বিহারের গ্রাম থেকে মুম্বই সফর খুব সহজ ছিল না চন্দন রায়ের। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ছাপ কি বিকাশের চরিত্রের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন?
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ ০৯:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যাঁরা সিনেমা এবং সিরিজ দেখতে পছন্দ করেন, তাঁদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজটি। এমনকি, ‘পঞ্চায়েত’-এর প্রতিটি চরিত্রের অভিনয় কমিক টাইমিং-এর মাধ্যমে দর্শকদের মন জিতেছে।
০২১৮
ফুলেরা গ্রাম পঞ্চায়েত সচিবের সর্বক্ষণের সঙ্গী ও সহায়ক বিকাশ। মুখে সর্বদা হাসি লেগে রয়েছে। সহজ-সরল ভাবে সকলকে আপন করে নিতে পারে— এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ‘বিকাশ’কে বাকি চরিত্রের থেকে আলাদা করেছে।
০৩১৮
কিন্তু বিহারের একটি গ্রাম থেকে মুম্বই শহরে এসে ‘বিকাশ’ হয়ে ওঠার কাহিনি সহজ ছিল না। বৈশালী জেলার অম্তর্গত মহনার গ্রামেই বেড়ে ওঠা চন্দন রায়ের। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল তাঁর।
০৪১৮
ছট পুজোর সময় পাড়ার অনুষ্ঠানে নাটক পরিবেশন করা হত, ছোটবেলায় সেই সব নাটকেই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতেন চন্দন।
০৫১৮
গ্রামে পরিচিতিও হয়েছিল তাঁর। এর পর কোনও নাটক হলেই চন্দনের ডাক পড়ত সেখানে। এমনকি, ছাত্রাবস্থায় স্কুলের অনুষ্ঠানে সব নাটকেই তাঁকে দেখা যেত।
০৬১৮
এক সাক্ষাৎকারে চন্দন জানিয়েছেন, খেলাধুলো করার বয়সে তিনি রেডিয়ো ও টেলিভিশন নিয়েই সারা দিন কাটিয়ে দিতেন। বাচিক শিল্পীদের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন অভিনেতার অভিজ্ঞতা, জীবনের ওঠাপড়া শুনে তাঁর ভিতর অভিনেতা হওয়ার খিদে আরও বেড়ে উঠত।
০৭১৮
পরে উচ্চশিক্ষার জন্য পটনা যান তিনি। মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলের মতো এখানেও তিনি থিয়েটার এবং বিভিন্ন ‘স্ট্রিট প্লে’-তে অংশগ্রহণ করতেন।
০৮১৮
স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তিনি ডিপ্লোমা কোর্স করতে দিল্লি যান। সেই সময় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পড়াশোনা শেষ করার পর একটি নামী সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকের কাজও পেয়ে যান চন্দন।
০৯১৮
থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বহু গুণী ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে আসতে থাকেন তিনি। তাঁদের কাছ থেকে আরও ভালো করে অভিনয়ের খুঁটিনাটি রপ্ত করেন।
১০১৮
চাকরি ও থিয়েটার এক সঙ্গে সামলে আবার মুম্বইয়েও যেতেন অডিশন দিতে। এক সময় রঘুবীর যাদবের কাছে অভিনয় শেখার জন্য ‘ওয়ার্কশপ’-ও করেছিলেন চন্দন। রঘুবীরের পরামর্শেই বলিউডে কাজ খোঁজার চেষ্টা করতেন।
১১১৮
আর থিয়েটার নয়, এর পর শুধু ক্যামেরার সামনেই অভিনয় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ফলে দিল্লির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পাকাপাকি ভাবে মুম্বইয়ে থাকতে শুরু করেন চন্দন। মুম্বইয়ে থাকাকালীন, এত জায়গায় ঘুরে ঘুরে তিনি অডিশন দিতেন যে কবে, কোথায় কোন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন সেটাই তাঁর মনে থাকত না।
১২১৮
‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজের জন্য তিনি অডিশন দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ‘টিভিএফ’-এর ব্যাপারে তার কোনও স্পষ্ট ধারণা ছিল না। পরিচালক দীপক কুমার মিশ্র তাঁকে ‘বিকাশ’ চরিত্রের জন্য বেছে নিলে তিনি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
১৩১৮
যাঁর কাছে এক সময় ওয়ার্কশপ করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে একই ফ্রেমে দাঁড়িয়ে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন, এ যেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। রঘুবীর যাদব, নীনা গুপ্ত, জীতেন্দ্র কুমারের মতো বড় মাপের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করবেন ভেবে তিনি যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন।
১৪১৮
ক্যামেরার সামনে যে ‘অভিষেক ভাইয়া’-এর সঙ্গে চন্দনের এত মেলামেশা, এত বন্ধুত্ব, শ্যুটিং শুরু হওয়ার আগে সারা দিন ধরে নাকি সেই ‘অভিষেক ভাইয়া’র ভিডিয়োই দেখছিলেন নেটমাধ্যমে। জীতেন্দ্রর অভিনয় করার ধরণ বোঝার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
১৫১৮
‘জামুন’ ওয়েব সিরিজ এবং ‘সনক’ সিনেমাতে অভিনয় করলেও ‘পঞ্চায়েত’-এ অভিনয় করার ফলে বিপুল সাফল্য অর্জন করেন চন্দন। দর্শকদের মনে ‘বিকাশ শুক্লা’ যেন আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
১৬১৮
‘দিদার শরীর খারাপ’, ‘হাত ভেঙে গিয়েছে’ এ রকম বহু মিথ্যা অজুহাত দিয়ে শুধু অভিনয়ের করার নেশায় বার বার অডিশন দিতে গিয়েছেন মুম্বইয়ে। ‘পঞ্চায়েত’-এর প্রথম পর্ব মুক্তি পাওয়ার পর চন্দন তাঁর মাকে পুরো ওয়েব সিরিজটি দেখিয়েছিলেন।
১৭১৮
তাঁর মা চাইতেন না তিনি অভিনয় জগতে আসুন, অভিনয় করবেন বলে স্থায়ী চাকরি যখন তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন থেকেই তাঁর মা বলতেন, দারোগার কোনও পদ খালি থাকলে সেখানে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে।
১৮১৮
এখন আর দারোগা নয়, বরং গ্রাম পঞ্চায়েত সহায়ক হয়েই ভক্তদের মন জয় করছেন তিনি।