A green-hued comet made its closest approach to Earth for first time since Stone Age, says astronomers dgtl
Comet
৫০ হাজার বছর পর পৃথিবীর কাছাকাছি, রাতের আকাশে সবুজের ছটামাখা ধূমকেতু
ধূমকেতুটির পোশাকি নাম, সি/২০২২ ই৩ (জ়েডটিএফ)। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের দাবি, প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর কাছ দিয়ে গিয়েছিল সেটি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সময়ের ব্যবধান প্রায় ৫০ হাজার বছরের। অত বছর আগে অর্থাৎ সেই প্রস্তর যুগে শেষ বার দেখা গিয়েছিল সবুজের ছটামাখা একটি ধূমকেতু। এত বছর পর সম্প্রতি আবার সেটি পৃথিবীর কাছাকাছি এল। রাতের আকাশে ধরা পড়ল ধূমকেতুর যাত্রা। সম্প্রতি এমনই জানিয়েছেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা।
০২২০
ধূমকেতুটির পোশাকি নাম, সি/২০২২ ই৩ (জ়েডটিএফ)। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের দাবি, প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর কাছ দিয়ে গিয়েছিল সেটি। সম্প্রতি উত্তর গোলার্ধে রাতের আকাশ আলো করেছিল ওই ধূমকেতুটি। যদিও এর অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল গত মার্চে।
০৩২০
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সান দিয়েগো কাউন্টিতে ‘পালোমার অবজ়ারভেটরি’ থেকে গত মার্চে ওই ধূমকেতুটিকে দেখেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। জ়েডটিএফ বা জ়ুইকি ট্রান্সিয়েন্ট ফেসিলিটির সার্ভে ক্যামেরায় চোখ রেখে বসেছিলেন তাঁরা। সে সময়ই তা ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
০৪২০
‘প্ল্যানেটারি সোস্যাইটি’ নামে আমেরিকার একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, ধূমকেতুটি সৌরজগতের বাইরের দিক ছুঁয়ে যাচ্ছিল। সে জন্যই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে এত দীর্ঘ সময় নিয়েছে এটি।
০৫২০
অস্টিনের সংস্থা ‘আর্থস্কাই’ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এলেও ওই ধূমকেতুটির দূরত্ব হতে পারে ৪.২ কোটি কিলোমিটার থেকে ৪.৪ কোটি কিলোমিটার।
০৬২০
‘আর্থস্কাই’-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রস্তর যুগের পর এই প্রথম পৃথিবীর কাছাকাছি এসে গেলেও তা চাঁদের থেকে ১০০ গুণ বেশি দূরত্বে থাকবে ধূমকেতুটি।
০৭২০
সম্প্রতি ধূমকেতুটিকে দেখেছেন ইটালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিয়ানলুকা মাসি। সে দেশের ‘বেলাট্রিক্স অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অব়জ়ারভেটরি’ থেকে ওই ধূমকেতুটিকে দেখেন তিনি।
০৮২০
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-এ মাসি জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে ওই ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছ দিয়ে গিয়েছে। সে সময় পৃথিবী থেকে ৪.২ কোটি কিলোমিটার দূরে ছিল ধূমকেতুটি।
০৯২০
পৃথিবীর কাছাকাছি আসা ধূমকেতুটির কী রকম চেহারা ছিল? জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পোলারিস বা ধ্রুবতারার কাছে ধূমকেতুটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, একটা হালকা সবুজের আভা যেন অস্পষ্ট ভাবে ঘষে চলে গিয়েছে।
১০২০
সাধারণত ধূমকেতুর গা থেকে বিভিন্ন রঙের আলো বিচ্ছুরিত হয়। রাসায়নিক কারণ ছাড়াও কক্ষপথের অবস্থানভেদে ঘোরার সময় এমনটা হয় বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দাবি।
১১২০
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারাদের থেকে ধূমকেতুকে তার ‘লেজ’ দিয়েও আলাদা করা যেতে পারে। আকাশে ঘোরাফেরার সময় ধূমকেতুর পিছনে ধুলোর ‘লেজ’ দেখা যায়। তাতে বিভিন্ন কণা যেন জ্বলন্ত অবস্থায় থাকে।
১২২০
ধূমকেতুটির চারপাশ ঢাকা থাকে ইংরেজির ‘কমা’ আকৃতির জ্বলজ্বলে সবুজ অংশ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ওই ‘কমা’ আকৃতির জ্বলজ্বলে সবুজ অংশটি একটা খামের মতো ঢেকে থাকে ধূমকেতুটিকে।
১৩২০
সূর্যের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় ধূমকেতুর চারপাশে ওই খামের মতো অংশটি তৈরি হয়। যা সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয় বলে দূরবীক্ষণ যন্ত্র থেকে ধূমকেতুকে ঘষটে যাওয়া কিছুর মতো দেখতে পাওয়া যায়।
১৪২০
সম্প্রতি এই ধূমকেতুটিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার পড়ুয়া ইমরান সুলতান। তিনি জানিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারি থেকে ওই ধূমকেতুটির উপর নজর রেখেছেন তিনি।
১৫২০
ইমরানের দাবি, প্রস্তর যুগের পর সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসার সপ্তাহখানেক পর ওই ধূমকেতুটিকে দেখেছেন তিনি। এই পর্যবেক্ষণে উপগ্রহের মাধ্যমে আমেরিকা, ইউরোপ-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিমোট অবজ়ারভেটরির সাহায্য নিয়েছেন।
১৬২০
নিজেকে অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলে দাবি করা ইমরানের দাবি, ধূমকেতুর অ্যান্টি-টেল বা লেজের মতো অংশের বিপরীত অংশের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
১৭২০
মহাবিশ্বের সদাপরিবর্তনশীল পটভূমির উপর সৌরজগতে একটা ধূমকেতু যেন হুস করে বেরিয়ে চলে গেল— সি/২০২২ ই৩ (জ়েডটিএফ)-কে দেখে এমনই মনে হয়েছে ইমরানের।
১৮২০
ইমরান জানিয়েছেন, ধূমকেতুরি পিছনে দূরের ছায়াপথগুলি যেন জ্বলজ্বল করছিল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মহাবিশ্ব যে কত বিশাল, তা লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা আমাদের এই অতিথি বুঝিয়ে দিয়েছে।’’
১৯২০
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে ইমেল মারফত ইমরান বলেন, ‘‘সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশ থেকে এই ধূমকেতুর যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই যাত্রার পর হয়তো সৌরজগৎ থেকে বেরিয়েও যাবে সেটি। ফলে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করাটা অনন্য সাধারণ ঘটনা।’’
২০২০
ইমরানের কথায়, ‘‘অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে মহাবিশ্বের সৌন্দর্যে আমরা আকৃষ্ট হই। আর ধূমকেতুর যাত্রা, সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের মতো ক্ষণস্থায়ী ঘটনাগুলি বিরল ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়।’’