All you need to know about German claims that American F-35 has a kill switch that could deactivate the fighter jet dgtl
F-35
ট্রাম্পের হাতিয়ার কি এ বার ‘কিল সুইচ’? যুদ্ধবিমান নিয়ে জার্মানির দাবি কি সতর্কবার্তা ভারতের জন্যও?
বিশ্বের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলির অন্যতম এফ-৩৫ ‘স্টেল্থ’ প্রযুক্তিসম্পন্ন। ফলে রাডারের নজরদারি এড়িয়ে শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে হামলা বা নজরদারির কাজ করতে পারে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ০৭:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের সময় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে আমেরিকায় তৈরি যুদ্ধযান (ইনফ্র্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিক্ল) স্ট্রাইকার, ট্যাঙ্কবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র জ্যাভেলিন, জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হার্পুন-সহ নানা আধুনিক সমরাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ভারতকে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
০২২৩
আমেরিকায় তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। আমেরিকার বায়ুসেনার বিমান এফ-৩৫, চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।
০৩২৩
বিশ্বের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলির অন্যতম এফ-৩৫ ‘স্টেল্থ’ প্রযুক্তিসম্পন্ন। ফলে রাডারের নজরদারি এড়িয়ে শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে হামলা বা নজরদারির কাজ করতে পারে।
০৪২৩
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই সম্প্রতি ভারতের বায়ুসেনার প্রধান অমরপ্রীত সিংহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ)।
০৫২৩
অমরপ্রীত জোর দিয়ে জানিয়েছেন, ভারতকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে অবশ্যই। তবে এফ-৩৫ নিয়ে এখনও বিবেচনা করা হয়নি।
০৬২৩
আমেরিকায় তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিয়ে যখন এত আলোচনা, এত দোনামনা তখন এফ-৩৫ নিয়ে জার্মানি এমন এক দাবি করেছে, যাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব জুড়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে।
০৭২৩
জার্মানির আশঙ্কা, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে এমন একটি ‘কিল সুইচ’ রয়েছে, যা সক্রিয় করলে ওই যুদ্ধবিমানগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, জার্মানি, ব্রিটেন-সহ ১৩টি ইউরোপীয় দেশ আমেরিকার থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি করেছে। কিল সুইচের ধারণা সত্যি হলে ওই দেশগুলি বিপদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কেউ কেউ আবার মনে করছেন ট্রাম্পের ‘হাতের পুতুল’ হয়ে থাকতে হতে পারে ওই দেশগুলিকে!
০৮২৩
কিন্তু কী এই ‘কিল সুইচ’? ‘কিল সুইচ’ হল এমন একটি সুইচ যা দিয়ে এক মুহূর্তে যুদ্ধবিমান নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যাবে। তা সে যুদ্ধবিমানগুলি যে দেশেই থাকুক না কেন! জার্মানির আশঙ্কা, এ ভাবে এফ-৩৫ বিমানগুলির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার কাছে।
০৯২৩
কিন্তু তা নিয়ে কেন আশঙ্কা প্রকাশ করছে জার্মানি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু কোটির একটি চুক্তি করেছে জার্মানি, যার আওতায় ৩৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পেতে চলেছে তারা। আর সে কারণেই জার্মানির আশঙ্কা, যুদ্ধবিমানগুলি তাদের কাছে থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার হাতেই।
১০২৩
উল্লেখ্য, এফ-৩৫ বিমানে ‘কিল সুইচ’ থাকা নিয়ে বহু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা প্রমাণিত হয়নি। জার্মানির ওই দাবিতে, আবার নতুন করে হইচই পড়েছে।
১১২৩
সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্য বন্ধ করার ঘোষণা করেছে ট্রাম্প সরকার। তার আগে দু’দেশের মধ্যে খনিচুক্তি স্থগিত হয়। এর পরেই একটি রিপোর্টে উঠে আসে যে, ইউক্রেনের হাতে থাকা মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলি ইউক্রেনে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
১২২৩
এর পরেই উদ্বেগ তৈরি হয় যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইউক্রেনের মতো অন্য দেশেও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারেন ট্রাম্প। যখন-তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হাতে থাকা যুদ্ধবিমানগুলি নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন তিনি।
১৩২৩
পরে দেখা যায়, রাডার সিস্টেমের জন্য কাজ করা বন্ধ করেছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলি। তবে নিজেদের ‘কিল সুইচ’ দাবি থেকে পিছু হটেনি জার্মানি। জার্মানির অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘হেনসোল্টের’ যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জোয়াকিম শ্রানজোফার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এফ-৩৫-এর কিল সুইচ কিন্তু কোনও গুজব নয়।’’
১৪২৩
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান কঠোর অবস্থানের কারণে ইউরোপীয় নেতারা জ়েলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই জার্মানির দাবি, ভবিষ্যতে তাদের জব্দ করতে কিল সুইচের ব্যবহার করতে পারে আমেরিকা।
১৫২৩
সুইৎজ়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বিভাগ আবার অন্য কথা বলছে। তাদের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ নিষ্ক্রিয় করতে পারে, এমন দাবি ভুয়ো। তারা জোর দিয়ে বলেছে যে, যুদ্ধবিমানগুলি যে কোনও সময় স্বাধীন ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
১৬২৩
সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল ফ্রেডেরিক ভ্যানসিনাও গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, এফ-৩৫ কোনও ‘রিমোট-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিমান নয়’।
১৭২৩
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান উলফগ্যাং ইশিংগার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনকে ট্রাম্পের সমর্থন না করা প্রতিরক্ষা বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কের জন্য অশুভ ইঙ্গিত।
১৮২৩
তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি আমাদের আশঙ্কা হয় যে, আমেরিকা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিয়ে জার্মানির সঙ্গেও ইউক্রেনের মতোই করবে, তা হলে চুক্তি বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’’
১৯২৩
আমেরিকার যুদ্ধবিমান নিয়ে জার্মানির সেই দাবির মাঝখানেই অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, পুরো বিষয়টি ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। গত মাসেই বেঙ্গালুরুর ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করতে আমেরিকা দু’টি এফ-৩৫ পাঠিয়েছিল।
২০২৩
তার পরেই ভারতীয় বায়ুসেনায় এগুলির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এর পর ট্রাম্প নিজেই প্রস্তাব দেন মোদীকে। আমেরিকায় তৈরি এফ-৩৫ এবং রাশিয়ায় নির্মিত সুখোই এসইউ-৫৭-র মধ্যে কোনও একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে নিতে পারে বলে গত কয়েক বছর ধরেই জল্পনা রয়েছে।
২১২৩
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ এ ক্ষেত্রে রুশ বিমান কেনার পক্ষপাতী। তাঁদের যুক্তি, অতীতে কখনও আমেরিকার তৈরি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান ভারতীয় সেনা ব্যবহার করেনি। অন্য দিকে, মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০-সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলটদের। যদিও উৎকর্ষের বিচারে এফ-৩৫ এগিয়ে বলে পাল্টা মতও রয়েছে।
২২২৩
তবে ‘কিল সুইচের’ দাবির পর রাশিয়ার সুখোই এসইউ-৫৭ বিমান কেনার সপক্ষে যুক্তি আরও জোরালো হচ্ছে। উল্লেখ্য, এফ ৩৫-এর তিনটি ধরন রয়েছে। এফ ৩৫এ, এফ৩৫বি এবং সি। এফ ৩৫এ যুদ্ধবিমানের এক একটির দাম আট কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬৯৩ কোটিরও বেশি)।
২৩২৩
এফ৩৫বি-এর একটির দাম সাড়ে ১১ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯৯৭ কোটি) এবং এফ ৩৫সি ভ্যারিয়ান্টের একটির দাম ১১ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৯৫৩ কোটির বেশি)।