কলকাতার ওপর আমার তৃতীয় বই বেরিয়েছে কিছু দিন আগে। অন্য কোনও শহর নিয়ে আমি এত কাজ করিনি। বার বার ফিরে এসেছি এখানকার মানুষের অদম্য জীবনীশক্তিকে উপভোগ করতে। এই যে অত্যাধুনিক সেকেন্ড হুগলি ব্রিজের তলা দিয়ে সনাতন নৌকার দাঁড় বেয়ে চলেছে সারে সারে মাঝি, এটাই কলকাতার ছবি। আবার সকাল সকাল মল্লিক ঘাটে, এক জন পালোয়ান শবাসন করছে, এক জন প্রাণপণ আর্চ করছে, আর এই ফোঁসফোঁস শরীরচর্চার পাশে, এক জন ভবঘুরে চাদর জড়িয়ে ঢুলছে, এক জন আনমনে মাথা চুলকোচ্ছে। আবার, একটা ফুটপাতে একটা পরিবার ঘুমোচ্ছে, ছোট্ট বোনকে ছোট্ট দিদি গালে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে কান্না থামাচ্ছে, আর তাদের মাথার পেছনে কী করে কে জানে দেওয়ালে আঁকা হয়ে আছে মাদার টেরেসার একটা ছবি, এই ম্যাজিকটাই কলকাতা।
ছবি তোলার ক্ষেত্রে এটা দারুণ আকর্ষণ। শহরটার স্পিরিটটাকে ধরতে চেয়েছি। ছবি তোলা ব্যাপারটাই তো তা-ই। এ তো শুধু একটা দৃশ্যের বিবরণ দেওয়া নয়। সেই দৃশ্যের মধ্যে থাকা স্পিরিটটাকে বের করে আনতে চাওয়া। কলকাতায় দেখেছি, অন্য লোকে যা নিয়ে চলতে গেলে মুষড়ে পড়বে, হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে, তাকে অনায়াসে বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াতে, দুর্দশার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে হো-হো করে অট্টহাসি হেসে উঠতে।
আর রয়েছে আদি ব্রিটিশ ব্যাপার-স্যাপার। অসাধারণ সব ইতিহাসের সাক্ষী থাকা বাড়ি, তার আশ্চর্য প্রাচীন ও অভিজাত স্থাপত্য, তার ডিটেল, প্রত্যেকটি দেওয়ালে সাহেবিয়ানা এবং তার মধ্যে বসবাসকারী আজকের কলোনিয়াল বাঙালিরা— অসামান্য সব বিষয়বস্তু, প্রেক্ষাপট। জমজমাট, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর।
অন্য শহরের মধ্যে মুম্বইতেও এর ছায়া দেখেছি, কিন্তু কলকাতা সবাইকে ছাপিয়ে গেছে কাছে টেনে নেওয়ার এক বিরল, উষ্ণ ইচ্ছাশক্তির জোরে। এই মানসিকতাটাই আসল ব্যাপার। তাই বারে বারে ফিরে এসেও আসাটা ফুরিয়ে যায় না আমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy