কৃতী ছাত্র, সফল আইনজীবী, বাগ্মী, জননেতা— এমন নানা অভিধায় তাঁকে ধরা যায়। কিন্তু এ সবের অন্তরালে ব্যক্তিমানুষটির জীবন-কর্ম কোন খাতে বয়েছে? প্রিয় স্বদেশ, তার স্বাধীনতা ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর ধারণাটি কেমন ছিল? দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে নিয়ে লিখছেন অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার ভোট। সাল ১৯২৩। স্থান, ব্যারাকপুর। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এক নবীন চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকটির সমর্থনে নিজের সমস্ত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যেন উজাড় করে দিলেন এক বাঙালি রাজনীতিক। এক প্রচারসভায় ওই রাজনীতিককে তাক করে উড়ে এল ঢিল। আঙুলে চোট পেয়েও তিনি বললেন, ‘সাহস করে সামনে এসে মারো না কেন, ভাই? কেন কাপুরুষ নামের কলঙ্ক বহন করছ?’ ফলপ্রকাশে দেখা গেল, জয়লাভ করেছেন ওই চিকিৎসক।
চিকিৎসকটি বিধানচন্দ্র রায়। যে রাজনীতিক তাঁর হয়ে প্রচারে নামেন, তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ।
দৃশ্য দুই: ‘আমার সামনে আজ সাক্ষাৎ নারায়ণ দাঁড়িয়েছেন’, বক্তা অরবিন্দ ঘোষ। ‘আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলা’য় অভিযুক্ত অরবিন্দের কি চিত্তরঞ্জনকে দেখেই নারায়ণ-উপলব্ধি? তাই বোধহয়, মামলার খুঁটিনাটি বিষয় লিখতে শুরু করেও ‘হৃদয়ের অন্তর্দেশ’-এর কথায় তার প্রয়োজনীয়তা আর নেই, বুঝলেন অরবিন্দ। এই মামলা হাতে নেওয়ার কিছু দিন আগে এক মা এসে চিত্তরঞ্জনকে বলে গিয়েছেন, ‘আমি শুধু আমার ছেলের জন্য আসিনি, সব ছেলেদের বাঁচাবার ভার তুমি নাও, বাবা।’
পারিশ্রমিক নিয়েই আইনজীবী চিত্তরঞ্জন তাঁর রসা রোডের বাড়িতে দিন-রাত এক করে আইনের বইপত্রের মধ্যে ডুবে থাকেন। আদালতে সওয়াল করার সময়ে তাঁর মনে হয়, তিনি নিজেই অভিযুক্ত। নিজেই নিজের অভিযোগ খণ্ডন করছেন। আইনজীবী চিত্তরঞ্জনের এমন দীর্ঘ ‘তপস্যায়’ অরবিন্দ মুক্ত হলেন। আপিল মামলায় বারীন ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হল। ওই মা হলেন উল্লাসকরের জন্মদাত্রী।
দৃশ্য তিন: ১৯২০-তে নাগপুর কংগ্রেসের কিছু দিন পরের ঘটনা। বাড়িতে এসে স্ত্রী বাসন্তীদেবী ও ছেলে চিররঞ্জনকে দেশবন্ধু বললেন, ‘জানি, তোমাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে, কিন্তু কী করব? আমি যে আর এর মধ্যে থাকতে পারছি না।’ দু’জনেই উৎসাহের সঙ্গে সম্মতি দিলেন। আইনজীবীর পেশা ত্যাগ করলেন চিত্তরঞ্জন।
দেখা গেল, যে মানুষটা ৬০ ইঞ্চি বহরের ফরমায়েশি ঢাকাই ধুতি পরতেন, তিনিই মোটা খাদির ধুতি অঙ্গে দিলেন। ফিনফিনে গিলে করা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবির বদলে পরলেন খাদির মোটা ফতুয়া। যে মানুষটি রেলযাত্রার সময়ে গোটা কামরা রিজ়ার্ভ করতেন, তিনিই জনতার সঙ্গী হতে নেমে এলেন তৃতীয় শ্রেণিতে। ত্যাগ করলেন হুঁকোর বিলাসী টান। তবে এই চিত্তরঞ্জন একটি কাজে অপারগ। এক বার মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর সঙ্গে চরকায় সুতো কাটতে বসলেন। কিন্তু এক টুকরো সুতোও বেরোল না। গাঁধীজি বললেন, ‘এ কাজে তুমি একেবারেই অযোগ্য।’ হাসিমুখে তা স্বীকার করলেন চিত্তরঞ্জন।
ব্যক্তি-সমাজ-রাজনৈতিক জীবনে চিত্তরঞ্জন এমন ধারারই। যে কোনও মহাপ্রাণের মতোই তিনি ব্যতিক্রমী, সহিষ্ণু। নির্দিষ্ট অভীষ্টের দিকে পৌঁছতে সাদরে গ্রহণ করেন বৈপরীত্যের ধারণাকেও। চিত্তরঞ্জনের একমাত্র অভীষ্ট, প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতা।
(২)
চিত্তরঞ্জনের জন্ম কলকাতার (৫ নভেম্বর, ১৮৭০) পটলডাঙা স্ট্রিটের এক বাড়িতে। বাবা, ভুবনমোহন দাশ। মা, নিস্তারিণীদেবী। আট সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। আদিবাড়ি বিক্রমপুরের তেলিরবাগ। সেই অর্থে নিজেকে ‘বিক্রমপুরবাসী’ বলেছেন আজীবন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ভিন্ন গোত্রের। ছোটবেলায় ভাইবোনদের চার দিকে বসিয়ে সে বক্তৃতা দেয়। মাঝেমধ্যে স্কুলের ছুটির দিনে আমবাগানে লুকিয়ে পড়ে। বাড়িতে খোঁজ খোঁজ রব। তখন দেখা যায়, এক কোঁচড় আম, পেন্সিল কাটা ছুরি নিয়ে গাছতলায় ঘুমোচ্ছে সে।
তবে সব দুষ্টুমি শান্ত হয়ে যায় মায়ের স্পর্শ পেলে। মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা যেন বোঝা যায় এক গ্রীষ্মের দুপুরে। তখন চিত্তরঞ্জনের সাত-আট বছর বয়স। মা নিস্তারিণীদেবী শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছেন। এমন সময়ে শিশু চিত্তরঞ্জন সেখানে এলে, তার গায়ে পা লাগল মায়ের। বললেন, ‘তোর গা কী চমৎকার ঠান্ডা রে।’ গল্পের বইয়ে মোহিত নিস্তারিণী দীর্ঘক্ষণ পরে খেয়াল করলেন, ছেলে ঠায় দাঁড়িয়ে। মায়ের আরামে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য দুষ্টু ছেলেটা এক পা-ও নড়েনি!
আসলে জাগতিক বিষয়ে চিত্তরঞ্জন ছোট থেকেই আপনভোলা। পড়ছে হয়তো, মা এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দুধ খেয়েছিস চিত্ত?’ ছেলের উত্তর, ‘দুধ? খেয়েছি বোধহয়...’ কখনও পরে ফেলে ভুল জামা। এ ভাবেই গড়িয়ে যায় শৈশবের দিনগুলি। লন্ডন মিশনারি স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে ‘রাভেনা’ জাহাজে চড়ে চিত্তরঞ্জন পাড়ি দিলেন লন্ডনে। লক্ষ্য, আইসিএস হওয়া। কিন্তু দু’-একটি প্রশ্নের উত্তর মনমতো হল না। বাকি পরীক্ষা দিলেন না। পরের বছর ফের প্রস্তুতি।
তবে এই সময়ে দাদাভাই নওরোজিকে পার্লামেন্টের সভ্য নির্বাচন করার জন্য বক্তৃতা দিতেই বেশি দেখা গেল চিত্তরঞ্জনকে। ওই পর্বেই পার্লামেন্টের সভ্য তথা ওল্ডহ্যাম থেকে প্রার্থী জে ম্যাকলিন ভারতীয়দের ‘গোলামের জাতি’ বলে উল্লেখ করলেন। ওল্ডহ্যামে এক প্রতিবাদ সভায় গর্জে উঠলেন চিত্তরঞ্জন। ডারউইন কথিত ‘মিসিং লিঙ্ক’, ‘কীট’ হিসেবে উল্লেখ করলেন ম্যাকলিনকে। কিন্তু এ সব রাজনৈতিক সক্রিয়তার ফল— আইসিএস হতে পারলেন না চিত্তরঞ্জন। তবে মিডল টেম্পল থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করলেন।
কলকাতায় ফিরে ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জনের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, বিয়ে। কিন্তু সেই সময়ে চিত্তরঞ্জনের বাড়ির আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। বাবা দেউলিয়া। এ রকম পরিবারের ছেলের সঙ্গেই বিক্রমপুরের নওগাঁর বাসিন্দা বরদানাথ হালদারের বড় মেয়ে বাসন্তীদেবীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হল। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজ প্রশ্ন তুলল, ‘ঈশ্বরের বিদ্রোহী’, ‘মাতাল’, ‘নাস্তিক’ চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে বিয়েটা হচ্ছে কেন? প্রথম দু’টি আখ্যা চিত্তরঞ্জন পেয়েছিলেন তাঁর ‘মালঞ্চ’ কাব্যগ্রন্থের ‘ঈশ্বর’ ও ‘বারবিলাসিনী’ কবিতার জন্য। ‘ঈশ্বরে বিশ্বাসী’, এ কথা প্রমাণের জন্য চিত্তরঞ্জন উল্লেখ করলেন ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি। তবে ‘আমি হিন্দু নই’, এই মর্মে লিখে ১৮৯৭-এর ৩ ডিসেম্বর বিয়েটা হল। শেষোক্ত লেখাটির জন্য কিন্তু চিত্তরঞ্জনের সারা জীবন খেদ ছিল। আপত্তি ছিল ব্রাহ্মবিবাহের প্রণামী ও আচারগুলি নিয়েও। তাই দু’জনে বিয়ের রাতেই প্রতিজ্ঞা করলেন, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ের প্রণামীতে কখনই আবদ্ধ করা হবে না।’’ এই দম্পতির তিন সন্তান, অপর্ণাদেবী, চিররঞ্জন ও কল্যাণীদেবী।
বাবা হিসেবেও তিনি ছিলেন আদর্শ। ছাত্রজীবনে চিত্তরঞ্জনের বিশেষ কৃতিত্ব ছিল সাহিত্য ও ইংরেজি ভাষায়। কিন্তু অঙ্কে খুবই কাঁচা। এ নিয়ে একটি গল্প শুনিয়েছেন তাঁর কন্যা অপর্ণাদেবী। অপর্ণাদেবী এক বার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে খারাপ ফল করেছেন। কান্নাকাটি করছেন। তা দেখে চিত্তরঞ্জন বললেন, ‘আরে বোকা মেয়ে! এর জন্য এত কান্না? আইসিএস-এ অঙ্কে রসগোল্লা আমিও খেয়েছি, তাতে হয়েছে কী?’
আসলে এই দেশনায়ক বাড়ির সকলের সঙ্গে এ ভাবেই মিশেছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গেও সম্পর্কটি নানা খাতে বয়েছে। পুরুলিয়ার বাড়িতে ফুলের বাগানের মালিকানা ভুবনমোহনের। আর ফলের, আনাজের বাগানের মালিকানা নিস্তারিণীদেবীর। এক বার সেই বাগান থেকে একটি বড়সড় বেগুন তুললেন ভুবনমোহন। ব্যস, শুরু হল দাম্পত্য কলহ। ছেলের আদালতে দু’জনেই। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে চিত্তরঞ্জনের নিদান, ‘মা, বেগুন ভাজা করো। লুচি দিয়ে খেতে খুব ভাল লাগবে।’ ব্যস, কেস ডিসমিস।
তবে পৈতৃক সূত্রে বিপুল ঋণের বোঝা ও ‘দেউলিয়া’ অপবাদ দীর্ঘদিন সঙ্গী ছিল চিত্তরঞ্জনের। এই ঋণ থেকে মুক্ত হতে চেয়ে আদালতে অমানুষিক পরিশ্রম, সিটি কলেজে আইনের শিক্ষক হিসেবে পড়ানো, টাকা বাঁচাতে হেঁটে যাতায়াত এমন নানা কিছুই করতে হয় চিত্তরঞ্জনকে। ১৯১৩-য় সব ঋণ শোধ করেন। আইনজীবী হিসেবে ঈর্ষণীয় রোজগার করতেন। আইনজীবী হিসেবে আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও চিত্তরঞ্জনের কয়েকটি নামকরা মামলা হল, নোয়াখালি নোট চুরি, ভূকৈলাশ জমিদারির নোট চুরি, ডুমরাওন, ঢাকা ষড়যন্ত্র, লছমীপুর, বন্দেমাতরম্ প্রভৃতি। মামলার সওয়াল-জবাবে চিত্তরঞ্জন প্রয়োজনে ব্রিটিশ বিচারকদেরও যথেষ্ট বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন। এর পরিচায়ক, দিল্লি ষড়যন্ত্র মামলা। বিচারক এমএইচ হ্যারিসন অত্যন্ত রুক্ষ স্বভাবের লোক। প্রায়ই আইনজীবীদের অপমান করেন। এই পরিস্থিতিতে বিচারককে ‘শায়েস্তা’ করার জন্য দিল্লির আইনজীবীদের আমন্ত্রণে চিত্তরঞ্জন সওয়াল শুরু করলেন। এক দিন হঠাৎ চিত্তরঞ্জনের একটি মন্তব্যে অসহিষ্ণু বিচারক বললেন, ‘আপনি যদি ভাল ইংরেজি না জানেন, তবে আমার আদালতে যত দিন থাকবেন, তত দিন অশিষ্ট মন্তব্য করা চলবে না। মিস্টার অলস্টনের কাছে আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ সবাইকে স্তম্ভিত করে চিত্তরঞ্জন বললেন, ‘‘নো অ্যাপলজি ইজ় নিডেড অ্যান্ড নান উইল বি অফারড।’’ কিছু দিনের মধ্যেই বিচারকের ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন দেখা গেল!
তবে আইনের কচকচানি চিত্তরঞ্জনের তেমন ভাল লাগত না। তাঁর আনন্দ সাহিত্যের রসাস্বাদনে, সাহিত্য সৃষ্টিতে। হয়তো তাই সখ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও। লন্ডনে চিত্তরঞ্জন একবার উঠেছেন রাস্তার ধারে এক বাড়িতে (১৯১১-য়)। সেখানেই এক সান্ধ্য আসরে রবীন্দ্রনাথ হাজির। সঙ্গী ডব্লিউ বি ইয়েটস ও উইলিয়াম রোদেনস্টেইন। রবীন্দ্রনাথ ‘সোনার তরী’ পড়ে শোনাচ্ছেন। সেই স্বরের জাদুতে ঘরে লোক জমতে শুরু করল। খানিক বাদে রবীন্দ্রনাথ পড়তে শুরু করলেন, ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে।’ মুগ্ধতায় স্তব্ধ গোটা আসর। এর পরে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে চিত্তরঞ্জন তাঁর ‘সাগর সংগীত’-এর খাতা থেকে কিছু সৃষ্টি তাঁকে শোনালেন। তবে রবীন্দ্রনাথের অলৌকিক প্রতিভাকে সম্মান জানালেও তাঁর ‘সব লেখা আমার ভাল লাগে না’— দ্বিধাহীন ভাবে বলেন চিত্তরঞ্জন। বাংলা সাহিত্যে স্রষ্টা ও ‘নারায়ণ’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে চিত্তরঞ্জনের অবদান সম্পর্কে পৃথক প্রবন্ধের পরিসর রয়েছে।
চিত্তরঞ্জন বৈষ্ণব-রসশাস্ত্র ও চৈতন্যদেবের বিশেষ গুণগ্রাহী। তাই মনে করেন, ‘সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স মহাপ্রভুই প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন।’ আবার মাতৃবিয়োগের পরে তাঁর যন্ত্রণা লাঘব হয় রামদাস বাবাজির ‘মাধব বহুত মিনতি করুঁ তোয়’ শুনে। তবে বাংলা সাহিত্যে চিত্তরঞ্জনের প্রিয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কারণ, তাঁর মতে, ‘বঙ্কিমই মাতৃপূজামন্ত্রে জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তুলে চোখ খুলে দিয়েছেন।’
(৩)
ঘটনাচক্রে, এই জাতীয়তাবাদের দর্শনকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথের ধারণার সঙ্গে চিত্তরঞ্জনের ভাবনার পার্থক্য রয়েছে। ১৩২৮ সনে বিশ্বভারতীতে পৌষ-উৎসবের বক্তৃতায় ‘স্বদেশী জাতীয়তাবাদের’ বিরোধিতাই শোনা গেল রবীন্দ্রনাথের মুখে। কারণ, রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, ‘স্বদেশীর আত্মিক দৈন্য বাঙালিকে বহির্বিমুখ করে তুলতে বসেছে।’ ওই একই সময়ে কংগ্রেসের আমদাবাদ অধিবেশনে কারাগারে বন্দি চিত্তরঞ্জনের লিখিত বক্তৃতা পড়া হল। দেখা গেল, স্পষ্ট ভাবেই রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা রয়েছে। মূলত দু’টি বিষয় উল্লেখ করে এই বিরোধিতা। চিত্তরঞ্জনের মতে— প্রথমত, ‘আমাদের নিজেদের একটি বাড়ি থাকা দরকার, তার পরেই অতিথিকে গ্রহণ করা সম্ভব।’ দ্বিতীয়ত, ‘পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে গ্রহণের পূর্বে ভারত সংস্কৃতির আত্ম-আবিষ্কার জরুরি।’ হয়তো দেশীয় রাজনীতির বাধ্যবাধ্যকতার জন্যই এই বিরোধিতা করাটা চিত্তরঞ্জনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই চিত্তরঞ্জনই আবার দর্শনগত ভাবে ইউরোপের নানা প্রান্তের উদাহরণ দিয়ে স্বদেশী জাতীয়তাবাদের উগ্ররূপটির বিরোধিতাও করেছেন (গয়া কংগ্রেস, ১৯২২)। পরে এ-ও বলেন, ‘জাতীয়তাবাদকে চরমে নিয়ে গেলে যে বাড়াবাড়ি ঘটে, তারই পরিণাম’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
চিত্তরঞ্জনের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক জীবনটি অবশ্য সংক্ষিপ্ত (১৯১৭-১৯২৫)। কিন্তু এই পর্বের মধ্যেই তিনি বাংলা তথা ভারতবর্ষের অবিসংবাদী নেতা হয়ে ওঠেন। ওই সময়পর্বে বাংলায় ছ’বার প্রাদেশিক সম্মেলন, এগারো বার কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দেন চিত্তরঞ্জন। ভাবনীপুর প্রাদেশিক সম্মেলনে চাষাবাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিলেন। কিন্তু বিলিতি শিল্পায়নের ধারণার বিরোধিতা করলেন। আসলে চিত্তরঞ্জনের বিশ্বাস ছিল, জাতীয় স্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দিতেই হবে। সঙ্গে এ-ও কিন্তু মনে করেন, এমন এক যুগ কখনও আসবে, যখন ‘বিশ্বমণ্ডলের জন্য রাজারাজড়াদের মতই নেশন ও জাতীয়তারও আর কোনও প্রয়োজন থাকবে না।’
বোম্বাই কংগ্রেস অধিবেশনের সময়ে রাজনীতি সম্পর্কে চিত্তরঞ্জন কতটা নিষ্ঠাবান, তা বোঝা যায়। ওই সময়ে তাঁর সঙ্গে রয়েছে ছেলে চিররঞ্জন। সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। কিন্তু চিত্তরঞ্জন সব দেখেও না দেখে থাকছেন। মতিলাল নেহরু পর্যন্ত বললেন, ‘ভোম্বলের (চিররঞ্জন) জন্য আমরা অস্থির, কিন্তু চিত্ত বেশ বুদ্ধদেব হয়ে বসে আছে—’ এ সব শুনে চিত্তরঞ্জনের বক্তব্য, ‘বাংলার প্রতিনিধির দায়িত্ব নিয়ে এসেছি, নিজের স্বার্থের জন্য সে-কথা ভোলা উচিত হত না।’
এই স্বার্থহীনতার জন্যই দেশবন্ধু পারেন, অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে। এই সময়পর্বেই ঘটল এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আইসিএস ত্যাগ করে সুভাষচন্দ্র বসু এলেন চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে। সুভাষচন্দ্র ‘এক জন নেতাকে খুঁজে পেলেন’ এবং ঠিক করলেন ‘এঁরই পদানুসারী হবেন’। ১৯২১-এর ১০ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন ও সুভাষচন্দ্রকে গ্রেফতার করল ব্রিটিশ পুলিশ। আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন চিত্তরঞ্জনের ছেলে ও স্ত্রী।
চিত্তরঞ্জনের গ্রেফতারের পরের পর্বে ঘটল একটি মজার ঘটনা। রসা রোডের বাড়িতে তখন বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন তিনি। দরজায় টোকা, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের। জেলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কমিশনারের কাছে চিত্তরঞ্জন পরোয়ানা আছে কি না জানতে চাইলেন। কমিশনার জানালেন, তা নেই। তাঁকে ফৌজদারি আইনের ৫৪ নম্বর ধারায় ধরা হয়েছে। শুনে চিত্তরঞ্জন স্মিত হেসে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘আমি প্র্যাকটিস ছাড়ার পরে আইনের কোনও নতুন ধারা কি সংযোজিত হয়েছে? কারণ ওই ধারাটি ভলান্টিয়ার-আইনের জন্য নয়।’ মানে-মানে কেটে পড়লেন কমিশনার। জেল-পর্বে এ সব ঠাট্টা-তামাশা প্রায়ই করতেন চিত্তরঞ্জন। সেই সময়ে স্বরাজ্য-ভাণ্ডারের জন্য অর্থ-সামগ্রী সংগ্রহ চলছে। এক দিনের কথোপকথন—
চিত্তরঞ্জন: ওহে সুভাষ, এখান থেকে বেরিয়েই তোমার একটা বিয়ে দিতে হবে।
সুভাষচন্দ্র: আজ্ঞে, আমি কী অপরাধ করেছি?
চিত্তরঞ্জন: অপরাধ কিছু নয়। কিন্তু স্বরাজ্য-ভাণ্ডারের জন্য টাকা দরকার। তা তোমার জন্য নিশ্চয়ই লাখ টাকা পাওয়া যাবে, কী বলো?
রক্তিম মুখে সেখান থেকে সরে গেলেন প্রিয় সুভাষ।
তবে এই পর্বে চৌরিচৌরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাঁধীজির আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলেন চিত্তরঞ্জন।
কিছু দিন পরে দেশবন্ধু স্বরাজ দল গঠন করলেন। ১৯২৩-এর বঙ্গীয় আইনসভার ভোটে স্বরাজীরা দারুণ ফল করল। দু’বার মন্ত্রিসভা গঠনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেন চিত্তরঞ্জন। পাশাপাশি ইংরেজদের মদতে গড়া ‘ডায়ার্কি’ প্রথার ‘সাম্রাজ্যবাদী দ্বিচারিতা’ প্রকাশ্যে আনলেন। ১৯২৪-এ স্বরাজ দল কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে জিতল। দেশবন্ধু কলকাতার মেয়র। ডেপুটি মেয়র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। শরৎচন্দ্র বসুকে অল্ডারম্যান পদে ও সুভাষচন্দ্রকে চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করলেন চিত্তরঞ্জন।
আসলে সুভাষচন্দ্রের প্রতি চিত্তরঞ্জনের স্নেহের চেয়েও বেশি ছিল বিশ্বাস। তাই বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স জারি করে সুভাষচন্দ্রকে গ্রেফতারের পরে চিত্তরঞ্জন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘সুভাষকে ধরেছে! এ বার গভর্নমেন্টকে কাঁপিয়ে ছাড়ব।’ ইংরেজ সরকার সুভাষচন্দ্রকে বন্দি করে মান্দালয়ে জেলে পাঠাল। সুভাষচন্দ্র-সহ অন্যদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলকাতার টাউন হলের সভা থেকে চিত্তরঞ্জন আহ্বান জানালেন, ‘বাংলার যুবক, তোমাদের হৃদয়ে স্বাধীনতার আগুন জ্বলিয়া উঠুক, স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিতে ছুটিয়া এসো, আত্মবিসর্জন দিতে দ্বিগুণ তেজে জ্বলিয়া ওঠো।’ চিত্তরঞ্জন প্রকাশ্যেই সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন, ‘দেশকে ভালবাসা যদি অপরাধ হয়, তা হলে আমিও অপরাধী। সুভাষচন্দ্র বসু যদি অপরাধী হন, তবে আমিও অপরাধী।’ এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহে চিত্তরঞ্জন ও বাংলার পাশে এসে দাঁড়ালেন খোদ গাঁধীজি।
(৪)
এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে যেন অদেখা থেকে যায় উদারবাদী চিত্তরঞ্জনের দানশীলতার নানা আখ্যান। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিভেদের ঊর্ধ্বে আখ্যানগুলির অবস্থান।
এই অবস্থানটি অনুভব করেছিলেন তাঁর বাড়ির লোকজনও। বরিশালের কংগ্রেস কর্মী ভেগাই হালদার, জাতিতে নমঃশূদ্র। কলকাতায় এসে তিনি উঠলেন চিত্তরঞ্জনের বাড়িতেই। বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজনের আপত্তিতে ভেগাইয়ের খাওয়াদাওয়ার জন্য রান্নাঘরের পাশে এক জায়গা নির্দিষ্ট হল। কিন্তু এক দিন ভেগাই কাঁদতে-কাঁদতে জানালেন, সেখানে পায়রা, মুরগির উৎপাতে খাওয়া যায় না। সব শুনে চিত্তরঞ্জন স্ত্রীর কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন। বাসন্তীদেবী বললেন, ‘আমি নিজে জাতপাত মানি না। কিন্তু সবার অভিযোগ শুনে আমাকে এ ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’ ওই রাত থেকেই দেখা গেল, ভেগাই চিত্তরঞ্জন ও তাঁর বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে এক আসনে বসে খাওয়াদাওয়া করছেন। একই ভাবে অপর্ণার শ্বশুরবাড়ি বিক্রমপুরের হাঁসড়ায় গিয়ে দুর্গাপুজোর দিন গ্রামের সর্ব স্তরের মানুষকে প্রথম বোঝালেন, চণ্ডীমণ্ডপে উঠে সকলের একসঙ্গে অঞ্জলি দেওয়ার অধিকারের কথা।
আসলে চিত্তরঞ্জনের বিশ্বাস ছিল মানুষে। এই বিশ্বাসের কারণেই সেন্ট্রাল জেলে থাকাকালীন চিত্তরঞ্জনের ঘনিষ্ঠ হয় মথুর নামে এক কুখ্যাত ডাকাত। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে মথুর হাজির দেশবন্ধু নিবাসে। কালক্রমে ‘বাবা’র (চিত্তরঞ্জন) প্রতি এক অদ্ভুত অধিকারবোধ জন্মাল মথুরের। বেলা ১১টার পরে কেউ চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে এলেই, মথুর বারবার এসে মনে করিয়ে দিয়ে যায়, ‘বাবা, জল ঠান্ডা হয়ে যায়।’ এ হেন মথুর অবশ্য এক দিন বাড়ি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। খোঁজ পাওয়া গেল না বাড়ির রুপোর বাসনপত্রগুলিরও। তবে মথুরই যে তা নিয়েছে, এটা বিশ্বাস করতেন না চিত্তরঞ্জন।
যদি নিয়েও থাকে, তা হলেও সে সব হয়তো দান হিসেবেই ধরেছেন চিত্তরঞ্জন। ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা চলছে তখন। গোয়ালন্দ স্টিমারের ফার্স্ট ক্লাসে বসে আছেন চিত্তরঞ্জন। হঠাৎ মলিনবেশ এক ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়ালেন। চিত্তরঞ্জন পুরনো সহপাঠীকে চিনতে পারলেন। মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ওই অবস্থা হয়েছে সহপাঠীর। মুহূর্তে সঙ্গে থাকা তিন হাজার টাকার অর্ধেকটাই দিয়ে দিলেন চিত্তরঞ্জন। আবার এক দিন শুনলেন, ভবানীপুরে পূর্ণ হালদারের বাড়ি নিলামের উপক্রম হয়েছে। ছ’হাজার টাকা দরকার। কালবিলম্ব না করে গোটা টাকাটাই চিত্তরঞ্জন দিয়ে দিলেন। একদা চিত্তরঞ্জনের গৃহশিক্ষক ছিলেন পূর্ণবাবু। তিনি ছাত্রের কাছে ‘ঋণ’ হিসেবে টাকা নেওয়ার কথা বলতেই চিত্তরঞ্জন বললেন, ‘মাস্টারমশাই, ও-কথা তুলবেন না ওতে আমার পাপ হবে। পিতৃঋণের মতো গুরুঋণও তো একটা আছে।’
ঋণ আমাদের। আমাদের বিদ্যাচর্চারও। গল্পটা শুনিয়েছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। সাহিত্য পরিষদে এক দিন তারাপ্রসন্ন কাব্যরত্ন শাস্ত্রী মহাশয়কে বললেন, ‘দাশ মহাশয় তো সর্বস্ব দান করিয়ে ফেলিয়াছেন। কিন্তু তাঁহার অনেক বাংলা পুঁথি আছে।’ হরপ্রসাদ মনে করলেন, কোনও মানুষ সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু শৌখিন জিনিস ছাড়াটা বোধহয় সহজ নয়। তবুও নিতান্ত সঙ্কোচের সঙ্গে হরপ্রসাদ দেখা করলেন চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে। পরবর্তী কথোপকথন এ রূপ—
হরপ্রসাদ: আমি সাহিত্য পরিষদের দূত হয়ে এসেছি।
চিত্তরঞ্জন: আমার তো এখন আর কিছুই দেওয়ার মতো নেই যে, সাহিত্য পরিষদের উপকারে আসব।
হরপ্রসাদ: আপনি যে বহু যত্ন করে বাংলা পুঁথি সংগ্রহ করেছেন, সেগুলির কী ব্যবস্থা করবেন?
কালবিলম্ব না করে চিত্তরঞ্জন তাঁর পুঁথির আলমারির চাবি তুলে দিলেন হরপ্রসাদকে। পরিষদের খাতায় এটি ‘চিত্তরঞ্জনের দান’ হিসেবে রয়ে গেল। চিত্তরঞ্জনের দান তো বাংলার সর্বত্র, নিজের ভদ্রাসনটি পর্যন্ত জাতির সেবায় রেখে গেলেন।
(৫)
১৯২৫-এর ১৬ জুন। দার্জিলিংয়ে, কিছু দিন জ্বরভোগের পরে আচমকা প্রয়াত হলেন চিত্তরঞ্জন। দেশ-বিদেশের সঙ্গে মান্দালয় জেলেও পৌঁছল এই সংবাদ। ‘শোকে স্তব্ধ হয়ে গেলেন’ সুভাষচন্দ্র। পূর্ববঙ্গে সফররত গাঁধীজি সব কাজ ফেলে চলে এলেন কলকাতায়। দার্জিলিং মেলে করে চিত্তরঞ্জনের দেহ আসছে কলকাতায়। খবর পেয়েই অগণিত জনতা বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। ১৮ তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখল, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মহাপ্রয়াণ— বাঙ্গালার শিরে বজ্রাঘাত: দেশের সর্ব্বত্র শোকের বন্যা।’ দেশ কার্যত স্তব্ধই হয়ে গেল ওই সময়ে। মেল পৌঁছল শিয়ালদহ স্টেশনে। প্রিয় নেতাকে অভিবাদন জানাতে ‘বন্দেমাতরম্’ ধ্বনি চতুর্দিকে। ধীর কণ্ঠে জনতাকে শান্ত হতে বললেন মহাত্মা।
পরের দিন আনন্দবাজার ওই শোকযাত্রার বর্ণনা দিয়ে লিখল, ‘শিয়ালদহ ষ্টেশনে জনসমুদ্র— দুই লক্ষ লোকের শবানুগমন। ধনী, দরিদ্র, উচ্চনীচের সমস্বরে আর্ত্তনাদ।... কেওড়াতলা শ্মশান-ঘাটে সব শেষ— তার পর?’ এই জিজ্ঞাসা চিহ্নটিই যেন বুঝিয়ে দিল বাঙালি হৃদয়ের শূন্যতার কথা।
ঋণ: ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন’: হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত (অবতরণিকা, বারিদবরণ ঘোষ, ‘পারুল’), ‘মানুষ চিত্তরঞ্জন’: অপর্ণা দেবী (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি), ‘উদার জাতীয়তাবাদের দিশারি’: সুগত বসু, ‘স্বজাতি স্বদেশের খোঁজে’: সেমন্তী ঘোষ (দে’জ), ‘সিআর দাশ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট’: দিলীপকুমার চ্যাটার্জি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy