রঙিন: ‘১৯-এ ৮৯’ প্রদর্শনীর একটি কাজ
নির্দিষ্ট ভাবে দল গঠন করেননি, তবে ১৯৮৯ সালে উত্তীর্ণ সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের শিক্ষা-সমাপ্তির পঁচিশ বছর উপলক্ষে প্রদর্শনী করলেন। ‘১৯-এ ৮৯’ নামে সদ্য সমাপ্ত প্রদর্শনীটি এই নিয়ে তৃতীয় প্রয়াস। তিন বারই সদস্য এবং শিল্পীরা বদল হয়েছেন। সে দিক থেকে ধারাবাহিকতা নেই। অনেকের কাজেই দুর্বলতা প্রকট। অনুশীলনে না থাকাটা অনুভূত হয়েছে। এ বারের ১৮ জনের দলে কোনও ভাস্কর নেই। তাড়াহুড়ো ও দ্রুততায় চর্চাহীনতার প্রকাশ লক্ষ করা গিয়েছে। যদিও কারও কারও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তাঁদের কাজ সে ইঙ্গিত দিয়েছে। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে প্রদর্শনীটি শেষ হল ক্যাটালগে মুদ্রিত সাত জনের কাজের ছবি ছাড়াই!
অনেক রকম ফুলের গুচ্ছ নিয়ে কাগজে ও জলরঙে চমৎকার কাজ করেছেন গৌরী ভক্ত। রঙের স্বচ্ছতা ও টেকনিকের গুণে সতেজ পুষ্প-সমাহার চোখের পক্ষে দারুণ স্নিগ্ধ ও আরামদায়ক। নিয়মিত অনুশীলন টের পাওয়া যায়। কাচের জারে রাখা ওঁর স্টিল লাইফটি অসামান্য।
ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে এক সময় মনকাড়া নিসর্গ আঁকতেন তাপস ঘোষাল। বোধও ছিল প্রখর, বিশেষত রং ও স্টাইলাইজ়েশন। এখানে কেন যে জন্তু নিয়ে কিছু দায়সারা কাজ করলেন, বোঝা গেল না। সম্ভাবনাময় অধ্যায়টুকু সরে গিয়ে এত শিশুসুলভ হল কেন?
আধুনিকতাকে ব্যবহার করার কায়দা জানতে হয়, কোনওমতে কাজ করলেই হয় না। অমিত লাহার কাজ যদিও তেমনই। একই ভাবে কিছু রং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে জলরঙে কোনও বাহাদুরিই দেখাতে পারেননি সুতীর্থ দাস। অরূপ ঘোষের কাজও অত্যন্ত দুর্বল। তেমনই দুর্বল রচনা সুজিত চৌধুরীর নিসর্গ, বেশ কিছুটা দায়সারা, এতেও অনুশীলনের অভাব চোখে পড়ে।
গৌতম শর্মাও সিদ্ধহস্ত ছিলেন নিসর্গে, তাঁর রঙের বিন্যাস ও স্টাইল ছিল দেখার মতো। কিন্তু এক ঝটকায় সেখান থেকে সরে এসে লোকশিল্পের দিকে ঝুঁকলেন কেন? তবে প্রদর্শনীতে তাঁর কাজ ছিল যথেষ্টই মনোগ্রাহী। অ্যাক্রিলিক ও গুঁড়ো রঙের মাধ্যমে ক্যানভাসে লোকশিল্পের আঙ্গিককে আত্মস্থ করে, তাতে নিজস্ব চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ‘নেচার মাদার’ ও ‘বিশল্যকরণী’ কাজ দু’টিতে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। তাঁর স্টাইলাইজ়েশনে এখানে এক অনুপুঙ্খময়তা ও স্তিমিত বর্ণের ডিজ়াইন তৈরি হয়েছে, যা একই সঙ্গে লৌকিক ভাবনাকে কিছুটা আধুনিকীকরণের মধ্যে এনে, পটের মাঝখানের কম্পোজ়িশনে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। রং লাগানোর মুনশিয়ানা ও ব্রাশিং চমৎকার। ছবিই বলে দেয় গৌতম সারাক্ষণই চিত্রের অনুশীলনে ব্রতী থাকেন।
শিল্পিতা সেন পেপার কাটিং, কাঠি, সুতো, সামান্য ওয়াশ, জাল, রং ইত্যাদি ব্যবহার করেও নতুন কিছু উদ্ভাবন করেননি। এমনকি গ্রাফিক কোয়ালিটির সম্ভাবনা থাকলেও তাকে বুঝতেই পারেননি।
ছবি তৈরির প্রেক্ষাপটকে বুঝতে হবে। সাদা-কালোর রচনা কোনও কোনও সময় অনবদ্য আবহ তৈরি করে। স্পেসকে বুঝলেও সেই সঙ্গে রচনা ও অ্যারেঞ্জমেন্টকেও জানতে হয়। চারকোল মাধ্যমে করা গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের কাজগুলি যেন হুবহু কোনও গল্প-উপন্যাসের সচিত্রকরণ। শিবশঙ্কর মানিকও তেমন দাগ কাটতে পারেননি। যদিও একটু
ভেবে রচনায় ভারসাম্য ও আয়োজনের পরিকল্পনাকে রূপ দেওয়া যেত। তা তিনি পারেননি। সুব্রত করের কাজ আরও দুর্বল। বরুণ দেবের মিক্স-মিডিয়াগুলি ড্রয়িং-নির্ভর। দ্রুতগতি রেখাঙ্কনেরও একটি পরিমিতি ও পরিণত রূপ থাকে। এখানে কোনও রকমে রেখাঙ্কনের নীরব বিচ্ছিন্নতাটিই
যেন প্রকাশিত।
অনেক দিন পরে দেখা গেল অভিশঙ্কর মিত্র তাঁর গণেশ পাইনীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করলেন। টেম্পারায় লোকায়ত প্রভাবকে দক্ষতার সঙ্গে আত্মস্থ করে, ততোধিক দক্ষতায় বর্ণ সমাহার, মিশ্রণ, নির্বাচন ও স্টাইলকে সন্নিবেশিত করেছেন। এই লৌকিক বিন্যাসের কাব্যময়তা আমাদের এক গভীর দর্শনের দিকে নিয়ে যায়।
সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাজ যথেষ্ট সম্ভাবনাময়তার দিকনির্দেশ করে। প্রতীকী রচনায় ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের পটভূমিতে উড়ন্ত সারস ও অন্যটিতে গাছপালার ছন্দোময় বিস্তার, শাখা-প্রশাখার উজ্জীবিত প্রতিফলন কিংবা পাখিদের সমাবেশ— সব মিলিয়ে অ্যাক্রিলিকে একটি নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছেন। অত্যন্ত ভাল কাজ। বিশেষত রং, তার ব্যবহার ও সমগ্র আবহ তৈরি করা খুবই সংবেদনশীল। প্রদর্শনীতে সজলকান্তি মিত্র, গৌতম সাহা, বিশ্বরূপ দাস, মিঠু সাহা প্রমুখ শিল্পীরাও অংশ নিয়েছিলেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy