একেই দু’জনের মধ্যে পাঁচ দশকের ব্যবধান। তার উপর আবার ঠাকুমা-নাতির সম্পর্ক! ৫৫ বছরের বড় যে প্রেমিকার জন্য এক সময় দেশ ছেড়েছিলেন, সেই প্রেমিকার মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন মার্ট।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স কোনও বাধা নয়, তা একটি সংখ্যামাত্র। কিন্তু বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে থাকলে তা সমাজের ভ্রুকুটি এড়িয়ে যায় না। তবে সেই বাধাকে খুব সহজেই পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন মার্ট সোসন এবং এলফ্রাইড রিট। একেই দু’জনের মধ্যে পাঁচ দশকের ব্যবধান। তার উপর আবার ঠাকুমা-নাতির সম্পর্ক! ৫৫ বছরের বড় যে প্রেমিকার জন্য এক সময় দেশ ছেড়েছেন, সেই প্রেমিকার মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন মার্ট।
০২১৭
উত্তর ইউরোপের এস্টোনিয়ার বাসিন্দা ছিলেন এলফ্রাইড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রাণ বাঁচাতে স্বামী অ্যালফ্রেডের সঙ্গে ইউরোপ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাঙ্কস্টাউনে পালিয়ে যান এলফ্রাইড। মার্ট সম্পর্কে অ্যালফ্রেডের নাতি।
০৩১৭
অ্যালফ্রেডের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ছিলেন এলফ্রাইড। তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে মারা যান অ্যালফ্রেড। তার পর থেকে একাই থাকতেন এলফ্রাইড।
০৪১৭
এস্টোনিয়ার বাসিন্দা মার্ট ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ১৯৯৬ সালের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়া যান। এলফ্রাইড তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান মার্টকে। প্রথম সাক্ষাৎ নিয়ে মার্ট স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রথম দেখায় প্রেম হয়নি আমাদের। রাতারাতি তৈরি হয়নি আমাদের সম্পর্ক।’’
০৫১৭
পড়াশোনার পর আবার এস্টোনিয়া ফিরে যান মার্ট। পরে ব্যক্তিগত কারণে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হয় তাঁকে। সেই সময় এলফ্রাইডের বাড়িতে দেখা করতে যান তিনি। তখন দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হতে শুরু করে।
০৬১৭
মার্ট জানান, ২০০৭ সালে তিনি যখন এস্টোনিয়া ফিরছিলেন তখন তাঁর নিজের জীবন অপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল। এলফ্রাইড যে সেই শূন্যস্থান পূরণ করে ফেলেছেন, তা বুঝতে পেরেছিলেন তরুণ।
০৭১৭
এস্টোনিয়ায় ফিরে যাওয়ার পরও এলফ্রাইডের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় থাকে মার্টের। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এলফ্রাইডকে মনের কথা জানান তিনি। মার্ট যে এলফ্রাইডকে ভালবেসে ফেলেছেন সে কথা জানান তিনি। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৭ এবং এলফ্রাইডের বয়স ৯২।
০৮১৭
মার্ট বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে এলফ্রাইডের কোনও দিন ঠাকুমা-নাতির সম্পর্ক ছিল না। ওকে ঠাকুমা বলে ডাকিওনি কখনও। এলফ্রাইড এক জন আধুনিকমনস্কা নারী। আমরা দু’জনেই দু’জনকে ভালবাসতাম। আমায় যত্নে-আদরে রাখত ও।’’
০৯১৭
এস্টোনিয়ায় উকিলের পেশায় কাজ করছিলেন মার্ট। কিন্তু এলফ্রাইডের সঙ্গে থাকতে চান বলে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় পাকাপাকি ভাবে থাকবেন বলে ভিসার জন্য আবেদন করতে শুরু করেন তিনি।
১০১৭
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভিসার আবেদন খারিজ হয়ে যায় মার্টের। সমাধানের জন্য অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাপিলস ট্রাইবুনালের সম্মুখীন হন তিনি। ৫৫ বছরের বড় কোনও মহিলার সঙ্গে যে মার্ট সম্পর্কে জড়িয়েছেন, সে কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না ট্রাইবুনাল। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করা হয় মার্টকে।
১১১৭
মার্টের সঙ্গে এলফ্রাইডের যৌন সম্পর্ক রয়েছে কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় তরুণকে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কখনও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করিনি। একই বেডরুমে কোনও দিন একসঙ্গে থাকিনি আমরা। আমি ওর হাত ধরেছি, জড়িয়ে ধরেছি, চুমু খেয়ে আদর করেছি। কিন্তু যৌন সম্পর্ক স্থাপন করিনি। আমাদের সম্পর্কের বাঁধন তার ঊর্ধ্বে।’’
১২১৭
বয়সের ব্যবধান প্রসঙ্গে মার্ট বলেন ‘‘প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে অনেকের মাথাব্যথা থাকে। কিন্তু সেই সমস্যাটা বড় একমুখী। শুধুমাত্র প্রেমিকার চেয়ে তাঁর প্রেমিকের বয়স কম হলেই তা নিয়ে চর্চা হয়। কই, এর উল্টোটা হলে তো লোকে কিছু বলেন না! আমি এ সব কিছু মানি না।’’
১৩১৭
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন মার্ট এবং এলফ্রাইড। সেই সময় এলফ্রাইডের বয়স ৯৮ এবং মার্টের বয়স ৪৩। অ্যালঝাইমার্স রোগ ধরা পড়ে এলফ্রাইডের। শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
১৪১৭
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসকদের নির্দেশে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয় এলফ্রাইডকে। সেখানে প্রতি দিন এলফ্রাইডের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন মার্ট। কখনও উপহার হিসাবে প্রেমিকাকে দিতেন চকোলেট, কখনও বা এলফ্রাইডের পছন্দের বেরি।
১৫১৭
একসঙ্গে কনসার্টে যেতেন, অথবা কোনও কফি শপে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতেন মার্ট এবং এলফ্রাইড। এলফ্রাইডকে চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যেতেন মার্ট।
১৬১৭
এলফ্রাইড নাকি মাঝেমধ্যেই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ভয়ের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। মার্ট জানান, এলফ্রাইড এবং তিনি একই বাড়িতে থাকলেও ঘুমোনোর সময় আলাদা ঘরে থাকতেন। মজার ছলে তিনি জানিয়েছিলেন, এলফ্রাইডের নাক ডাকার শব্দে নাকি তাঁর অসুবিধা হত।
১৭১৭
স্থানীয় সময় অনুযায়ী শনিবার বিকেলে সিডনির হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এলফ্রাইড। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ১০৪ বছর। প্রেমিকার মৃত্যুতে ভেঙে প়ড়েছেন ৪৮ বছর বয়সি মার্ট। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকবেন, না কি তাঁকে এস্টোনিয়ায় ফিরে যেতে হবে, তা নিয়ে ট্রাইবুনালের তরফে মে মাসে নির্দেশ দেওয়া হবে।