Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Presents
Personal Finance 2023

শুধুই মোটা টাকার প্রিমিয়াম নয়, বরং উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে সঞ্চয় হোক কৌশলে

একদিকে দায়, অন্যদিকে কর্মজীবনের একটা বড় অংশে সঞ্চয় করার সুযোগের অভার। তখন তো সুযোগ বলতে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প, ব্যাঙ্ক, বা জীবন বিমা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:১৩
Share: Save:

মধ্য ষাটে এসে অজিত বাবু বুঝতে পারছেন, কী ভুলটাই না করেছেন!

চাকরি জীবনটা যে খুব সামান্য ছিল তা নয়। উচ্চপদস্থই বলা হত তাঁকে। অফিস থেকে গাড়ি, বাড়িতে ঘরে ঘরে এসি। একমাত্র সন্তান শুধু শহরের নামী স্কুলেই পড়েছে তা নয়, অন্য আর চারটে শিক্ষিত পরিবারের সন্তান যা করে, অজিতবাবুর ছেলেও তাই করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে ফেলোশিপ নিয়ে। দূরে দাঁড়িয়ে এ সব দেখে প্রতিবেশীরা বলেন, “ওনার আর কী? বড় চাকরি করেছেন। ছেলে প্রতিষ্ঠিত। এখনও যে কেন চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেন, কে জানে!”

এ সব শুনে রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারানো অজিতবাবু হাসেন। তিনি যে কাজ করতেন, তাতে বাঙালি ঘরের ছেলের নামডাক হয়। একটু ঠাটবাটেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু যা আয় তিনি করতেন, তাতেও হয়তো সঞ্চয়টা যথেষ্ট করা যেত। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়েই। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের অঙ্কটাও ঠিক করে করে উঠতেপারেননি।

এই বয়সের বেশির ভাগ মানুষেরই যা অতীত, অজিতবাবুর ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রমী নয়। বাবা ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী। মা ঘর সামলাতেন। কিন্তু অজিতবাবুর বাবাকে নিজের মা ছাড়াও ভাবতে হয়েছিল ভাইপো-ভাইঝিদের পড়াশোনা-সহ আরও অনেক কিছু নিয়ে। কিন্তু বাঁচোয়া ছিল পেনশন। অজিতবাবুর আবার তা-ও নেই।

বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে সাত জনের সংসার। বাড়ি করতে হয়েছে যাতে সবাই একসঙ্গে থাকতে পারেন। ফলে খরচের চাপটা অনন্ত। আজ অজিতবাবুর বয়সি, বেসরকারি সংস্থায় কাজ করা অন্য অনেকেরই আর্থিক চরিত্রটা প্রায় একই রকম। এক দিকে দায়, অন্য দিকে কর্মজীবনের একটা বড় অংশেই সঞ্চয় জন্য মতো সুযোগের অভাব। তখন তো সুযোগ বলতে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প, ব্যাঙ্ক, বা জীবন বিমা। তা-ও শেষ দিকে কিছুটা সামলে অবসরের সময়ে ফুলের মালা, পার্টি পেরিয়ে ৭৫ লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে যখন বাড়ি ফিরলেন টনকটা তখনই নড়ল।বছরে ৫০ হাজার টাকার উপরে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম, ওষুধের খরচ, মায়ের চিকিৎসার খরচ, দু-বেলা আয়া। তার উপরে গণপরিবহণে যাতায়াত করার অভ্যাস হারিয়েছেন অনেক দিনই। তাই গাড়ি, বাড়ির খরচ সামলে মাস গেলে তাঁর গড় খরচ ১ লক্ষ টাকার উপর! যা হাতে পেয়েছেন তার উপর ১০ শতাংশ আয় হলেও তো সামলাতে পারবেন বা!

অজিতবাবু ভুলটা করেছিলেন সঞ্চয়ের হিসাবটা করতেই। কর্মজীবনে আগে খরচ করেছেন। তার পরে যা বেঁচেছে, তাই সঞ্চয় করেছেন। একগাদা টাকা প্রিমিয়াম দিয়েছেন জীবন বিমায়। কর বাঁচাতে এবং সঞ্চয় করছেন ভেবে। উপদেষ্টার কাছে যাওয়া উচিত ছিল সঞ্চয়ের কৌশল ঠিক করতে। কিন্তু করেননি। উপদেষ্টার কাছে গেলেন বটে, কিন্তু অবসরের পরে। তাতে কিছুটা উপকার হল। কিন্তু ফিরলেন বকা খেয়েই। কারণ, শুধু সঞ্চয়ের উপর তো বাঁচা যায় না। বিশেষত তার বহরটা যদি এতটাই কম হয়।

বয়সের সঙ্গে নানা বিপদ সঙ্গী হয়। তখন সঞ্চয় ভাঙতে হয়। আর তার সঙ্গে কমতে থাকে আয়ের সূত্র। যা আসলে ওই সঞ্চয়টুকুই। তাই অজিতবাবুকে অবসরের পরেও কাজ করেই যেতে হচ্ছে দুটো পয়সার জন্যই। অজিতবাবুর বড় ভুল ছিল এটা ভেবে নেওয়া যে, সুদের হার চিরকাল চড়াই থাকবে। সুদের হার যে কমতে পারে তা তিনিভাবেনইনি।আরও বড় ভুল ছিল, উপদেষ্টার পরামর্শ না নিয়ে একগাদা টাকার প্রিমিয়াম দিয়ে এনডাউমেন্ট জাতীয় বিমা কেনা। তার থেকে শুধু বিমা কিনে সঞ্চয়ের জন্য বাকিটা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করলেও তাঁর আয় অনেকটাই বাড়ত।

এখন অজিতবাবু বুঝতে পারছেন যে, শেষ জীবনে হয়তো প্রবাসী সন্তানের পাঠানো সাহায্যের উপরই নির্ভর করতে হবে। তাই কমবয়সিদের অজিতবাবুর পরামর্শ- প্রথম দিনের মাইনে হাতে পেয়েই অবসরের জন্য সঞ্চয় করা উচিত। বয়স কম, তাই শেয়ারের উপর নির্ভর করা সঞ্চয়ের জন্য। বিমাকে সঞ্চয়ের পথ হিসাবে না দেখা। বড় খরচের লক্ষ্য ঠিক করা। যেমন বাড়ি, গাড়ি, বা বেড়াতে যাওয়া। আগে ভবিষ্যতের কথা ভাবা, তারপর দৈনন্দিন খরচের হিসাবে যাওয়া। সর্বোপরি আয়ের প্রথম দিনেই সঞ্চয় উপদেষ্টাকে গুরু মেনে এগিয়ে যাওয়া। অজিতবাবুর জীবনের একটাই উদ্দেশ্য। ছোটদের কাছে নিজেকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা। জীবনে কী করা উচিত নয়, তিনি যে তারই জলজান্ত উদাহরণ!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy