মোহর বরাবরই স্বাস্থ্যসচেতন। তাই বাড়িতে থাকুক কিংবা রেস্তরাঁয়— সর্বত্রই খেতে বসে স্যালাড খোঁজে সে।
আবার মেহুলি বহু দিন পর রেস্তরাঁয় গিয়ে বেশ অবাক। মেনু কার্ডের পাতা উল্টোতেই সে আবিষ্কার করে প্রথম দিকে পাতার পর পাতা শুধু হরেক রকম স্যালাডেরই বাহার। স্যালাডও এত রকম হয় নাকি!
স্যালা়ডের নতুন ট্রেন্ড
গোটা বিশ্বই এখন স্যালাডের দিকে ঝুঁকছে। বিষয়টা শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতার নয়। বরং গরম-শীত যে কোনও ঋতুতেই স্যালাড খাবার হিসেবে উপাদেয়। আবার বাড়িতেও অত্যন্ত অল্প সময়ে সহজে বানিয়ে ফেলা যায় হাজারো স্যালাড। নতুন ট্রেন্ডের হাত ধরে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে খেতে বসা নয়, এক প্লেট স্যালাডেও হতে পারে মধুরেণ সমাপয়েৎ।
স্যালাড মানেই যে একগুচ্ছ সবুজ শাক-পাতা— তা ভাবার কারণ নেই। বরং যে সব স্যালাডকে পুরো ‘মিল’ বা স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ হিসেবে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে, তাতে সবুজের পাশাপাশি থাকছে মাছ-মাংস-ডিম জাতীয় নানা প্রোটিনও। অর্থাৎ এক বাটি স্যালাড থেকেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টিগুণ।
শরীরের যত্ন নিতে
স্যালাডে প্রচুর পরিমাণে ন্যাচরাল ফাইবার থাকে। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ, শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকী হৃদরোগ, কোলোরেকটাল, ব্রেস্ট, থ্রোট ক্যানসারের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয় রোজকার
স্যালাড ভক্ষণ।
ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ স্যালাড আবার রক্তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
আবার শরীরের পেশি শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে স্যালাড। প্রচুর পরিমাণে শাক-আনাজ সমৃদ্ধ স্যালাড শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। তা যেমন বার্ধক্যকে পিছিয়ে দেয়, আবার ত্বকেরও খেয়াল রাখে।
আদর্শ স্যালাড
যে কোনও আদর্শ স্যালাডে শাক, আনাজ, ফল, মাংস, পনির জাতীয় প্রোটিন, বাদাম জাতীয় ফ্যাট সবই থাকে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কী পরিমাণে তা দিচ্ছেন, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
প্রাথমিক ভাবে শুরু করতে হবে লেটুস, পালং জাতীয় শাক দিয়ে।
এর পর বিনস, জ়ুকিনি, ফুলকপি, অ্যাভোকাডো, টম্যাটো, শসা যোগ করতে পারেন। যা কাঁচা খাওয়া যায়, তা কাঁচা খাওয়াই শ্রেয়। অন্যথা আনাজ ভাপিয়ে নিতে পারেন। ফলের জন্য বেছে নিতে পারেন আপেল, বেদানা, কিশমিশ কিংবা যে কোনও বেরি।
এর পরই আসে প্রোটিনের ভাগ। চিকেন ব্রেস্ট, মাছ, পনির, চিজ়, ডাল যোগ করতে পারেন। সব ক্ষেত্রেই তা সিদ্ধ, ভাপানো বা সামান্য সতে করে নেওয়া জরুরি।
বাদাম সাধারণত স্যালাডকে আলাদা মাত্রা দেয়। আখরোট, পেকান, আমন্ড জাতীয় বাদাম নেওয়াই ভাল। আখরোট ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। অন্য বাদাম হার্ট ভাল রাখতে সহায়ক।
সবশেষে স্যালাডের ড্রেসিং। ড্রেসিং আসলে হার্ব, তেল, লেবু বা ভিনিগার মিশ্রিত তরল যা স্যালাডে আলাদা স্বাদ, গন্ধ এবং ময়শ্চার যোগ করে।
স্যালাডের সঙ্গে এক-দু’টুকরো পাউরুটি বা হাতে তৈরি রুটি নিতে পারেন। তবে তা হোল হুইট কিংবা আটার তৈরিই শ্রেয়।
বিশদে স্যালাড
তন্তু সমৃদ্ধ স্যালাড যদি খাবারের শুরুতে খাওয়া যায়, তা হলে পরের দিকে খাওয়ার প্রবণতা কম থাকে। যদি সেই স্যালাডেই পরিমাণ মতো মাছ-মাংস-ডিম যোগ করা যায়, তা আবার আলাদা করে প্রোটিন খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে দেয়। শুধু স্যালাড খেলে তুলনায় অত্যন্ত কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা হয়। ফলে যাঁরা লো-কার্ব ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন, তাঁরা স্যালাডকে বেছে নিতেই পারেন নিত্যদিনের ভারী খাবার হিসেবে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, পালং, লেটুস ভীষণ উপকারী। তার সঙ্গে টম্যাটো, বেলপেপার, স্ট্রবেরি, বেদানা, ক্র্যানবেরি যোগ করলে ভাল। ভাল স্যালাডে সাধারণত কয়েক চামচ রোস্টেড বীজ দেওয়া হয়। কুমড়ো, তিল, সূর্যমুখী, তিসির বীজ ভাল ফ্যাট। ফলে এ ধরনের বীজ বা সামান্য তেল স্যালাডকে সুস্বাদু করে তোলে। ভাল মানের ফ্যাট শরীরের জন্যও প্রয়োজনীয়।
ড্রেসিংয়ের জন্য কোনও লো ফ্যাট অয়েলে পছন্দের বেসিল, পার্সলে, থাইম, ধনে পাতা, ডিল, রোজ়মেরি, অরিগ্যানো জাতীয় হার্ব, লেবু বা ভিনিগার ও সামান্য নুন যোগ করতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে ড্রেসিং স্যালাড এবং শরীর— দুইয়ের জন্যই ক্ষতিকারক। প্রচুর ড্রেসিং দিয়ে স্যালাড খেলে যে কারণে আপনি স্যালাড খাচ্ছেন, সেই উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়। ড্রেসিং তৈরির জন্য হাই ফ্রুক্টোজযুক্ত কর্ন সিরাপ কিংবা ট্রান্স ফ্যাটও একদমই বর্জনীয়।
রেস্তরাঁয় খেতে গেলে স্যালাডে ড্রেসিং নিজের হাতেই দিন। এর ফলে কত পরিমাণে ড্রেসিং দিচ্ছেন এবং কী পরিমাণে ফ্যাট গ্রহণ করছেন, তার হিসেবও আপনার আয়ত্তে থাকবে।
স্যালাড তৈরিতে প্রসেসড খাবার ব্যবহার না করাই ভাল। প্যাকেটজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রিজ়ারভেটিভ থাকে, যা খাদ্যের পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়।
স্যালাডে চিজ় রাখতেই পারেন। কিন্তু কোন চিজ় শরীরের জন্য উপাদেয়, তা কত পরিমাণে খাচ্ছেন, সে দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। এমনকী দই ব্যবহার করতে গেলেও তা লো ফ্যাট হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ফুল মিল স্যালাডে প্রোটিন ব্যবহারেও যত্নবান হওয়া জরুরি। টোফু, হালকা মাছ, অল্প বাদাম, চিকেন, সামান্য চিংড়িই যথেষ্ট।
কোনও কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। দুপুরে শুধু স্যালাড খাচ্ছি মানেই যে অনেকটা পরিমাণে খেতে হবে, এ ধারণা ভুল। তাই ঠিক পরিমাণ দিয়ে তৈরি স্যালাড খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এখন থেকে পঞ্চব্যঞ্জন নয়, বরং স্বয়ংসম্পূর্ণ স্যালাডের এক পদে সমস্ত প্রয়োজন মেটানোই হয়ে উঠছে খাদ্যাভ্যাসের নতুন বার্তা।
নানা রকম স্যালাড
গরমে তরমুজ-শসার ঠান্ডা স্যালাড
একটি তরমুজের ছোট টুকরো, ২টি শসার কুচি, ২ চা চামচ অলিভ অয়েল, ১ চা চামচ পাতিলেবুর রস, অল্প ফেটা চিজ়, আধ কাপ সতে করা পনির বা টোফু, স্বাদ মতো নুন, গোলমরিচ, পুদিনা পাতা একসঙ্গে মিশিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন। পনিরের পরিবর্তে গ্রিলড চিকেন কিংবা সিদ্ধ ডিমও দিতে পারেন।
গ্রিলড চিকেন স্পিনাচ স্যালাড
এক কাপ লেটুস, নুন দিয়ে ভাপানো পালং শাক, অল্প মশলায় গ্রিল করা একটি চিকেন ব্রেস্ট, একটি টম্যাটো, অল্প পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকাম কুচি, সিদ্ধ ডিম, লেবুর রস, কয়েকটি আমন্ড, নুন, গোলমরিচ এবং পারমেজ়ান চিজ় মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন গ্রিল়ড চিকেন স্পিনাচ স্যালাড।
মডেল: তৃণা; ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; পোশাক: গ্লোবাস, লেক মল;
লোকেশন: সুইসোতেল; ফুড পার্টনার: ৬, বালিগঞ্জ প্লেস, রাজারহাট; স্যালাড সৌজন্য: দ্য ওয়াল, রাজারহাট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy