এই প্রচণ্ড গরমে ছোট্ট গুবলুর মাঝেমাঝেই গা চুলকোচ্ছে। সে দিন তো হঠাৎ কেঁদেই উঠল। তখন ওর মা খেয়াল করে দেখল, গুবলুর ছোট্ট শরীর লাল ঘামাচিতে ছেয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা কিন্তু শুধু মাত্র বাচ্চাদেরই নয়। বড়রাও একেবারে জেরবার প্যাঁচপেচে ঘামের দাপটে।
আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গরম কিংবা ঘামকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তবে ঘাম জমে যাতে গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা না দেয়, তার জন্য বিশেষ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত প্রত্যেকেরই। কারণ ঘাম জমে সর্দিকাশি থেকে শুরু করে স্কিনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ঘাম থেকে জন্ম নেওয়া অসুখ
• শরীরে ঘাম বসে সর্দিকাশি হতে পারে। কারও আবার এটাই আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। যেমন অ্যাকিউট টনসিলাইটিস বা সাইনোসাইটিস। অ্যাকিউট ফ্যানেনজাইটিসও হতে পারে। আরও বেশি হলে নিমোনাইটিস হতে পারে। এ সব রোগে বাচ্চা কিংবা বড় সকলেই আক্রান্ত হতে পারে।
• প্রচণ্ড গরমে ঘাম গায়ে কেউ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। একে ‘ভেসোভেইগেল অ্যাটাক’ বলে। এটা আসলে তেমন কিছুই না। ব্রেনে ব্লাড সাপ্লাই কমে গেলে হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বদলে গেলে আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম যে মেকানিজম কন্ট্রোল করে, সেটা সে সময় কাজ করতে পারে না। এর ফলে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
• গায়ে ঘামাচি বা ইরাপশন বেরোতে পারে। সারা শরীরে একটা লাল আভা দেখা দিতে পারে অর্থাৎ নর্মাল ঘামাচি হতে পারে।
• গরম থেকে শরীরে বড় বড় ফোঁড়াও হতে পারে। এরও উৎস সেই ঘাম।
• গরমে বিভিন্ন রকম ভাইরাসের অসুখ হতে পারে। এগুলো যদিও সরাসরি ঘাম থেকে হয় না।
সাবধানতা
• ঘাম যেন শরীরে বেশিক্ষণ জমে না থাকে।
•ঘেমে গেলেই জামাকাপড় বদলে নিতে হবে। অফিসে থাকার সময় সেটা সম্ভব না হলেও, বাড়ি পৌঁছেই দ্রুত জামাকাপড় বদলে নিন।
• ঘাম জমলেই স্নান করুন। স্নান দু’তিন বারও হতে পারে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা উচিত। অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যের বিরাট তফাত যাতে না হয়।
• এসি থেকে বাইরে যাওয়া কিংবা বাইরে থেকে এসির মধ্যে সরাসরি ঢোকা চলবে না। এসি-তে ঢোকার আগে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শরীরের ঘাম জমা অংশগুলো মুছে নিন ভাল করে।
• এসি থেকে বেরিয়েই কোনও রকম ঠান্ডা পানীয় খাওয়া চলবে না। আমরা অনেকেই বাড়িতে ঢুকেই একটা ঠান্ডা জলের বোতল বের করে খেয়ে নিই। সেটা খুবই ক্ষতিকর। সব সময় উচিত রুম টেমপারেচারে থাকা জল খাওয়া। সব সময় ঠান্ডা এবং গরমের পার্থক্যটাকে শরীরের সঙ্গে মানানসই করে নিতে হবে।
•প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ এ সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায়।
•এই ঘাটতি পূরণের জন্য জল ছাড়াও ডাবের জল, ওআরএস এ সব খেতে হবে। কারণ রিপ্লেনিশ না করলে ডিহাইড্রেশন হয়। এর থেকে মাথা ঘুরতে পারে। ঘাম হলে এ সব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• ‘ভেসোভেইগেল অ্যাটাক’ হলে, এ সময় একটু নুন-চিনি বা গ্লুকোজের জল খেলে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যায়।
• ঘাম জমলে তা থেকে রেহাই পেতে, অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করুন। এই পাউডার অন্য পাউডারের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে লাগানো যেতে পারে। এতে ইরাপশনস্ প্রতিহত করা যায়।
•তবে রোমকূপের ছিদ্রগুলো যাতে সব সময় পরিষ্কার থাকে, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ ত্বক পরিষ্কার না থাকলে রোমকূপে ময়লা জমে মুখ বন্ধ হয়ে স্কিন ইরাপশান হতে পারে।
• মাথাকে রোদ থেকে আড়াল করুন। ব্যবহার করুন ছাতা, টুপি।
•মনে রাখতে হবে, খুব ঘাম জমে কারও যদি জ্বর আসে বা প্রচণ্ড গলা ব্যথা করে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের জন্য সাবধানতা
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মায়েরা তো সাবধান থাকেনই। তবুও
• খেয়াল রাখতে হবে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় বাচ্চাদের মাথায় যেন টুপি থাকে কিংবা ছাতা ব্যবহার করে। বাচ্চাদের মাথাও রোদের হাত থেকে রক্ষা করা বিশেষ দরকার, যাতে ঘাম জমে সর্দিকাশি, গলাব্যথার মতো সমস্যা না হয়।
• তাই খেয়াল রাখবেন, ফ্রুট জুস, গ্লুকোজের জল... এ সব বাচ্চারা যেন সব সময় ক্যারি করে।
• রোদ থেকে বাড়িতে এসে, জামাকাপড় ছাড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা কিছু দেওয়া চলবে না।
অনুলিখন : পিয়ালী দাস
তথ্য সহায়তা:
ডা. চয়ন গঙ্গোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy