• পাঁচ কাঠা জমির উপর পৈতৃক বাড়ি আছে। জমিটি কোনও প্রোমোটারকে দিয়ে ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার’-এ যৌথ প্রয়াসে বাড়ি বানাতে চাই। আমার প্রশ্ন,
১) প্রোমোটারকে কি জমির উপর নির্মিত অংশ পুরোটা বিক্রির অধিকার দিতে হবে?
২) প্রোমোটারের ৬০% আর আমার ৪০%— এই হিসেবে চুক্তি হলে, নির্মিত অংশের মধ্যে আমার ৪০% বিক্রির মূল্য কী ভাবে ঠিক হবে?
৩) প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি হলে আমি কি কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব?
৪) সঠিক সময়ে বা কোনও কারণে নির্মাণ সম্পূর্ণ না-হলে আইনত ওই সম্পত্তি আমি কী ভাবে ফেরত পাব?
গৌতম দে, কোন্নগর হুগলি
অনেকেই ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার’ বা প্রোমোটার/ডেভেলপারের সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে বাড়ি বানাচ্ছেন। কোথাও ৫০:৫০ চুক্তিতে, আবার কোথাও বা ৬০:৪০ চুক্তিতে। তবে বাড়ির কাজ প্রোমোটার বা ডেভেলপারের হাতে ছাড়ার আগে কী শর্তে বাড়ি বা জমির মালিক হিসাবে আপনি চুক্তিতে আবদ্ধ হবেন, বার বার ভেবে নিন। এক মাত্র তার পরই চুক্তি করুন।
এ জন্য প্রোমোটারের সঙ্গে কথা বলে একটি ‘চুক্তিপত্র’ তৈরি করতে হবে। সেখানে যে যে-শর্তে আপনি চুক্তি করতে চাইছেন, সেগুলি পরিষ্কার ভাবে লিখবেন। কোনও এক পক্ষ চুক্তিভঙ্গ করলে কী আইনি পদক্ষেপ অপর পক্ষ নিতে পারেন, সেটাও পরিষ্কার ভাবে লেখা থাকা দরকার। এ বার আসি আপনার প্রশ্নের বিষয়ে—
১) প্রোমোটারের সঙ্গে যে-চুক্তি করছেন সেখানে দেখবেন পুরো জমিটা বা ওই জমির উপর নির্মিত বাড়িটিতে যে-ক’টি ফ্ল্যাট আছে, তা দুটো অংশে ভাগ করা—একটা অংশ প্রোমোটারের অধীন আর একটা অংশ আপনার অধিকারে। আইনের ভাষায় ‘ওনার্স অ্যালোকেশন’ ও ‘ডেভেলপার্স অ্যালোকেশন’। ধরা যাক, একটি অ্যাপার্টমেন্টে বারোটি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। তার আটটি ডেভেলপাররা পাবেন। বাকি ৪টি জমির পূর্বতন মালিকরা। ডেভেলপাররা যে-আটটি ফ্ল্যাট পাচ্ছেন তাতে তাদের বিক্রির অধিকার থাকছে। আর পূর্বতন মালিকরা যে ৪টি ফ্ল্যাট পাচ্ছেন তাতে থাকার অধিকার থাকছে মালিকদের। বিক্রির অধিকারও তাদেরই।
২) ৪০% হিসাবে আপনি ‘ওনার্স অ্যালোকেশন’ বা মালিকের প্রাপ্য অংশে যে-ক’টি ফ্ল্যাট পাচ্ছেন, সেগুলি বিক্রির অধিকার আপনার। তা আপনি ইচ্ছে মতো দামে বিক্রি করতে পারেন।
কিন্তু ডেভেলপার বা প্রোমোটাররা যে-ফ্ল্যাটগুলির মালিকানা পাচ্ছেন, সেগুলি বিক্রির সময়ে আপনার অর্থাৎ জমির মালিকের স্বাক্ষর প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে প্রোমোটার বা ডেভেলপাররা আপনার কাছ থেকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র মাধ্যমে ফ্ল্যাটগুলির স্বত্ব নিয়েছেন কি না। আপনি যদি রেজিস্টার্ড পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে প্রোমোটার/ডেভেলপারকে তাঁর অংশ বিক্রির অধিকার দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁরা যখন তাঁদের অংশের ফ্ল্যাট বিক্রি করবেন, তখন আপনার স্বাক্ষর আর সেখানে প্রয়োজন হবে না।
৩) যে-কথা আগেই বলেছি, প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে কী কী শর্তে রাজি হচ্ছেন, সেগুলি ভাল করে বুঝে নিন। অনেকেই ‘আনরেজিস্টার্ড’ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু চুক্তিপত্র যদি রেজিস্টার্ড হয়, তা হলে আইনি সাহায্য পেতে সুবিধা হয়। আবার অনেকে তাড়াহুড়ো করে ভাল ভাবে চুক্তিপত্রটি না-পড়েই সই করেন। আমি বলব, প্রোমোটারের চাপে তাড়াহুড়ো না-করে ভাল ভাবে বুঝে তবেই চুক্তিপত্রে সই করুন।
৪) নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট কাজ শেষ না-হলে বা আপনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার অংশের দখল (পজেশন) না-পেলে নিশ্চয়ই প্রোমোটারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। তবে এই শর্তটিও যেন চুক্তিপত্রে থাকে। সে জন্যই বলছি, ভাল করে বুঝে নিয়ে তবেই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন।
আইনি পরামর্শ: জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy