All need to know about 1872 US Elections, when an incumbent president fight against dead opponent dgtl
US Presidential Election 2024
‘লড়াই’ করেছিলেন মৃত প্রার্থী! ১৫২ বছর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরল ঘটনার সাক্ষী ছিল আমেরিকা
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা ভোটারদের সরাসরি ভোট (পপুলার ভোট)-এ নির্ধারিত হয় না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (ফেডারেল) নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় এক একটি প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা কে হবেন, তা জানতে আর বেশি সময় বাকি নেই। মঙ্গলবারই আমেরিকার নাগরিকেরা সেই বাসিন্দার নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। আপাতত ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে সারা বিশ্ব। তবে কমলা হ্যারিস আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বৈরথ যদি অমীমাংসিত রয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কী হতে পারে, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে।
০২২২
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা ভোটারদের সরাসরি ভোট (পপুলার ভোট)-এ নির্ধারিত হয় না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (ফেডারেল) নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় এক একটি প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।
০৩২২
আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই প্রদেশের সব ক’টি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। যেমন, টেক্সাসে ৪০ জন ইলেক্টর রয়েছেন। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই প্রদেশে বেশি পপুলার ভোট পাবেন, তিনিই প্রদেশের ৪০ জন ইলেক্টরকে জিতে নেবেন।
০৪২২
ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। দু’টি প্রদেশ বাদে বাকি সবগুলি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ করলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
০৫২২
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনেক ইতিহাস, অনেক বিরল ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু সে সব ঘটনা যতই মনে রাখার মতো হোক না কেন, আমেরিকার ১৮৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাকি সব ঘটনাকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল। কারণ সে বছর, তৎকালীন এক প্রেসিডেন্ট লড়াইয়ে নেমেছিলেন মৃত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
০৬২২
১৮৬৯ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান প্রার্থী ইউলিসিস এস গ্রান্ট। ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
০৭২২
তার মধ্যেই আসে ১৮৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যা সে বছরের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমেরিকার গণতন্ত্রে লড়াই প্রধানত দুই দল, আরও স্পষ্ট করে বললে দুই ব্যক্তির মধ্যে হয়।
০৮২২
সেই নির্বাচনে এক দিকে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী গ্রান্ট। প্রেসিডেন্টের গদি রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। অন্য দিকে ছিলেন, নিউইয়র্ক ট্রিবিউনের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক তথা গ্রান্ট সরকারের অন্যতম মুখ্য সমালোচক হোরেস গ্রিলি। লিবারেল রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ছিলেন গ্রিলি।
০৯২২
লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি ছিল আমেরিকার একটি রাজনৈতিক দল যা ১৮৭২ সালেই তৈরি হয়। প্রেসিডেন্ট গ্রান্ট এবং তাঁর কট্টর সমর্থকদের বিরোধী এই দলটি সে বছরের মে মাসে তৈরি হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, গ্রান্টকে আর প্রেসিডেন্টের আসনে না বসতে দেওয়া।
১০২২
আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন জেনারেল গ্রান্ট। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে রিপাবলিকান পার্টি ১৯৭২ সালে পুনরায় তাঁকেই মনোনীত করেছিল প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে। কিন্তু সবাই সেই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না।
১১২২
সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতেই লিবারেল রিপাবলিকান তৈরি হয়। নেতা মনোনীত করা হয় গ্রিলিকে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও লিবারেল রিপাবলিকানদের সঙ্গে অস্থায়ী জোট গঠন করে গ্রিলিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১২২২
নিউইয়র্ক ট্রিবিউনের সম্পাদক গ্রিলি রাজনীতিবিদ হিসাবে ততটা অভিজ্ঞ ছিলেন না। তাঁর মতামত এবং প্রতিশ্রুতি ভোটারদের অনুপ্রাণিত করতে পারেনি।
১৩২২
শেষ পর্যন্ত গ্রিলিকে পরাজিত করেছিলেন গ্রান্ট। তবে অদ্ভুত এক ঘটনার কারণে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় সেই নির্বাচন। পপুলার ভোটগ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মাথায় মারা যান গ্রিলি। যে কারণে গ্রান্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন এক জন মৃত প্রার্থী।
১৪২২
ভোট গণনা হওয়ার পর দেখা যায় ৩৭টি প্রদেশের মধ্যে ৩১টিতে জয়ী হয়েছেন গ্রান্ট। এই সময় থেকেই গ্রিলির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করে। নির্বাচনের সপ্তাহ তিনেক পর ২৯ নভেম্বর তিনি মারা যান।
১৫২২
এর ফলে ধন্দে পড়ে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’। কী ভাবে এক জন মৃত প্রার্থীর হয়ে ভোট পরিচালনা করা যায়, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
১৬২২
গ্রিলির মৃত্যুতে ‘ইলেক্টোরাল কলেজে’ বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তিনি যে হেতু ইতিমধ্যেই কিছু সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন, তাই সেই ভোটগুলি কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
১৭২২
গ্রিলির মৃত্যুর পর সেই সব ভোট অন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী ফলাফলে কোনও বদল আনতে পারেনি।
১৮২২
সেই ঘটনা ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একমাত্র ঘটনা যখন প্রার্থীর ভোট ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, ভোটগ্রহণের পরই মারা গিয়েছিলেন প্রার্থী।
১৯২২
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে মঙ্গলবার। তবে কমলা হ্যারিস আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বৈরথ যদি অমীমাংসিত রয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কী হতে পারে, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে।
২০২২
ভারতের মতো বহুদলীয় দেশে এই ধরনের পরিস্থিতিকে ‘ত্রিশঙ্কু’ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, যখন নির্দিষ্ট কোনও দল বা জোট সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসন বা ‘জাদুসংখ্যা’ পায় না। বহুদলীয় গণতন্ত্রের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট দলগুলি বড় দল বা জোটকে সমর্থন করে। তখন অচলাবস্থা কাটে। আমেরিকার মতো মূলত দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক দেশে সেই সুযোগ নেই।
২১২২
অতীতে এমন নজির প্রায় না থাকলেও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটই ২৬৯-এ এসে থামতে পারে। যদি কমলা উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়ার মতো দোদুল্যমান প্রদেশ বা ‘সুইং স্টেটে’ জয়ী হন, আর ট্রাম্প জয়ী হন জর্জিয়া, অ্যারিজ়োনা, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং একটি ইলেক্টোরাল কলেজবিশিষ্ট নেব্রাসকায়, তবে দু’জনেই ২৬৯-এ এসে থেমে যেতে পারেন।
২২২২
সে ক্ষেত্রে বাইডেনের উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার দায়িত্ব যাবে আমেরিকার আইনসভার কাছে। আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভস ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবে হবু প্রেসিডেন্টকে। আর হবু ভাইস প্রেসিডেন্টকে বেছে নেবে উচ্চকক্ষ সেনেট।