১৮২২
চিকিৎসকদের মতে, দিনের পর দিন কাদার রুটি খেলে দাঁতের ক্ষয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১৯২২
তবে চিকিৎসকদের সাবধানবাণীকে গুরুত্ব না দিয়ে এখনও সে দেশে রমরমিয়ে কাদার রুটি খাওয়ার চল রয়েছে।
২০২২
কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজির অধ্যাপক জেরাল্ড এন ক্যালাহানের মতে, কাদার রুটিতে মারাত্মক পরজীবী এবং বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে। তবে এটি গর্ভের ভ্রূণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি।
২১২২
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিস্বাদ এই রুটি খাওয়ার পরই তা মুখের সমস্ত আর্দ্রতা শুষে নেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই স্বাদ অনুভব করা যায়।
২২২২
বাঁচার তাগিদে হাইতিবাসীরা এই কাদার রুটি খান। বেঁচে থাকার জন্য দিনের পর দিন কাদার রুটি খেয়ে পেট ভরাতে হয় তাঁদের।