ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক শর্ত হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স, প্রফেশন ট্যাক্স, শপ অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্ট এবং ভ্যাট বা সেল্স ট্যাক্সের খুঁটিনাটি নিয়ে আগেই আলোচনা করেছি আমরা। কিন্তু আপনি শুধুমাত্র দেশীয় সীমানার চৌহদ্দিতে ব্যবসা করতে চাইছেন, না কি সেটা ডিঙিয়ে বাইরে বেরোনোই আপনার লক্ষ্য, এই বিষয়টা কিন্তু প্রাথমিক শর্তের তালিকায় কিছুটা হলেও পার্থক্য তৈরি করে দেয়। আর তখনই প্রশ্ন ওঠে আমি যদি আমদানি-রফতানির ব্যবসা শুরু করতে চাই, তা হলে ট্রেড লাইসেন্স, প্রফেশন ট্যাক্স-সহ অন্যান্য শর্ত পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আর কী করতে হবে? যার জবাব দিতেই আজকের এই আলোচনায় বসা।
ছাড়পত্র
এটা নিশ্চয়ই জানেন, কোনও ব্যবসা শুরু করার প্রথম ধাপই হল সরকারের কাছ থেকে তার জন্য ছাড়পত্র আদায় করা। ব্যবসায় পা রাখার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করার সময়ে এ কথা বারে বারেই বলেছি। একই রকম ভাবে আপনি যদি পণ্য বা পরিষেবার আমদানি-রফতানি শুরু করতে চান, তা হলেও প্রথমেই উঠে আসে লাইসেন্স বা ছাড়পত্রের শর্তটি। আর আমদানি-রফতানির ব্যবসার ক্ষেত্রে এই ছাড়পত্র হল এক্সপোর্টার ইম্পোর্টার কোড (আইইসি)।
তার মানে, ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমে যেমন ট্রেড লাইসেন্স, প্রফেশন ট্যাক্সের রেজিস্ট্রেশন বা এনরোলমেন্ট, শপ অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্ট সার্টিফিকেট ইত্যাদি নিতে হয়, সেগুলি আপনাকে নিতেই হচ্ছে। এর উপর বাড়তি ওই আইইসি নম্বর। বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি ২০০৯-২০১৪ অনুযায়ী, ভারতে অবস্থিত কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শুধু আমদানি বা শুধু রফতানি কিংবা দু’টোই করতে চাইলে, প্রথমে ওই কোড নম্বর পেতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। অর্থাত্ আইইসি নম্বর ছাড়া আপনি কোনও ভাবেই দেশের বাইরে পণ্য বা পরিষেবা লেনদেন করতে পারবেন না। এই কোড নম্বর দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট আমদানি বা রফতানিকারীর (সংস্থা বা ব্যক্তি) প্যান নম্বরের উপর ভিত্তি করে। এবং সেটা ব্যবসার সমস্ত শাখা বা কারখানার জন্যই প্রযোজ্য।
তবে কতগুলি পরিষেবা বা প্রযুক্তি আমদানি-রফতানি করার জন্য ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতি লাগে। এগুলিকে আইনের পরিভাষায় বলা হয়, ‘স্পেসিফায়েড সার্ভিসেস’ বা ‘স্পেসিফায়েড টেকনোলজিস’। কারণ জাতীয় সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার স্বার্থে ওই পরিষেবা ও প্রযুক্তিগুলির আমদানি-রফতানি বা লেনদেনকে কিছুটা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে, পরমাণু প্রযুক্তি, অস্ত্র ইত্যাদি।
কে দেয়?
আগেই বললাম, আমদানি বা রফতানিকারীকে আইইসি নম্বর নিতে হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে এটি দেয় অফিস অব দ্য ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি), গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
পশ্চিমবঙ্গে এই নম্বর নিতে হবে যেখান থেকে, তার ঠিকানা অফিস অব দ্য জোনাল জয়েন্ট ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (জেডজেডিজিএফটি), ৪ এসপ্ল্যানেড ইস্ট, কলকাতা- ৭০০০৬৯।
অবশ্য শুধুমাত্র কলকাতা নয়, পূর্ব ভারতের যে-অঞ্চলেই আপনি আমদানি-রফতানির ব্যবসা শুরু করুন না কেন, তার জন্য আইইসি কোড নম্বর নিতে পারবেন এখান থেকেই।
পাবেন কী ভাবে?
এটি পাওয়ার জন্য আয়াত নির্যাত ফর্ম নম্বর ২এ (এএনএফ ২এ)-তে আবেদন করতে হয়। যে-অঞ্চলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাটির রেজিস্টার্ড অফিস অবস্থিত, সেটি ডিজিএফটি-র যে আঞ্চলিক দফতরের আওতায় পড়ছে (যেমন পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ), সেখান থেকে ওই আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। আপনি হাতে হাতে ফর্ম তুলতে এবং জমা দিতে পারেন। আবার চাইলে তা অনলাইনেও করার সুবিধা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে www.dgftkolkata.wb.nic.in ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।
ডিজিএফটি-র আঞ্চলিক দফতরে গিয়ে ফর্ম জমা দিলে, যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে তবে সাধারণত দু’দিনের মধ্যে আইইসি নম্বর হাতে চলে আসে। আর অনলাইন মারফত জমা করলে নম্বর পাওয়া যেতে পারে মাত্র এক দিনের মধ্যেই।
তবে ফর্মে কোনও বিষয় ভুল থাকলে, সেটা ঠিকঠাক করার জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়ে দেয় ডিজিএফটি।
সঙ্গে যা লাগে
• নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদনপত্র। দুই কপি।
• প্যান কার্ডের কপি। নিজের সই করা।
• ট্রেড লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্টের কপি। সই করা।
• বাসস্থান এবং পরিচয়ের সরকারি প্রমাণপত্র। সই করা।
• পাসপোর্ট ছবি। দু’কপি।
• জয়েন্ট ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড-ইস্টার্ন রিজিয়ন-এর নামে ২৫০ টাকার ডিমান্ড ড্রাফট বা পে অর্ডার।
• সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রমাণ হিসেবে নির্দিষ্ট ফর্মে ছবি-সহ ব্যাঙ্কের তরফে সই করা সার্টিফিকেট।
• কোম্পানির জন্য মেমোর্যান্ডাম অব আর্টিকল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন।
• আরওসি ফর্ম নম্বর ১৮ ও ৩২। সঙ্গে মানি রিসিট।
• আমদানি বা রফতানিকারী কোনও পার্টনারশিপ ফার্ম হলে পার্টনারশিপের দলিল।
• নতুন আইইসি দেওয়ার আবেদন করে সংস্থার লেটারহেড সম্বলিত প্যাডের পাতায় লিখিত চিঠি।
• নিজের নাম-ঠিকানা লেখা এবং ডাক টিকিট লাগানো (দূরত্ব অনুযায়ী ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে) খাম।
এর সব কিছু ফাইলের মধ্যে যত্ন সহকারে সাজান। এবং তার পর তা জমা দিন। তবেই প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ।
লেখক আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞ।
টুকরো খবর
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের অ্যাপ
গ্রাহকদের উন্নততর পরিষেবা দিতে দু’টি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) চালু করল আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের দাবি, এর মধ্যে ‘আই-লোনস’ অ্যাপটির সাহায্যে গ্রাহকেরা গৃহ, গাড়ি ইত্যাদি ঋণের তথ্য (যেমন, ঋণের বিবরণ, মাসিক কিস্তির অঙ্ক ইত্যাদি) মোবাইলেই দেখতে পাবেন। পাওয়া যাবে আয়কর সার্টিফিকেটও। আর ‘আই-ট্র্যাক’ অ্যাপটির সাহায্যে জানা যাবে ব্যাঙ্ক কী চিঠি বা স্টেটমেন্ট পাঠিয়েছে, তা কত দূর পৌঁছেছে ইত্যাদি।
তীর্থযাত্রীদের জন্য বিশেষ কার্ড
হজ এবং উমরাহ তীর্থযাত্রীদের জন্য বিশেষ ‘ফোরেক্স প্লাস কার্ড’ চালু করল এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। দেশে তাদের যে-কোনও শাখায় উপযুক্ত কাগজপত্র নিয়ে আবেদন জানালেই তা মিলবে। ব্যাঙ্কের দাবি, কার্ড হাতে পাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যেই তা চালু হয়ে যাবে। তা ব্যবহার করে নিরাপদ ভাবে কেনাকাটা করা যাবে। এটিএম থেকে তোলা যাবে টাকাও। ব্যাঙ্কের দাবি, এর ফলে সৌদি মুদ্রা রিয়ালে আর মোটা টাকা নিয়ে যেতে হবে না এই তীর্থযাত্রীদের। সুবিধার জন্য থাকবে ‘ব্যাক-আপ’ কার্ডও। কোনও কারণে মূল কার্ডটি হারিয়ে গেলে, তখন তা ব্যবহার করা যাবে।
টাটা-এআইজির নতুন স্বাস্থ্যবিমা
তিনটি নতুন স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প বাজারে আনল টাটা-এআইজি জেনারেল ইনশিওরেন্স। এর মধ্যে মেডি-প্লাস হল বিশেষ টপ-আপ প্রকল্প। প্রাথমিক বিমার কভারেজ যথেষ্ট না-হলে যা কাজে আসবে। মেডি-সিনিয়র প্রকল্পটি আনা হয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের কথা মাথায় রেখে। তা কিনতে বয়স হতে হবে অন্তত ৬১ বছর। আর মেডি-রক্ষা নামে প্রকল্পটি আনা হয়েছে মূলত ছোট শহরে বসবাসকারীদের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy