বড়দিন, নিউ ইয়ার বা প্রিয়জনের জন্মদিন... বাড়িতে তো অনুষ্ঠানের শেষ নেই। যেটা ছাড়া এই সব পার্টি অসম্পূর্ণ, তা হল মোমবাতি।
বেশ কয়েক দিন ধরে আপনাদের দু’জনের হাজারো চেষ্টাতেও ঝগড়াটা ঠিক মিটছে না। রাতে খেতে বসার সময় জ্বালিয়ে দিলেন কয়েকটা বাতি। চারপাশটা রোম্যান্টিক তো হয়ে উঠলই। সেই সঙ্গে ঘরোয়া ক্যান্ডললাইট ডিনারে ঝগড়াকে ফাঁকি দিয়ে দাম্পত্য লড়াইশেষে আপনাদের দু’জনের মুখেও ফুটল হাসি।
অর্থাৎ, বর্ষশেষের পার্টি হোক কিংবা কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য অন্য রকম কিছু— সব সমস্যার সমাধানই মোমবাতি! অনেকে ভাল লাগা থেকেই, শখ পূরণের জন্য বাতি তৈরি করেন। অনেকে আবার বাড়িতেই মোমবাতি তৈরি করে খুলে ফেলেছেন ক্যান্ডল বুটিক। তাই মোমবাতি তৈরির আগে জেনে নেওয়া যাক কিছু তথ্য।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, বাজারে পাওয়া যায় হরেক ধরনের মোমবাতি। কোনওটা জলে ভাসে, কোনওটার সুগন্ধ মাতাল করে দেওয়ার মতো, কোনওটার আকার নজরকাড়া। সাধারণ ভাবে মোমবাতিকে এই কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। তবে অনেকে আরও কিছু ভাগও খুঁজে নিয়েছেন স্বচ্ছন্দে।
পিলার ক্যান্ডল: এই ধরনের মোমবাতি সলিড হয়। বেস চওড়া হওয়ার দরুণ কোনও সাহায্য ছাড়াই এই বাতিগুলো দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। মূলত গোলাকার হলেও এই ধরনের বাতি চৌকো, আয়তাকার বা নানা জ্যামিতিক আকারের হয়।
ফ্লোটিং ক্যান্ডল: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই ধরনের বাতি জলে ভাসতে সক্ষম। অর্থাৎ এই ধরনের ক্যান্ডল এমন ভাবে বানাতে হবে, যাতে তা জলে ডুবে না যায়।
ভোটিভ ক্যান্ডল: সাধারণত এই ধরনের বাতি আড়াই ইঞ্চি লম্বা হয়। চৌকো বা চোঙাকার এই বাতি ছোট কাচের জার বা গ্লাসে সাজানো হয়।
টেপারস বা ডিনার ক্যান্ডল: পৌনে এক থেকে এক ইঞ্চি ব্যাস আর ছ’ইঞ্চি থেকে প্রায় ১৮ ইঞ্চি লম্বা মোমবাতিকে ডিনার ক্যান্ডল বলে। এই ধরনের বাতি বসানোর জন্য ভাল ও উপযুক্ত বাতিদান বা ক্যান্ডল হোল্ডার দরকার।
ফিল্ড ক্যান্ডল: কনটেনার বা ফিল্ড ক্যান্ডল থেকে তেমন ভাবে ধোঁয়া বের হয় না। ওয়্যাক্স আর উইক দিয়ে ভর্তি এই বাতি থাকে তাপ নিরোধক গ্লাসের জার কিংবা সেরামিক পটারির ভিতর।
টিলাইট ক্যান্ডল: এক থেকে দে়ড় ইঞ্চি ব্যাসের ও এক ইঞ্চিরও কম উচ্চতার ছোট্ট ছোট্ট চোঙাকার বাতিগুলি হল টিলাইট ক্যান্ডল। মেটাল কনটেনারের ভিতর ওয়্যাক্স ভরে এই টিলাইট ক্যান্ডল তৈরি হয়।
জেল ক্যান্ডল: জেল্ড মিনারেল অয়েল বা সিন্থেটিক হাইড্রোকার্বন দিয়ে তৈরি হয় জেল ক্যান্ডল। এগুলি দেখতে স্বচ্ছ হয়। নানা আকারের ও ডিজাইনের পাত্রে জেল ক্যান্ডল পাওয়া যায়।
স্পেশ্যালটি ক্যান্ডল: ত্রিমাত্রিক আকারে এই ধরনের মোমবাতি পাওয়া যায়। হাতে তৈরি এই ধরনের বাতি সাধারণত সাজানোর কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লিকুইড ক্যান্ডল: আকারে ছোট এবং মাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য এক ধরনের তেলের বাতিই হল লিকুইড ক্যান্ডল। তবে এই ক্যান্ডল বাকি মোমবাতির চেয়ে সাধারণত বেশিক্ষণ জ্বলতে পারে।
যদি আপনি বাড়িতেই সহজে বানাতে চান ঘরোয়া বাতি, জেনে নিন তার উপায়ও। মোমবাতি তৈরির প্রাথমিক উপকরণগুলি হল— ওয়্যাক্স, উইক (সুতলি ধরানো থাকে যার সাহায্যে), সুগন্ধী তেল, কনটেনার ও বাটি, স্প্যাচুলা, থার্মোমিটার জাতীয় অ্যাকসেসরিজ। প্রথমে একটি বাটিতে ডাবল বয়লার পদ্ধতিতে ওয়্যাক্স গলিয়ে নিতে হবে। ওয়্যাক্স গলে এলে তাতে ইচ্ছে মতো রং এবং সুগন্ধী মেশান। যে কনটেনারে মোম ভরতে চান, তার ভিতরে উইক বসিয়ে সুতোর আর এক প্রান্ত কাঠির সঙ্গে বেঁধে, পাত্রের উপর আড়াআড়ি ভাবে রাখুন। এ বার গলে যাওয়া ওয়্যাক্স পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা হতে দিন। মোম ঠান্ডা হয়ে জমে গেলে উইকের বেঁধে রাখা প্রান্তটি কেটে দিন। মোমবাতি তৈরি!
প্যারাফিন, বীজ্ওয়্যাক্স এবং সয়— প্রাথমিক ভাবে ওয়্যাক্স তিন ধরনের হয়। মোমবাতি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় প্যারাফিন। এটি আসলে পেট্রোলিয়াম বাইপ্রোডাক্ট। বাতি তৈরির সবচেয়ে পুরনো উপকরণ হল বীজ্ওয়্যাক্স। মধু তৈরির আর একটি বাইপ্রোডাক্ট হল এই ওয়্যাক্স। সাধারণত সোনালি রঙের এই ওয়্যাক্সের স্বাদ মিষ্টি। প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে এই ওয়্যাক্সের দামও হয় সবচেয়ে বেশি। সয়াবিনের তেল থেকে সয় ওয়্যাক্স তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্যারাফিন এবং সয় ওয়্যাক্স একসঙ্গে মিশিয়েও দেওয়া হয়।
মোমবাতিকে রঙিন করে তোলার জন্য দিতে পারেন গলানো ক্রেয়ন। শট গ্লাসে ওয়্যাক্স জমানোর আগে ভিতরে দিয়ে দিতে পারেন ঝিনুক জাতীয় উপকরণ। একই রং হালকা, গা়ঢ় ভাবে মিশিয়ে পরতে পরতে জমিয়ে বানাতে পারেন লেয়ার্ড ক্যান্ডল। কফি মাগের ভিতরও জমাতে পারেন মোম। ইচ্ছে হলে রান্নার নানা উপকরণ (দারচিনি, এলাচ বা লবঙ্গ গুঁড়ো) বা এসেনশিয়াল দিয়েও আনতে পারেন মোমবাতির সুগন্ধ।
সামান্য সৃজনশীলতা, শৌখিন ইচ্ছের উপর ভর করে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারেন মনমাতানো বাহারি, রঙিন মোমবাতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy