African Baobab is dying due to climate change says new research dgtl
African Baobab
ধরে রাখতে পারে সওয়া লক্ষ লিটার জল! ‘চাঁদের পাহাড়’-এর দেশ থেকে কি হারিয়ে যাবে বাওবাব?
আফ্রিকার সুপ্রাচীন বাওবাব গাছের মৃত্যুতে বাড়ছে উদ্বেগ। গবেষকদের একাংশের দাবি, জলবায়ু বদলের জেরে বিশাল এই গাছগুলি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়েননি, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। যার ছত্রে ছত্রে রয়েছে আফ্রিকার বর্ণনা। সেখানে কাহিনির নায়ক শঙ্কর প্রকাণ্ড ‘বাওবাব’ গাছ দেখে রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছিল বিস্ময়। সেই বনস্পতিই কিনা এ বার ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে!
০২১৭
আফ্রিকার বিশ্ব পরিচিতিতে মিশে আছে বাওবাব। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটাটা’। সাম্প্রতিক গবেষণায় দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশবিদেরা দাবি করেছেন, ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বাওবাব গাছগুলি। যার নেপথ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন।
০৩১৭
এই নিয়ে ২০১৮ সালে ‘নেচার প্ল্যান্টস’ পত্রিকায় একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেই উঠে আসে বাওবাব মহীরুহের মৃত্যু সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫টি প্রাচীন বাওবাবের উপর নজরদারির কথা। যার ১০টিই জলবায়ু বদলের কারণে মরে গিয়েছে বা ভেঙে পড়েছে।
০৪১৭
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ এবং উদ্ভিদবিদদের একাংশ অবশ্য এই মহীরুহের মৃত্যুর কারণ ঘিরে কিছুটা সন্দিহান। তাঁদের অনুমান, হঠাৎ করে বাওবাবগুলির দেহ রাখার নেপথ্যে রয়েছে জলবায়ু বদল। তাঁদের দেওয়া এই তত্ত্ব সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না অন্য বিজ্ঞানীরাও।
০৫১৭
আফ্রিকার বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে বাওবাব গাছের ভূমিকা অপরিসীম। এই মহীরুহগুলি সেখানকার বাসিন্দা ও প্রাণীকুলকে খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে থাকে। জলবায়ু বদলের কুপ্রভাব ঠেকাতে বাওবাবের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বাওবাব ফল বিক্রি করে আফ্রিকার কৃষকেরা হাজার হাজার টাকা রোজগার করেন। এই ব্যবসা আগামী দিনে এক কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৬১৭
বাওবাব ফল অত্যন্ত সুস্বাদু। পুষ্টিবিদদের কথায়, আফ্রিকার এই ফল ভিটামিন সি-তে পরিপূর্ণ। এ ছাড়া এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। মানবদেহে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক তৈরিতে সাহায্য করে বাওবাব ফল। অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধিতে এটি সহায়ক বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
০৭১৭
আফ্রিকায় তাই বাওবাব গাছের পরিচিতি ‘ট্রি অফ লাইফ’ বা জীবনের গাছ হিসাবে। এগুলি আনুমানিক হাজার বছর বেঁচে থাকে। আর তাই বিশ্বের দীর্ঘজীবী উদ্ভিদের তালিকায় নাম রয়েছে এই মহীরুহের।
০৮১৭
বাওবাব শুধু আফ্রিকাবাসীর উপকারে আসে এমনটা নয়। এতে আশ্রয় নেয় বহু বন্য প্রাণী। তাদের বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন এই মহীরুহ। বাওবাব স্থানীয় উপজাতিদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে রয়েছে। যাঁরা এর পাতা, ফল, বীজ এবং কাণ্ড ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করেন।
০৯১৭
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশবিদদের একাংশ আবার ‘বাওবাব স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক’ (বাওবাব এজ় সিম্বল অফ রেজ়িলেন্স) নামের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে আবার দাবি করা হয়েছে, আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে এই মহীরুহের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১০১৭
প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে ‘আফ্রিকান বাওবাব অ্যালায়েন্স’ নামের গবেষণা সংস্থার সদস্যদের গলায়। তাঁদের দাবি, বাওবাবের সংখ্যা যে স্বাস্থ্যকর, সেটা একাধিক সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে। যে প্রাচীন গাছগুলি মারা গিয়েছে, তার পিছনে প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বাওবাবকে নিশ্চিহ্ন করছে বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
১১১৭
একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইতিহাসগত ভাবে খারাপ জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বছরের পর বছর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে বাওবাব। যার মধ্যে রয়েছে খরা ও বন্যা। এই মহীরুহগুলির মৃত্যুর সঙ্গে জলবায়ু বদলের সম্পর্ক থাকার কোনও প্রমাণ নেই।
১২১৭
গবেষকেরা জানিয়েছেন, যে বাওবাব গাছগুলি মারা গিয়েছে সেগুলি অত্যাধিক পরিমাণ জল ধারণ করে রেখেছিল। সেটিই মহীরুহগুলির মৃত্যুর অন্যতম কারণ। খরা পরিস্থিতি বনস্পতিগুলির উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেও দাবি তাঁদের।
১৩১৭
বাওবাব নিয়ে গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১০৬টি গাছের উপর নজর রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে গত ১৭ বছরে একটি মাত্র মহীরুহের মৃত্যু হয়েছে। বাকি গাছগুলিতে কোনও রকমের অস্বাস্থ্যকর কিছু দেখা যায়নি। উল্টে তাতে নতুন পাতা গজিয়েছে।
১৪১৭
বাওবাব গবেষক সারাহ ভেন্টার বলেছেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাপ্তবয়স্ক মহীরুহগুলি দ্রুত হারে মারা যাচ্ছে, এই ধারণা অমূলক। উল্টে এই গাছগুলির সহনশীলতা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক।’’
১৫১৭
বাওবাব গাছের বৈশিষ্ট্য হল, এটি কাণ্ডে কয়েক লক্ষ লিটার জল ধারণ করতে পারে। এটি দেখতে কতকটা বোতলের মতো। আফ্রিকায় এর অপর নাম ‘বিশ্ব গাছ’ বা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রি’। আফ্রিকা ছাড়া কিছু আরব দেশেও এই বাওবাব গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
১৬১৭
বাওবাব গাছের আকৃতি বেশ অদ্ভুত। এর দিকে তাকালে মনে হবে গাছটির কাণ্ড নীচের দিকে আর শিকড় উপরে। এই মহীরুহে বছরে মাত্র ছ’মাস পাতা থাকে। এর ফুলে থাকে পাঁচটি পাপড়ি। ফুলের রং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে লাল, হলুদ ও সাদা।
১৭১৭
সাধারণত আফ্রিকার শুষ্ক অঞ্চলে বাওবাব বেশি পরিমাণে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পূর্ণবয়স্ক এই মহীরুহের কাণ্ডের ১.১৭ লক্ষ লিটার জলে ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে। আফ্রিকার মাদাগাস্কারে ‘টি পট বাওবাব’ নামের একটি গাছ রয়েছে। এটির বয়স কয়েক হাজার বছর। অস্ট্রেলিয়াতেও এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়।