প্রতীকী ছবি
সবাই বলে শেয়ারে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে করুন। কেন করবেন? একই সঙ্গে সবাই বলেন জীবনের শুরুতেই বিনিয়োগে মন দিন। কেন? কেনই বা শেয়ারে বিনিয়োগ করতে মিউচুয়াল ফান্ডকে সঙ্গী করার কথা বলেন সবাই? জানেন কি? জানলে তো খুবই ভাল। কিন্তু ১০ জনকে এই প্রশ্ন করলে কত জন এর যৌক্তিক জবাব দিতে পারবেন তা নিয়েও কিন্তু সংশয় প্রকাশ করে থাকেন উপদেষ্টারা। তাঁদের সংশয় কিন্তু শুধু কথার কথা নয়। এই সংশয় কিন্তু উঠে এসেছে তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তি থাকে।
যেমন ধরুন অনেকেই মনে করেন এক বছরের জন্য করলে করের সুবিধা পাওয়া যায়। তাই এক বছর ধরেই চলা উচিত? কিন্তু বাজার পড়ে গেলে? তাতেও লাভের সুযোগ পেতে পারেন ক্ষতির কারণে কিন্তু আপনার কি লাভ হবে তাতে? আবার অনেকেই মনে করেন তিন বছরের জন্য সিপ করি ইএলএসএস-এ। তিন বছর বাদে সবটা তুলে নেব কর ছাড়ের সুযোগ নিয়ে। কিন্তু তাতে কি আপনি কর ছাড়ের সুযোগ পাবেন নাকি প্রথম বছরের বিনিয়োগটাই তুলতে পারবেন তিন বছর বাদে?
আসলে আমরা যখন বিনিয়োগ করি তখন কিন্তু আমরা বিনিয়োগের যুক্তির পুরো কথাটা শুনি না। যেমন ধরুন দীর্ঘ মেয়াদের কথা। শেয়ার বাজারে সাধারণ ভাবে ছোট বিনিয়োগকারীরা লগ্নি করেন বাজার চড়তে শুরু করলে। যখন বাজার চড়ছে এই তথ্যটা আপনার কাছে আসছে ততক্ষণে কিন্তু আপনি বিনিয়োগের আসল সময়টা হারিয়ে বসে আছেন। আপনি এমন সময়ে বাজারে ঢুকছেন যখন বাজার আর বেশি ওঠার জায়গায় নেই, এবং তার নিচের দিকে নামার, বা ক্যারেকশনের সময় এসে গিয়েছে।
আসলে শেয়ার বাজারের মজাটাই হল এই ওঠা নামা। মাথায় রাখুন লক্ষ্মীর মতোই লগ্নির বাজারও চঞ্চলা। তাই মিউচুয়াল ফান্ডে সিপ করার উপদেশ দিয়ে থাকেন। কারণ, দীর্ঘকাল ধরে ধৈর্য ধরে লগ্নি করলে দীর্ঘমেয়াদে উত্থান পতনের সুবিধা নিয়ে আপনার লাভের ঘর ভরতে থাকে। আরও ভাল হয় যদি ডিভিডেন্ড ঘরে না তুলে তাও আবার লগ্নি করেন।
কিন্তু কতদিনের জন্য। যতদিন হয় তত ভাল। কিন্তু পাঁচ থেকে সাত বছরের কমে নয়। কারণ ইতিহাস বলছে ভারতের শেয়ার বাজারে পাঁচ থেকে সাত বছরে যে উত্থান পতন হয় তার থেকে লাভ হয় বিনিয়োগকারীর। আর আপনি যত উত্থান পতনের সঙ্গী হয়ে বাজারে বিনিয়োগ ধরে রাখবেন, আপনার লাভ ততটাই। তাই যত কম বয়সে লগ্নি শুরু করবেন তত বেশি দিন আপনি আপনি বাজারের সুযোগ পেয়ে বেশি লাভ ঘরে তুলতে পারবেন।
আবার রয়েছে ঝুঁকির অঙ্ক। আপনার কাছে যেটা ঝুঁকির তা অন্যের কাছে ঝুঁকির নাও হতে পারে। ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে আপনার আয় এবং দায়ের উপর। আবার আপনার সঞ্চয়ের লক্ষ্য অন্যের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। উদাহরণ, আপনার নিজের বাড়ি নেই, কিন্তু আপনারই বয়েসে অন্য আর একজনকে বাড়ির কথা ভাবতে হচ্ছে না। কারণ, তাঁর বাবা তাঁর জন্য বাড়ি করে দিয়েছেন। তাই আপনার দায়ের চাপ অন্যের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। আর এর উপরেই তো আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করছে!
এই বার আপনি একজন উপদেষ্টার কাছে গেলেন। তিনি আপনার ঝুঁকি ও লক্ষ্যের হিসাব করে আপনাকে বিনিয়োগ করার পথ বাতলালেন। কিন্তু আপনি দেখলেন সে পথে হেঁটে আপনার অভীষ্ট সিদ্ধ হল না। আপনি ভেবে নিলেন যে সেই উপদেষ্টা আপনাকে ভুল পথে পরিচালনা করেছেন। আপনি কিন্তু ভেবেও দেখলেন না যে আপনি তাঁর প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পেরেছেন কিনা অথবা তাঁর উপদেশ নিজে বুঝে উঠেছিলেন কিনা।
আর এখানেই আসে নিজের উপর বিনিয়োগের প্রসঙ্গ। আপনাকে বিনিয়োগের ব্যাপারে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে তোলা জরুরি। কারণ ঋণপত্রের বাজারের সঙ্গে শেয়ার বাজারের পার্থক্য কী, স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ কতটা করবেন বা কেন, ইত্যাদী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে নিজেকেও কিন্তু জেনে নিতে হবে এদের মধ্যে প্রভেদ। উপদেষ্টাকে আপনার চাহিদা তখনই আপনি পরিষ্কার করে বোঝাতে পারবেন যখন আপনার নিজের বাজার সম্পর্কে একটা ধারণা থাকবে। জানবেন বিভিন্ন বিনিয়োগের পথের মধ্যে ফারাক। তাই লগ্নি শুরু করুন এখনই। আর তারই সঙ্গে শুরু করুন লগ্নির বাজার সম্বন্ধে জানার জন্যে নিজের উপর বিনিয়োগ। জেনে নিন কী করছেন এবং কেন করছেন।
বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy