আইনস্টাইনের যুগান্তকারী সাধারণ আপেক্ষিকতা বাদের ঘোষণার শতবর্ষ। মাধ্যাকর্ষণের এই বৈপ্লবিক ব্যাখ্যা প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আমূল বদলে দিয়েছে। যেখানে সময়-কালের জালে সব ঘটনাই চলমান। যেখানে ভরের চলনে জালে অসংখ্য ভাঁজ তৈরি হয়। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ শুধু গাণিতিক দিক থেকেই সৌন্দর্যময় নয়, সব রকমের পরীক্ষায়ও উতরে গিয়েছে।
শুধু একটি ব্যাপারেই একটু খটকা রয়েছে। তা হল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ বলে কোন তড়িৎ-যুক্ত কণার পরিবর্তনশীল বেগের জন্য যে ভাবে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি হয় তাকেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বলে। আলো, এক্স-রে, রেডিও, - আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নানা কাজে লাগে। কিন্তু অভিকর্ষ তরঙ্গ সে ভাবে বোঝাই যায় না। কিন্তু আইনস্টাইনের তত্ত্ব বলছে মহাবিশ্ব জুড়ে এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে থাকবে। বাইনারি পালসারের কক্ষপথের ক্ষয় থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়াকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সেই গবেষণা নিয়ে ১৯৯৩-এ নোবেল পুরস্কারও মিলেছে। কিন্তু সরাসরি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ চিহ্নিত করা যায়নি। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ চিহ্নিত করা হার্জের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আবিষ্কারের মতোই মহান আবিষ্কার হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বড় কঠিন সেই কাজ। কারণ এই তরঙ্গ বড় সূক্ষ্ম। কতটা সূক্ষ্ম? জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে এই তরঙ্গের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে গেলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের যে ব্যাস তার থেকেও এক হাজারগুণ কম পার্থক্য মাপতে হবে।
তা কি সম্ভব? সম্ভব। এর জন্য দরকার প্রায় চার কিলোমিটারের দণ্ড, যা অত্যন্ত সুস্থির এবং ২০০ ডব্লিউ মিচেলসন ইন্টারফেরোমিটার্স, যা প্রায় বায়ুশূন্য অবস্থায় থাকবে। আর একে রাখতে হবে একের বারে নির্জন স্থানে। খুশির কথা হল চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই আমেরিকায় দু’টি অ্যাডভান্সড লেজার ইন্টারফেরোমেট্রিক গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ অবজার্ভেটরি (লাইগো) কাজ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে এই তরঙ্গ চিহ্নিত করার জন্য নতুন উদ্যম নিয়ে বিজ্ঞানীরা নেমে পড়েছেন।
ভারতও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ভারতেও বসছে লাইগো। ত্রয়োদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই কাজের জন্য অনুমোদনও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে ২০২২ সালের মধ্যেই ভারতে লাইগো কাজ শুরু করবে। এই পরিকল্পনা সফল হলে মহাবিশ্বের নতুন জানালা আমাদের সামনে খুলে যাবে। অনেকটা ৪০০ বছর আগে গ্যালিলিও-এর দূরবিক্ষণযন্ত্র আবিষ্কারের মতো। আমেরিকার তুলনায় ভারতের লাইগো অনেক সূক্ষ্ম পরিমাপ করতে সক্ষম হবে। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ চিহ্নিত করতে এবং বেশ কিছু সাহায্যকারী সংস্থার সাহায্য এই সংক্রান্ত আরও পরীক্ষা চালাতে সুবিধা হবে। ভারতে লাইগো বসাতে তৈরি হয়েছে কনসর্টিয়াম ‘ইন্ডিগো’। ইনস্টিস্টিউট ফর প্লাজমা রিসার্চ, ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এবং রাজা রামান্না সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড টেকনোলজি— এই তিনটি বিজ্ঞান সংস্থা এই কাজে প্রধানত অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যেই প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্রের অপেক্ষা। তবে বিজ্ঞানীরা বসে নেই। এর মধ্যেই ‘ইন্ডিগো’ ৫০ জন ভারতীয় বিজ্ঞানী আমেরিকায় লাইগো-র তথ্য বিশ্লেষণের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy