এখনকার ছোটরা যেমন স্মার্ট, তেমনই পরিণত। তাই আপনি ছোটবেলায় যে ভাবে বড় হয়েছেন, সেই পন্থা ওদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এটা তথ্য বিস্ফোরণের যুগ। ছোটরা এখন অনেক বেশি জানছে, বুঝছে। যে কারণে ওরা বয়স অনুপাতে বেশি পরিণত। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে পেরেন্টিংও হতে হবে ম্যাচিয়োরড।
আপনার সাত বছরের কন্যা রেগে গেলেই জিনিস ছুড়ে ফেলতে থাকে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, আপনারা কেউ রেগে গেলে ঠিক এই কাজটাই করেন। বাবা-মায়ের আচরণে উগ্রতা দেখলে, শিশু সেটা স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। ‘ও কিছু শুনতে চায় না’, ‘ভীষণ অধৈর্য’— এই অভিযোগ সব বাবা-মায়েরই। আপনি কী ভাবে সন্তানকে সামলাচ্ছেন, তার ভিত্তিতেই ওর স্বভাব গড়ে উঠছে। ধৈর্য ধরে শিশুর সব কথা শুনতে হবে। ধমকে নয় বোঝাতে হবে যুক্তি দিয়ে। ওদের বায়নাও খণ্ডন করবেন যুক্তির মাধ্যমে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বলছিলেন, ‘‘বাবা-মায়েরা মনে করেন, ধমকালে বা মারলে কাজ হয়ে যাবে। বোঝাতে যাব কেন? কিন্তু যুক্তি দিয়ে বোঝালে সেই সমাধান চিরস্থায়ী হয়।’’
আধুনিক পেরেন্টিংয়ের গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পায়েল ঘোষ বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপরে জোর দিলেন—
শাস্তি নয়, সংশোধন
শাস্তির ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সন্তান ভুল করলে তাকে আমরা শাস্তি দেব না, সংশোধন করব। আর গায়ে হাত তোলা একেবারেই চলবে না। আপনি ওকে মারলে, ও ধরে নেবে মারধর করাটা ভুল কিছু নয়। এর পর ও বন্ধুদের মারবে। মারধর থেকে ছোটদের মধ্যে উগ্র ভাব, হিংসা তৈরি হয়। ভুল করলে ওকে শুধরে দিন। কঠোর গলায় চোখের দৃষ্টিতে বুঝিয়ে দিন আপত্তির কারণ।
আচরণে সংযত হন
বাবা-মায়ের মধ্যে অনেক সমস্যাই হয়। কিন্তু নিউক্লিয়ার পরিবারে সব কিছু আড়ালে রাখা যায় না। তাই ওর সামনে কখনও দু’জনে বচসায় জড়িয়ে পড়লেও পরে তা শুধরে নিন। বাবা-মায়ের মধ্যে সমস্যা দেখলে শিশুরা অসহায় বোধ করে। ওকে সোজাসুজি বলুন যে, আপনাদের মধ্যে একটা রাগারাগি হয়েছিল কিন্তু তা ঠিক হয়ে গিয়েছে। খেয়াল রাখবেন, দাম্পত্য হিংসার সাক্ষী যেন শিশুটিকে কখনও না হতে হয়।
দাম্পত্যে চ্যালেঞ্জ
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স হলেও সন্তান প্রতিপালন যৌথ কর্তব্য। বাবা-মায়ের মধ্যে বিরোধ, দ্বন্দ্বে ওরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারও মনে এতটাই গভীর ছাপ ফেলে যে, তার থেকে বেরোতে অনেকটা সময় লেগে যায়। ছোটদের সামনে একে অপরকে দোষারোপ করবেন না। আপনারা আলাদা থাকলেও ওর প্রয়োজনে দু’জনেই আছেন, সেটা ওকে বোঝাতে হবে। এটাই পরিণত অভিভাবকত্ব।
দায়িত্ববোধ গড়ে তুলুন
পায়েল ঘোষ বলছিলেন, ‘‘আমরা বাবা-মায়েরা সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। সেটা করতে গিয়ে জোরাজুরি করে ফেলি।’’ ধরা যাক, সন্তানকে একটা কাজ করতে বলছেন কিন্তু সে তাতে আমল দিচ্ছে না। আপনি বারবার বলার পরেও কাজ না হওয়ায় বিরক্তি-রাগ প্রকাশ করে ফেললেন। এটা কিন্তু ম্যাচিয়োরড পেরেন্টিং নয়। বারবার কেন বলবেন? চোখের দিকে তাকিয়ে একবার বলুন, তাতেই হবে। এই প্রক্রিয়াটা ছোট বয়স থেকে অভ্যেস করালে সমস্যা হবে না।
জোর না খাটিয়ে ওদের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তুলুন। সন্তানের বয়স দশ-বারো বছর হলে ওর কাজের দায়িত্ব ওকে নেওয়ার অভ্যেস করতে দিন। ধরুন, রোজ সকালে ওকে ডেকে-ডেকে অনলাইন ক্লাস করাতে হয়। ডাকা বন্ধ করে দিন। ক্লাস করবে না একদিন। ওই দিন একটু কঠোর ব্যবহার করুন ওর সঙ্গে। টিভি দেখতে দেবেন না। স্পষ্ট করে বলুন, সকালে ক্লাস যখন করেনি, তখন অন্য কিছুও করা চলবে না। আবার বলতে পারেন, ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান থাকলেও ক্লাস না করায় তা বাতিল। সন্তান জানে, মা দায়িত্ব নিয়ে ওকে তুলে রেডি করে দেবে। যে দিন বুঝবে ক্লাসের জন্য তৈরি হওয়ার দায়িত্বটা ওর, সে দিন থেকে নিজেই তা করবে।
অন্যের সঙ্গে তুলনা নয়
নিজের প্রত্যাশা ছেলেমেয়ের উপরে চাপিয়ে দেবেন না। আপনার সন্তান ওর বন্ধুর মতো ভাল ছবি না-ও আঁকতে পারে। ওর আগ্রহ বুঝে সেই পথে চালিত করুন। অন্য বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করবেন না। কেন বন্ধুর চেয়ে কম নম্বর পেয়েছে, এই প্রশ্ন আপনি যদি শিশুটিকে করেন, ও কিন্তু দু’দিন বাদে এসে বলতেই পারে, ‘আমার বন্ধু বিদেশ বেড়াতে গিয়েছে, আমাকেও নিয়ে চলো।’
টিনএজ খুব স্পর্শকাতর পর্ব। এই সময়ে আচরণগত পরিবর্তন আসে। মুড সুয়িং হয়। এগুলো পজ়িটিভলি সামলাতে হবে। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা মুখের উপরে অনেক কথা বলে দেয়— ‘কী করবে করে নাও’, ‘আমার যেটা ইচ্ছে, সেটাই করব’... রাগারাগি করে এগুলো সামলানো যায় না। সন্তানের আচরণে যে আপনার খারাপ লেগেছে, সেটা ওকে বুঝিয়ে দিন। ওর খারাপ আচরণের উৎস খোঁজার চেষ্টা করুন।
নিজেদের আচরণের এই ছোটখাটো রদবদলই সন্তানপালনে বড় ভূমিকা নেবে। শেয়ারিং, সকলের সঙ্গে মেলামেশা... ছোট থেকেই শেখান। গুড-ব্যাড টাচ শেখানোও পেরেন্টিংয়ে জরুরি। ছোটদের অনেক বিষয়ে কৌতূহল থাকে, সত্যিটা ওদের মতো করে বুঝিয়ে দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy