প্রতি ইজাকুলেশনে আনুমানিক ২ থেকে ৮ মিলিলিটার বা মোটামুটি আধ চামচের মতো সিমেন নির্গত হয়। কতটা সিমেন নির্গত হচ্ছে তার ওপরে কোনও মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বা ফার্টিলিটি নির্ভর করে না। সেই সিমেনে কত সংখ্যক স্পার্ম আছে সেটাই বিবেচ্য।
টেস্টিসের ওপরে বর্ধিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী চাপ যে স্পার্মের সংখ্যা ও গুণমান কমায় তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
ট্রাক বা ট্যাক্সি ড্রাইভারের মতো যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন কিংবা সারাক্ষণ কোলের ওপর ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তাঁদের ওপর করা পরীক্ষায় এই ব্যাপারে জোড়ালো সমর্থন মিলেছে।
স্পার্মের যথার্থ কার্যকারিতার জন্য টেস্টিসের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কয়েক ডিগ্রী কম থাকা বাঞ্ছনীয়। সে কারণেই স্ক্রোটাম গরমকালে বেশি ঝুলে শরীরের বাইরের দিকে এবং শীতকালে সঙ্কুচিত হয়ে শরীরের সঙ্গে সেঁটে থাকে। একটি স্থিতিশীল বা স্টেডি তাপমাত্রা রক্ষা করাই এর উদ্দেশ্য। আটোসাটো অন্তর্বাস দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে স্ক্রোটাম অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই অন্তর্বাস যত ঢিলেঢালা ও হালকা হবে তত ভাল। একই কারণে আটোসাটো জিনসও এড়িয়ে চলুন।
গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণে স্পার্ম মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। একটি নারীর ডিম্বানু ও একটি পুরুষের শুক্রাণু উভয়েই ২৩ টি ক্রোমোজোম বহন করে।
এই ক্রোমোজোমে জিনের মিশ্রণ খুব ভালভাবে ছড়ানো থাকে। তাই নিষিক্ত বা ফার্টিলাইজড ডিম্বানু যখন ভ্রুণ বা এমব্রায়োতে পরিণত হয়, তখন সেখানে বাবা ও মায়ের দিক থেকে আসা ২৩ টি করে ক্রোমোজোম মিলে গিয়ে মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম হয়ে যায়। ৪৫ ও ৪৬ নং (২৩ তম জোড়া) ক্রোমোজোমটিকে যৌন বা সেক্স ক্রোমোজোম বলে। এরা শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে। মায়ের ডিম্বানু সর্বদা মেয়েদের ক্রোমোজোম (যাকে X বলে উল্লেখ করা হয়) বহন করে। বাবার ক্রোমোজোম অবশ্য মেয়েদের ক্রোমোজোম X, অথবা ছেলেদের ক্রোমোজোম (Y নামে চিহ্নিত) দুটোই বহন করতে পারে। যখন একটি এগ ফার্টিলাইজড হয় তখন ভ্রুণে ২৩ তম জোড়া হিসেবে হয় XX অথবা YY ক্রোমোজোম থাকে। প্রথমটি মেয়ে এবং দ্বিতীয়টি ছেলে হয়ে জন্ম নেয়।
জীবনযাপনের ধরন বা লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর পুরুষ ফার্টিলিটির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই প্রভাব একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। যেমন, প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করেন এবং খুব খারাপ খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত কিছু মানুষের শুক্রাণু সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ এই পরিমাণ সৌভাগ্যবান নন বলে শুক্রাণুর পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়াতে তাদের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ধরন পাল্টানোর দরকার।
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালকোহল, সিগারেট, কোকেন এবং মারিজুয়ানা প্রত্যেকেই শুক্রাণুর নানা ক্ষতি করে। মনে রাখবেন, বেশ কয়েক রাত ধরে খুব বেশি মদ্যপান, ধূমপান অথবা ড্রাগ সেবন করলে পরবর্তী ৩ মাস ধরে শুক্রাণুর ক্ষতি হওয়া চলতে থাকে।
শুক্রাণুর পরীক্ষার প্রয়োজনে সাধারণত প্রথম পরীক্ষাটির ৩ মাস পরে, দ্বিতীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আশা করা যেতে পারে এই সময়ের মধ্যে পুরুষটির শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ভাল হয়ে যাবে এবং সুপারিশ মতো স্বাস্থ্যকর জীবনের উদ্দেশ্য মানুষটি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করে দেবেন। দুটি নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের তুলনা করে চিকিৎসক পুরুষটির ফার্টিলিটির ব্যাপারে ধারণা করতে পারেন।
আপনার এটাও জেনে রাখা উচিত যে, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা শুধু শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা ও মোর্টিলিটির ক্ষতি করে না, মদ্যপান, ধূমপান কিংবা ড্রাগ সেবন স্পার্মের মাথায় থাকা বংশগত উপাদানেরও ক্ষতি করে। সাধারণ শুক্রাণু পরীক্ষায় এই ক্ষতি ধরা পড়ে না, তার জন্য বিশেষ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
একদফা ফ্লু অথবা কোনও ভাইরাস সংক্রমণে শুক্রাণু বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রভাবিত হয়। একটি শুক্রাণু আনুমানিক ১০০ দিনে সম্পূর্ণ পরিণত হয়। স্বভাবতই অসুস্থ থাকার সময় কোনও মানুষ কম উর্বর থাকেন। তাঁর শুক্রাণু পরীক্ষার প্রয়োজন হলে সুস্থ হওয়ার ৩ মাস পরে করা দরকার। আসলে শুক্রাণুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে এই সময় দেওয়া দরকার।
দেখা গেছে যে, ওভ্যুলেশনের দিনে বা তার ঠিক আগের দিন মিলিত হওয়ার চাইতে, ঘন ঘন যৌনমিলন ঘটলে গর্ভসঞ্চার বা কনসেপশনের সম্বাবনা বেশি।
এই প্রসঙ্গে জানাই, ওভ্যুলেশন ঠিক কবে হবে, সেটা নির্ধারণ করা যেমন কঠিন কাজ, তেমনি নিয়মিত মিলিত হলে (প্রতি এক বা দুই দিন অন্তর) সিমেনের মধ্যে মৃত বা অচল স্পার্ম কম থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এক্ষেত্রে নিয়মিত নতুন স্বাস্থ্যকর স্পার্মের দ্বারা ফুরিয়ে যাওয়া স্পার্মের মজুত পূরণ করা হয়। তাই এদের ডিম্বানু নিষেক করার ক্ষমতা বেশি।
ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ, ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন (ইউ টি আই), হাই ব্লাড প্রেশার এবং এপিলেপ্সির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধে ফার্টিলিটির ক্ষতি হতে পারে।
বিস্তারিত জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। সাম্প্রতিক অতীতে ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে থাকলে বা ওই ওষুধের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তা ছাড়া চিকিৎসক নির্দেশিত কোনও ওষুধ খেয়ে ফার্টিলিটির ক্ষতি হয়েছে কিনা সে বিষয়েও জানুন।
কিছু ওষুধ যেমন শুক্রাণু উৎপাদন কমায়, তেমনি কিছু ওষুধ শরীরী মেলামেশায় বিঘ্ন ঘটায়। তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনও ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। সৌভাগ্যবশত, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগ নিরাময়কারী এমন কিছু বিকল্প ওষুধ পাওয়া যায় যা পুরুষের প্রজননের ক্ষতি করে না।
নিম্নলিখিত উপসর্গ অথবা অন্য কোনও ব্যাখ্যাহীন ইউরোলজিক্যাল উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা।
বারে বারে প্রস্রাব করার প্রয়োজনীয়তা।
রাতে নিয়মিত প্রস্রাব করতে ওঠার তাগিদ।
প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসা।
লিঙ্গ থেকে যে-কোনও ধরনের অস্বাভাবিক বা দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ।
যৌন সংক্রমিত রোগ বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ-সহ নানা সমস্যায় আপনি ভুগতে পারেন।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন অথবা আরও জটিল ডায়াবেটিসের মতো রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে এরা একক বা মিলিতভাবে ফার্টিলিটির ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া কোনও যৌন সংক্রমণে আক্রান্ত হলে নিজের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীর ফার্টিলিটির ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
যোগাযোগ-৯৮৩০৬৬৬৬০৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy