Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

যে লড়াই চলছে এখনও

মলয় রায়ের স্পার্টাকাস নাটকটি দেখে এলেন বিপ্লবকুমার ঘোষদু’হাজার বছরের লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই, সমান অধিকারের লড়াই। তাই স্পার্টাকাস নাটক আজকেও শুধু প্রাসঙ্গিক নয়, সর্বজনীনও। হাওয়ার্ড ফাস্টের উপন্যাস নাটকটির মূলসূত্র হলেও নাট্যকার, পরিচালক মলয় রায় এবং রোকেয়া রায় সেই পুরনো চেনা পথে হাঁটেননি।

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

দু’হাজার বছরের লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই, সমান অধিকারের লড়াই। তাই স্পার্টাকাস নাটক আজকেও শুধু প্রাসঙ্গিক নয়, সর্বজনীনও। হাওয়ার্ড ফাস্টের উপন্যাস নাটকটির মূলসূত্র হলেও নাট্যকার, পরিচালক মলয় রায় এবং রোকেয়া রায় সেই পুরনো চেনা পথে হাঁটেননি। স্পার্টাকাসের মৃত্যুর পর রোম সাম্রাজ্য তথা গোটা বিশ্বে তার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব এ নাটকের প্রধান উপজীব্য। সেই বিশ্লেষণের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে স্পার্টাকাসদের সংগ্রামের ইতিহাস। স্পার্টাকাসের বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবার বেশ কয়েক বছর পর – এ নাটকের সূত্রপাত। যুদ্ধে স্পার্টাকাসের মৃত্যুর পর তার কয়েক হাজার সঙ্গীকে রোমের রাস্তায় মেরে টাঙিয়ে রাখা হয়েছিল। নাটকের প্রথম দৃশ্যে সেই হাজার হাজার কঙ্কাল থেকে অশরীরীর মতো নেমে আসে মানুষ। তাদের নিয়েই পুরো নাটকের বিস্তার।

লড়াই-এর ময়দানে হারলেও রোম সাম্রাজ্যের চুড়োয় বসে থাকা অভিজাত সম্প্রদায়ের জীবনযাপনে ঢুকে পড়েছেন স্পার্টাকাস। শয়নে, স্বপনে, আধো ঘুমে – এমনকী তাদের চরম ব্যক্তিগত প্রমোদ মুহূর্তেও স্পার্টাকাস ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বয়েসে নবীন পূর্বরঙ্গ স্টেপ’ন স্টেজ তাঁদের এই প্রযোজনাতে চমক সৃষ্টি করেছেন। ৩০ জন অভিনেতাকে নিয়ে তাঁরা নির্মাণ করেছেন মহামূল্যবান এই দলিল। এই নাটকে রোকেয়া রায়, রনিত মোদকের মতো সুপরিচিত অভিনেতার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ কুশলী অভিনেতাও। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন একঝাঁক বিভিন্ন বয়সের নবীন অভিনেতা।

তাই মৃত্যুর পরেও স্পার্টাকাস, তার লড়াই-এর সাথি ভারেনিয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন করে জীবন ফিরে পায়। মানসিক যুদ্ধে সে রোমের সর্বোচ্চ মানুষদের তার কাছে আত্ম-সমর্পণ করতে বাধ্য করে। ভারেনিয়ার চোখ দিয়ে স্পার্টাকাস নতুন করে পৃথিবীটাকে দেখতে পায়। বলতে চায়, ‘যেখানে লড়াই – আমি সেখানে’। এ লড়াই সেদিনই শেষ হবে – ‘যেদিন সব মানুষ স্বাধীন হবে – সমান হবে ...’।

স্পার্টাকাসের স্পর্শে ভারেনিয়াও যেন নতুন করে বেঁচে থাকার মন্ত্র শিখে যায়। তাই নাটকের শেষ পর্বে ভারেনিয়ার দখল নেবার জন্য রোমের প্রধানদের টানাপড়েন – ভারেনিয়ার কাছে তাঁদের মানসিক পরাজয়ের মধ্যেই মঞ্চে ভেসে ওঠে সমস্ত স্পার্টাকাসদের কণ্ঠস্বর – ‘আমরা ফিরে আসবো – লক্ষ লক্ষ – কোটি কোটি হয়ে ফিরে আসবো’।

রোকেয়া আবৃত্তিশিল্পী। কিন্তু মঞ্চাভিনয় তাঁকে আরও বেশি প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এ নাটকে তাঁর সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি অপূর্বভাবে কাজে লাগিয়েছেন। অসাধারণ অভিব্যক্তি, অসাধারণ কণ্ঠের ব্যবহার। তিনি ও মলয় রায় এই নাটকে চেনা গতের বাইরে গিয়ে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির খোঁজ করেছেন। নাটকের কম্পোজিশন এই নাটকের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

প্রতিটি দৃশ্যই ছবির মতো সুন্দর। দেখতে দেখতে দর্শক কখন যেন রোম সাম্রাজ্যে ঢুকে পড়েন। অভিনয়েও প্রথমে আবারও সেই ভারেনিয়া রোকেয়ার কথাই বলতে হয়। স্পার্টাকাস রণিত মোদকও অনবদ্য। নজর কেড়েছেন বাটিয়াটাস প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় ও ড্রাবা রাজীব রায়। অভিজাত রোমানদের ভূমিকায় আশিস ঘোষ, সুমন নন্দী, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ও শাঁওলী চট্টোপাধ্যায়য়ের কথা আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়। তবে সবচেয়ে ভাল লাগে একঝাঁক নতুন তরুণ শিল্পীদের সম্মিলিত অভিনয়, যা নাটকটিতে আলাদা মাত্রা জুগিয়েছে। এ নাটকের মঞ্চভাবনাও বেশ ভাল। দিশারী চক্রবর্তীর আবহ ও বিশ্বনাথ দে’র মঞ্চভাবনা তাতে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy