Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

হলিউডে ঋদ্ধি

যে ছবিতে তিনি, তাই-ই কিনা অস্কারের তালিকায়! কাজের অভিজ্ঞতাই আলাদা। বললেন ঋদ্ধি সেন। শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তীসকাল সকাল ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটোনে। অস্ট্রেলিয়া থেকে বাবার (কৌশিক সেন) এক বন্ধুর ফোন, ‘‘ট্রেলারটা দেখেছিস?’’ জিজ্ঞেস করলাম, কোন ট্রেলার? আরও উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘‘লায়ন’‌য়ের। শিগগির দ্যাখ। তুই আছিস ট্রেলরে।’’

‘পার্চড’‌য়ের সেটে রাসেল কারপেন্টারের সঙ্গে।

‘পার্চড’‌য়ের সেটে রাসেল কারপেন্টারের সঙ্গে।

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সকাল সকাল ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটোনে। অস্ট্রেলিয়া থেকে বাবার (কৌশিক সেন) এক বন্ধুর ফোন, ‘‘ট্রেলারটা দেখেছিস?’’

জিজ্ঞেস করলাম, কোন ট্রেলার? আরও উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘‘লায়ন’‌য়ের। শিগগির দ্যাখ। তুই আছিস ট্রেলরে।’’

ইউটিউবে দেখার পরও নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ভেবেছিলাম, ছোট রোল... টাইটেল কার্ডেও হয়তো নাম থাকবে না।

ততক্ষণে বন্ধুদের ফোন আর হোয়াটসঅ্যাপ আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ আমাকে ‘ট্যাগ’ করে ফেসবুকে ‘লায়ন’‌য়ের ট্রেলরটা শেয়ার করেছে।

ভাবা যায়, হলিউড ছবির ট্রেলরে আমি! সেই ছবি আবার সেরা ছবি সহ সাত-সাতটা অস্কার নমিনেশনও পেল। আসলে হলিউড ছোট রোল-বড় রোল আলাদা করে দেখে না— টের পেয়েছিলাম অডিশনের দিনই।

স্যরি, অডিশন ভুল বললাম। ভেবেছিলাম অডিশন। গিয়ে দেখি, ছবির পরিচালক গার্থ ডেভিস জনাকয়েক বাচ্চার সঙ্গে আমাকে বসিয়ে দিলেন। ওটাই ‘অডিশন’। কেমন করে বাচ্চাদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করি আমি, সেটা দেখতে। কারণ ছবিতে আমিই তো বাচ্চা ছেলে সারুকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাই।

সেটে পৌঁছতেই গার্থ আমার কানে হেডফোন লাগিয়ে দিলেন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শোনানোর জন্য। কেউ ডায়লগ নিয়ে এলেন না, স্ক্রিপ্টও না, স্বয়ং গার্থ এসে আমার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। আমার কাছেই জানতে চাইলেন, চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড কী হওয়া উচিত। রেস্তোরাঁয় বসব, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু কী খাব? কফি না স্যুপ? সেটাও আমি বলব। অভিনেতাকে এতটাই স্বাধীনতা দেয় হলিউড!

‘লায়ন’‌য়ের ট্রেলরে ঋদ্ধি

মজার অভিজ্ঞতাও কম হয়নি। দেব পাটিলের ছোটবেলার চরিত্রটা যে করেছে, সেই সানি পাওয়ার বেশ দুষ্টু। চরিত্রের প্রয়োজনে ওকে উইগ পরানো হয়েছে। বারবার সবাই বলছে, উইগ-এ যেন হাত না দেয়। তো শট শুরু হয়েছে, সিনটা ছিল— এক ফোটোগ্রাফার ওর মাথায় হাত দিয়ে ছবি তুলবে। ক্যামেরা রোল করছে, ফোটোগ্রাফার যেই ওর মাথায় হাত দিয়েছে, হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে উঠল, ‘‘আব্বে, ইয়ে নকলি হ্যায়, ইসে ছুঁ মত।’’ হাসির রোল সেট জুড়ে।

অন্য ঘটনাটা আমার সঙ্গে। ইউনিটে একটা টিম থাকে যারা অভিনেতাদের নিরাপত্তা দেখাশোনা করে। সিনটা ছিল, পার্ক স্ট্রিট আর রাসেল স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে আমি রাস্তা পার হব। শট ‘ডান’। এক সহকারী পরিচালক আমার হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিলেন। ব্যস, সেফটি ডিরেক্টরের সে কী চিৎকার! মুম্বইয়ের সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে দিলেন এক ধমক, ‘‘হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মাই অ্যাক্টর। আমি তোমার নামে ডিরেক্টরের কাছে কমপ্লেন করব।’’

আমি পুরো বেয়াকুব! কলকাতায় যে আমাকে হাত ধরে রাস্তা পার হতে হবে, সেটা তো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

অবশ্য স্বপ্নেও না ভাবার একটা জিনিস বাস্তব হয়েছিল তার ঠিক এক বছর আগে। রাজস্থানে শ্যুট করতে গিয়েছি লীনা যাদবের ‘পার্চড’। আর সে ছবির সিনেমাটোগ্রাফার স্বয়ং রাসেল কারপেন্টার। আজ্ঞে হ্যাঁ, যিনি ‘টাইটানিক’য়ের সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন। অস্কার পাওয়া ক্যামেরাম্যান শ্যুট করেছেন আমাকে— ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়!

ওখানেও দেখেছিলাম, অভিনেতাদের স্বাধীনতা দেওয়া হয় কতখানি। কোথায় আমাদের বলবেন কী করব, কোন লাইটটা নেব— তা না, আমাদেরকেই জিজ্ঞেস করছেন আমরা কী ভাবে অভিনয় করব! উনি ফ্রেম সাজাবেন সেই মতো। মাতালের চরিত্রে অভিনয় দেখে আমার নাম দিয়েছিলেন ‘রেজিং বুল’।

শ্যুটিং শেষের পর অনেক গল্প হতো রাসেল কারপেন্টারের সঙ্গে। বলিউডে আইটেম সংয়ের কনসেপ্ট শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, শুধু নাচানাচির জন্য একটা গান হতে পারে। আর একদিন রাস্তায় এক তামিল ছবির পোস্টারে একই ক্রাউড ফোটোশপে বারবার ব্যবহার করা দেখে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘‘এমনটাও হয়!’’

আমার নিজের যেহেতু ক্যামেরার পিছনের কাজেও বেশ আগ্রহ, তাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনতাম ‘টাইটানিক’, ‘চার্লিজ এঞ্জেলস’, ‘অ্যান্ট-ম্যান’ বা ‘জোবস’য়ের শ্যুটিংয়ের গল্প। ওঁর অভিজ্ঞতার তো শেষ নেই। ‘পার্চড’‌য়ের সেটেই প্রথম দেখেছিলাম, আলাদা আলাদা অভিনেতার জন্য আলাদা আলাদা আলোর ব্যবহার।

এই সব গল্প শুনতে শুনতে আমার মাথায় তত দিনে শর্টফিল্ম বানানোর পোকাটা আবার নড়ে উঠছিল। গত বছর জন্মদিনে মা (রেশমি সেন) দিয়েছিল একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা। আর তার কিছু দিন পর বাবা সিঙ্গাপুর থেকে এনে দিল একটা গো-প্রো ক্যামেরা।

ব্যস, আমায় আর পায় কে! স্ক্রিপ্ট লিখছি নবারুণ ভট্টাচার্যের একটা গল্প থেকে। ফাইনান্সারও পেয়ে গেছি। ‘সমান্তরাল’‌য়ের শ্যুটিং শেষ হলেই ভাবছি নিজের শর্ট ফিল্মের শ্যুটিংয়ে নেমে পড়ব।

তবে এর মধ্যেই ‘স্বপ্নসন্ধানী’র পঁচিশ বছর উপলক্ষে একটা ডকুমেন্টারি বানিয়ে ফেলেছি।

অভিনয় তো আছেই, পরিচালনাও না হয় একটু দেখে নিই!

আনাচে কানাচে

১. কথায় কথায় যে ‘ডাব’ হয়ে যায়: ছবির ডাবিং-এ ঋত্বিক চক্রবর্তী

২. বারান্দায় রোদ্দুর: ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনে নতুন ফ্ল্যাটে পার্ণো মিত্র

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

অন্য বিষয়গুলি:

Riddhi Sen Hollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy