Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Fort

কেল্লার গায়ে ইতিহাসের গল্প

মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান সকলকে। পরিচয় করিয়ে দেন ইতিহাসের সঙ্গে। দর্শক তাঁকে অনুসরণ করে চলেন। নহবতখানা পেরিয়ে শো এগোয় দেওয়ান-ই-আমের দিকে।

আলোর খেলা সঙ্গে অভিনয়।

আলোর খেলা সঙ্গে অভিনয়।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:২৭
Share: Save:

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন প্রকল্পে দেশের সৌধগুলিকে ‘দত্তক’ নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এই ‘মনুমেন্ট মিত্র’ প্রকল্পের অংশ হিসেবেই লালকেল্লায় অবস্থিত উনিশ শতকের ঐতিহাসিক ব্রিটিশ ব্যারাকটি সংস্কার করে এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী জনসাধারণের উদ্দেশ্যে কেল্লার মূল নয়টি অংশকে নিয়ে বানিয়েছে একটি দর্শন কেন্দ্র। সেখানে প্রদর্শকের পাশাপাশি সকলের জন্যই রয়েছে ছোটখাটো খেলার ব্যবস্থা। সঙ্গে আয়োজন করেছে ‘মাতৃভূমি’ এবং ‘জয় হিন্দ’-দু’টি আলোক ও শব্দ প্রদর্শনীর। ভারতের ইতিহাস, বিজ্ঞান নানা বিষয় নিয়ে তৈরি ‘মাতৃভূমি’ শো-টি রোজই হয় বিনামূল্যে। তবে, মূল আকর্ষণ ‘জয় হিন্দ’ শো-টির। এই দৃশ্যকল্প ও শব্দের মাধ্যমে লালকেল্লায় ভারতীয় ইতিহাসের যে চারশো বছর প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, তাতে এক দিকে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অন্য দিকে রয়েছে দেশের সব সংস্কৃতিরই ছোঁয়া। একুশ শতকীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রায় ৫০ মিনিটের এই শো আয়োজিত হয় রোজ (সোমবার ছাড়া)।

এই শো-টি শুরু হয় কেল্লার নহবতখানা থেকে। অমিতাভ বচ্চনের জলদগম্ভীর কণ্ঠ সপ্তদশ শতকে কেল্লার নির্মাণের গল্প থেকে দর্শককে ধারাবিবরণী দেওয়া শুরু করে (ইংরেজি শো-টির কণ্ঠে কিরণ বেদী)। তিনি যেন এখানে সময়ের প্রতিরূপ। মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান সকলকে। পরিচয় করিয়ে দেন ইতিহাসের সঙ্গে। দর্শক তাঁকে অনুসরণ করে চলেন। নহবতখানা পেরিয়ে শো এগোয় দেওয়ান-ই-আমের দিকে। সেখানে সম্রাটের রাজ দরবার। শুধু আলো বা শব্দ নয়, রয়েছে পুতুল নাচও। বিরাট লম্বা পুতুলের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে মানুষ। অসাধারণ দক্ষতায় সেই পুতুল হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে, গাইছে, নাচছে। সেখানে মনোরঞ্জনের জন্য কত্থকের আয়োজন। তা শেষে আবারও অনুসরণ করতে হবে সময়কে। এ বার যাত্রা দেওয়ান-ই-খাসের দিকে। বাকি শো সেখানেই। কখনও দেওয়ান-ই-খাস, কখনও রংমহলের গায়ে চলছে শব্দ ও আলোর খেলা। সঙ্গে রয়েছে মৈত্রেয়ী পাহাড়ির পরিচালনায় প্রায় ৬০ জনের দল। তাঁদের নাচ, অভিনয়ই শোটিকে অন্য প্রদর্শনীর থেকে করে তুলেছে আলাদা।

কিলা-ই-মুবারকে মোগল সম্রাট শাহজাহানের পদার্পণের দিন থেকে শুরু করে নাদির শাহের আক্রমণ, মরাঠাদের লালকেল্লা দখল, সিপাহি বিদ্রোহ পেরিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর লড়াই, খান-ধীলন-সায়গলের বিচার প্রহসন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন– একে একে ভেসে এল সব কাহিনি। সঙ্গে সামনের ছোট্ট মঞ্চেতার এক ঝলক অভিনয়। আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে অগ্নিগর্ভ ভারতের যে অগ্নিশিখা লালকেল্লার বুকে জ্বলেছিল তা চোখের সামনে জীবন্ত হয়।

শরদচন্দ্র শ্রীবাস্তবের আবহের সঙ্গে সৌধের গায়ে কখনও নানাসাহেব, বাহাদুর শাহ জ়াফর তো কখনও বোমারু বিমানের দৃশ্যকল্প। কখনও ‘মুঘল-ই-আজ়ম’ ছবির দৃশ্য, তো কখনও সুভাষচন্দ্র বসুর বক্তৃতা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তাও দেখা যায় এক সময়ে। ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা’, ‘বন্দে মাতরম’, ‘জয় হিন্দ’ গানের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে সৌধের গায়ে জাতীয় পতাকার সঙ্গে যখন সংবিধান স্বীকৃত সব ভাষাতেই ‘ভারতবর্ষ’ লেখাটি ফুটে ওঠে, তখন দর্শকও সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’। জাতীয় সঙ্গীত ‘জন-গণ-মন’ গেয়ে শেষ হয় শো।

তবে কিছু খামতিও চোখে পড়ে। প্রথম কথাই হল মধ্যবিত্ত দেশবাসীর পক্ষে টিকিট মূল্য যেন বেশি। তা ছাড়া, প্রায় ৭০০ লোক একসঙ্গে দেখতে পারেন এই শো। আপাতত দর্শক সংখ্যা এত না হলেও শোয়ের প্রথমার্ধে আলোর খেলার পিছনে ছুটতে হচ্ছে বয়স্ক, শিশুদেরও। তাঁরা কিন্তু বেশ সমস্যায় পড়তে পারেন। পাশাপাশি, আশ্চর্যজনক ভাবে শোয়ের বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে রয়েছে মরাঠা শক্তির উত্থান। অথচ মহাত্মা গান্ধী, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু কিংবা আঞ্চলিক অন্যান্য শক্তির উত্থান সেখানে বেশ গুরুত্বহীন। উত্তরপূর্ব ভারতবর্ষ একেবারেই উপেক্ষিত। তবে এ সব বাদ দিলে নতুন সাজে লালকেল্লা অনবদ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Fort Cultural Heritage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE