Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

খর গ্রীষ্মে তরতাজা!

প্রত্যেক ঋতুর একটা ছন্দ আছে। চলন আছে। গ্রীষ্মেরও আছে। তাকে বুঝে, সেই মতো রূপরুটিন ও ডায়েটকে পরিমার্জন করে, নিজেকে একটু যত্ন করুন।প্রত্যেক ঋতুর একটা ছন্দ আছে। চলন আছে। গ্রীষ্মেরও আছে। তাকে বুঝে, সেই মতো রূপরুটিন ও ডায়েটকে পরিমার্জন করে, নিজেকে একটু যত্ন করুন।

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

অফিসে যাব বলে বেরিয়েছি। ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। হঠাৎই পাশে দাঁড়ানো মেয়েটি চোখ টানল। উঁহু, বোধ হয় মহিলা বলা উচিত। পাশে বছর দশেকের ফুটফুটে কন্যা। দেখে, মাকে ‘বিবাহযোগ্যা’ ভেবে ভুল করা নিয়ে সেই বিজ্ঞাপনটার কথা মনে পড়ে গেল! বৈশাখে তেতে পুড়ে যাওয়া গরমেও কী স্নিগ্ধতা সেই মেকআপহীন মুখে! চোখে আইলাইনারের সরু টান। তাই কি ওই বাড়তি উজ্জ্বলতা? লিপস্টিকের প্রলেপ নেই, লিপবামে তাঁর প্রসাধন শেষ। নাহ, তাঁর যে টিকলো নাক, হরিণ চোখ, রাজহংসী গ্রীবা... তেমন নয়। আসলে তাঁর ত্বক অতি যত্নে লালিত। এবং তারই সুচারু ছাপ মুখমণ্ডলকে ছাপিয়ে, কোথাও বোধ হয় ছুঁয়েছে তাঁর ব্যক্তিত্বকে...

তখনই ঠিক করে ফেললাম। গরমে স্কিনকেয়ার, ডায়েট এ সব নিয়ে আজ থেকে আর হেলাফেলা নয়। নিজেকে সুস্থ, সুন্দর, সতেজ লাগলে একটা আত্মবিশ্বাসের জামা অলক্ষ্যেই গায়ে ওঠে। আর তাই নিজের জন্য নিজেকে সাজাব যতনে...

মুখের যত্নে

মুখের যত্ন সারা বছর মাস্ট, বিশেষত এই অস্বস্তিকর গরমে। স্কিন হাইড্রেটেড রাখা এবং ধুলো-ময়লা, ঘাম থেকে ত্বক বাঁচিয়ে রাখার জন্য মুখ পরিষ্কার রাখাটা জরুরি। এ সবের কারণেই কিন্তু এ সময় ব্রণর উৎপাতটা বেশি হয়। আর আপনি যদি তাতে ভুক্তভোগী হন, তা হলে দিনে অন্তত তিন থেকে চার বার মুখে জলের ঝাপটা দিন। প্রত্যেক বার ফেসওয়াশ দিয়ে ধোওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনও কোনও ডার্মাটোলজিস্ট পরামর্শ দেন, এ সময় মুখ পরিষ্কার রাখার জন্য সপ্তাহে এক বা দু’বার স্ক্রাবিং করুন। অ্যাকনে-প্রবণ স্কিন হলে, মুলতানি মাটি, চন্দন, গোলাপজল ও পুদিনা পাতার মিশ্রণ ব্যবহার করুন। আবার ত্বকের ধরন রুক্ষ-শুষ্ক হলে ডিমের সাদা অংশ, লেবু, চন্দন ও দইয়ের মিশ্রণে সামান্য হলুদ ও বেসন মিশিয়ে স্ক্রাবিং করুন। লেবু আর টম্যাটোও কিন্তু ত্বকের উপকারী বন্ধু। টম্যাটো জুস ফ্রিজে আইস ট্রে-তে রেখে দিন। এক দিন অন্তর হালকা করে মুখে ঘষে নিন। ধুয়ে ফেলার আগে শুকিয়ে যেতে দিন।

জল ভীষণ দরকারি

শুষ্ক ত্বক বলে শীতকালে যে ভারী ক্রিম ব্যবহার করেছিলেন, সেটা এখনও করছেন? তা অবিলম্বে দূরে সরান। তবে পা বা কনুইয়ের মতো শুকনো অংশগুলো ক্রিম লাগাতে পারেন। গরমে এমন প্রডাক্ট ব্যবহার করা উচিত, যা অ্যাপ্লাই করলে ত্বক (ড্রাই, অয়েলি নির্বিশেষে) শ্বাস নিতে পারে। হালকা সেরাম বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে রোমকূপের মুখ বন্ধ হওয়ার ভয় নেই। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য ওয়াটার-বেস্‌ড ময়শ্চরাইজার, অয়েলি স্কিনের জন্য জেল বেস্‌ড, অ্যাকনে-প্রবণ হলে মিনারেল সমৃদ্ধ ফেশিয়াল স্প্রে ব্যবহার করুন। যদি পারেন, স্নান করার আগে শরীরের শুকনো অংশে ১০-১৫ মিনিট দই মাসাজ করুন কিংবা জলে গ্লিসারিন ও গোলাপজল ফেলে স্নান করুন।

গোড়ার কথাই শেষ কথা

ক্লেনজিং, টোনিং এবং ময়শ্চরাইজিং... ভীষণ দরকার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের ভরা গরমেও। তাই রোজ বিছানায় যাওয়ার আগে ত্বকেরও যেন ‘ডিনার’টা হয়ে যায়। গরম বলে ত্বক শুষ্ক হবে না, তা নয়। ঠান্ডাঘরে বারবার ঢোকা এবং বেরোনোই ত্বকে আঁচড় ফেলার জন্য যথেষ্ট। ঘামের কারণে রোমকূপ উন্মুক্ত হয়। তাই ত্বক পরিষ্কার করার পর রোমকূপ বন্ধ করার জন্য টোনার লাগান। অনেকেই হয়তো জানেন না, অল্প বয়সে বলিরেখার জন্য কিন্তু ভীষণভাবে দায়ী স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো না করা, যা সূর্যের ইউভি রশ্মির চেয়েও ক্ষতিকর।

সানস্ক্রিন এভরিথিং

রোদ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন ছাড়া বেরোনো নয়। সানস্ক্রিনের এসপিএফ মিনিমাম ৩০ হওয়া উচিত এবং তা বেরোনোর আধঘণ্টা আগে মাখুন। শুধু রোদে পোড়া ভাব রোখার জন্য নয়। দাগ, ছোপ বা ফাইন লাইনসের থেকেও ত্বক আগলে রাখে সানস্ক্রিন। তবে ছ’মাস অন্তর ব্র্যান্ড বদলাতে পারলে ভাল। অয়েলি স্কিন হলেও সানস্ক্রিন লাগান, তবে জেল বেস্‌ড। দুপুর বারোটা থেকে বিকেল চারটে অবধি রোদ বেশি থাকে। তাই এ সময় বেরোলে ছাতা নিন, সানগ্লান পরুন। ঠোঁট ঢেকে থাকুন লিপবাম দিয়ে। হিট চোখেরও ক্ষতি করে। তাই কিছুক্ষণ অন্তর চোখ জলে ধুয়ে নিন।

হাইজিন মেনটেন করুন
দিনে দু’বার স্নান করুন। এতে শুধু ত্বক ভাল থাকা নয়, গরমে যে-ক্লান্তি আপনার উপর চেপে বসতে চায়, তাকেও সরাতে পারবেন। রোদে তেতে পুড়ে বাড়ি ফিরে জলের মধ্যে নিমপাতা ফেলে স্নান করুন। সম্ভব হলে, হাত ও পা সামান্য নুন দেওয়া জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এতে রক্ত চলাচল ভাল হয়। তার পর ইউরিয়া ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্রিম লাগান। স্নানের সময় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে আর্মপিট পরিষ্কার করুন। তার পর শুকনো করে গা মুছে নিন। নিয়মিত আর্মপিট হেয়ার-ফ্রি রাখুন, যাতে ওই অংশে ব্যাকটিরিয়া হামলা না করে। গায়ে গন্ধ হলে, বেকিং সোডার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মাখুন। শুকিয়ে গেলে তুলে দিন। পিরিয়ড্‌স চললে ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর প্যাড বদলান। আর শুধু পরিষ্কার জামাকাপড়ই নয়, ফ্রেশ আন্ডারগার্মেন্টস পরাটাও কিন্তু জরুরি।

মডেল: শ্রীময়ী, দর্শনা, মেকআপ: অভিজিৎ চন্দ, সায়ন্ত ঢালি, লোকেশন: ভার্দে ভিস্তা

ছবি: সোমনাথ রায়, অমিত দাস

গরমে কী খাবেন এবং কীভাবে খাবেন

এ সময়ে মশলাদার খাবার নয়, হালকা খাবার খাবেন, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তবে গরম লাগছে বলে, দুপুর কিংবা রাতের খাবারটা রুটিন থেকে বেমালুম বাদ দিয়ে দিলেন, সেটা মোটেও করবেন না। কেমন হওয়া উচিত গ্রীষ্মকালে আপনার খাদ্যাভাস? বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় ডায়াটেশিয়ান অর্পিতা দেব।

• ঋতুভেদে ও পেশাভেদে প্রত্যেকটি মানুষের ব্যালান্স ডায়েট জরুরি। গরমে অনেক সময় খাওয়ার ইচ্ছে চলে যায়। কিন্তু জলের দাবি জানায় শরীর, নিজের চাহিদা অনুযায়ী। শরীর যেটা ডিমান্ড করছে, তার প্রয়োজনীয়তা সব সময় বেশি হয়। স্বাভাবিকভাবে জল খাওয়াও হয় বেশি। এ সময়ের ফলও রসালো।

কিন্তু জল বেশি খাচ্ছি বলে, রোজকার সুষম আহারে যেন ছেদ না পড়ে। তা হলে সেটা কিন্তু শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।

• ঘাম হওয়ার ফলে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায় বলে, জল বেশি খাওয়া দরকার। দিনে কার কতটা জলের প্রয়োজন, তা উচ্চতার উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে পুরুষদের উচ্চতা মহিলাদের তুলনায় বেশি, তাই জলের চাহিদাও বেশি। ৩০ এমএল পার কেজি, এটা শরীরের সহজ চাহিদা। সেটা মেনে চলতে পারলেই ভাল।

• বাইরে থেকে এসে অনেকেই ফ্রিজের জল গলায় ঢালেন। ফলে একটা অপটিমাম টেম্পারেচার ঝট করে কমিয়ে দেওয়া হয়। তখন কিন্তু নানা ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস সক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলে ইনফ্লুয়ে়ঞ্জা ও নানা রোগ কাবু করার সুযোগ পায়। জলবাহিত রোগ এ সময় খুব বেশি হয়। খুব ক্লান্ত হয়ে কেউ হয়তো এমন জল খেলেন, যা যথেষ্ট পরিশুদ্ধ নয়... এগুলো গরমকালে সতর্কভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। জল সঙ্গে রাখুন। চড়া রোদে বেরোনোর আগে দইয়ের ঘোল, ডাবের জল বা শুধু জল খেয়ে বেরোন।

• এ সময়ে অনেকেই ফ্রিজে জল রেখে, সেটা ৪-৫ দিন ধরে খান। ফ্রিজের জলে ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস জন্মাবে তা নয়। তবে রিসাইক্লিং যত দ্রুত করা যায়, ততই ভাল। এতে জল ফ্রেশ থাকে। তবে বারবার সেই বোতল খোলা বন্ধ করার ফলে কিন্তু মাইক্রোঅর্গানিজমস সেখানে জন্মাতে পারে। তবে যেটা অনেকেই ভুল করেন, একটা পাত্রে ৩-৪ দিনের খাবার রান্না করে ফ্রিজে রেখে দেন। সেটাই বের করে গরম করে খেয়ে আবার ফ্রিজে রেখে দেন। সমস্যাটা সেখানেই। একে টেম্পারেচারের ওঠা-নামা, তার উপর মাইক্রোঅর্গানিজমের গ্রোথও খুব বেশি হয়। তাই অনেক দিন পর্যন্ত খাবার রান্না করে ফ্রিজে রাখবেন না, রাখলে আলাদা-আলাদা পাত্রে রাখবেন এবং বারবার বের করবেন না। একবারে বের করে পুরোটা খেতে চেষ্টা করুন।

অন্য বিষয়গুলি:

Summer Fruits
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy