ফরাসি রসায়নবিদ রেনে মরিস গ্যাটফসি একদিন তাঁর ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় ব্যস্ত। হঠাৎ একটি রাসায়নিকের জার উল্টে পড়ে তাঁর হাতে। অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় হাতের চামড়া পুড়তে শুরু করে। কী করবেন, বুঝতে না পেরে পাশের একটি জারে রাখা জল ঢেলে দেন হাতের উপরে। হাতের চামড়া ধীরে ধীরে ঠিক হতে শুরু করে। পরে খেয়াল করেন যে, তিনি জল ভেবে যেটি হাতে ঢেলেছিলেন, সেটি আসলে ল্যাভেন্ডার অয়েল। ত্বকের যত্নে বা চিকিৎসায় এতটাই কার্যকর তেল।
ত্বক হোক বা চুল, তেলের ভেষজ গুণের জন্য রূপচর্চায় এর ব্যবহার বহু কালের। রানি ক্লিয়োপেট্রার যেমন স্নানের সময়ে দুধের সঙ্গে অলিভ অয়েল মেশানোর কাহিনি শোনা যায়, তেমনই মোগল সম্রাজ্ঞীদের হামামের জলে নাকি মেশানো হত গোলাপ তেল। তেল মেখে চুল বাঁধার রেওয়াজও সেই অতীত থেকে। তেলে যেমন ত্বক কোমল থাকে, তেমনই গভীর ভাবে ময়শ্চারাইজ় করায় ত্বকে বলিরেখাও পড়ে না সহজে। তবে মুখের ত্বক, শরীরের ত্বক ও মাথার স্ক্যাল্পে একই তেল সমান কার্যকর নয়। ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ীও পাল্টে যাবে তেলের ধরন।
অয়েল মাসাজ কেন জরুরি?
তেল মাখা কেন জরুরি, তা বুঝতে গেলে জানতে হবে তেল কী ভাবে কাজ করে। তেল মাখলেই তা রোমকূপের মধ্যে প্রবেশ করে ত্বকে পুষ্টি জোগায়। আর ত্বকের বাইরে একটা বর্ম তৈরি করে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে, বাইরের আবহাওয়াও তেলের এই বর্ম ভেদ করে ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে না। ফলে চামড়ায় ফাটল ধরে না, টানও পড়ে না। তাই বলিরেখাও পড়ে না। তেলের ভাগও আছে। ভেজিটেবল অয়েল (অলিভ, আমন্ড ইত্যাদি) ও এসেনশিয়াল অয়েল (পাচৌলি, স্যান্ডলউড ইত্যাদি সুগন্ধি তেল)... দু’ধরনের তেলেরই কিন্তু অনেক উপকারিতা। তাই ঘুরিয়েফিরিয়ে দু’ধরনের তেলই রাখতে হবে রূপচর্চায়। ঠিক যেমন সব অসুখের ওষুধ এক নয়, তেমনই ত্বকচর্চায় প্রত্যেকটি তেলের ভূমিকা ও কার্যকারিতা আলাদা।
ভিন্ন ত্বকে ভিন্ন তেল
তৈলাক্ত ত্বকে বেশি তেল মাখবেন না। সে ক্ষেত্রে অ্যালো ভেরা জেলের সঙ্গে যে কোনও এসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিলেই উপকার পাবেন। মুখে মাখার জন্য টি ট্রি অয়েল ও হোহোবা অয়েল খুব কাজে দেয়। স্পর্শকাতর ত্বকেও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিন্তু রুক্ষ ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল মাখতে পারেন মুখে। অলিভ অয়েলের মধ্যে দু’ফোঁটা স্যান্ডলউড অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। সুবাসে ক্লান্তি কাটবে, ত্বকে রেখাপাতও হবে না। হাত ও পায়ের ত্বকও শীতকালে খুব ফেটে যায়। সেখানেও ওষুধ তেল। স্নানের পরে হালকা ভেজা গায়ে তেল মাখবেন।
বডি মাসাজে তেল
শীতকালে গায়ে তেল মাখার চল বেশি। তার কারণ অয়েল মাসাজের সময়ে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। ফলে শরীর গরম থাকে। হাত ও পােয়র ত্বক মসৃণ রাখে। বডিমাসাজের জন্য স্নানের আগে ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার করা যায়। রূপবিশেষজ্ঞ ব্লসম কোচার বললেন, ‘‘মরসুম অনুযায়ী তেল বদলাতে হবে। যেমন নারকেল তেল খুব ঠান্ডা। তাই গরম কালে নারকেল তেল মাখতে পারেন। কিন্তু শীতে বডি মাসাজের জন্য সরষের তেলই ভাল। এই তেল যেমন ত্বকের পুষ্টি জোগায়, সর্দিকাশিও দূরে রাখে। কারণ সরষের তেল বেশ গরম। বেস অয়েল হিসেবে ভেজিটেবল অয়েল রেখে তার মধ্যে সুগন্ধি তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। ক্লান্তি কাটাতে বডি মাসাজ করলে মূল তেলের সঙ্গে নেরোলি অয়েল মিশিয়ে নিন। সারা দিনের কাজের জন্য এনার্জি জোটাতে ল্যাং ল্যাং অয়েল মেশাতে পারেন।’’ গরমে অলিভ অয়েল আর শীতে আমন্ড অয়েলও ভাল।
তেলে চুল তাজা
সারা বছরই চুলে নিয়মিত তেল লাগাতে হবে। রুক্ষ চুলে সপ্তাহে দু’দিন ও স্বাভাবিক চুলে এক দিন তেল মাসাজ করতে হবে। তবে হট অয়েল মাসাজ ত্বক ও চুল... দুইয়ের পক্ষেই বেশি উপকারী। তাই যে কোনও তেল মাখার আগে ঈষদুষ্ণ করে নিলে ভাল। চুলে তেল মাসাজ করা হয়ে গেলে একটা তোয়ালে গরম জলে চুবিয়ে নিংড়ে, তা দিয়ে মাথা ভাল করে ঢেকে বেঁধে নিন। এ ভাবে মিনিট পাঁচেক রাখার পরে তা খুলে দিন। এতে তেল ভাল করে স্ক্যাল্পে বসবে, চুলের গোড়ায় গিয়ে পুষ্টি জোগাবে।
বাড়িতে ভেষজ তেল তৈরি
চুল ভাল রাখার জন্য কয়েকটি তেল তৈরির টিপস দিলেন শেহনাজ হুসেন।
• আমলকী তেল: আমলকী শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। ১০০ মিলিলিটার নারকেল তেলে একমুঠো শুকনো আমলকী গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এই তেল এয়ারটাইট পাত্রে ভরে রোজ রোদে দিতে হবে। দিন পনেরো রোদে রাখলে ভাল তেল তৈরি হয়ে যাবে। চুলের স্বাস্থ্য ফিরবে, উজ্জ্বল হবে।
• ব্রাহ্মী তেল: ৫০০ মিলিলিটার জলে একমুঠো ব্রাহ্মী পাতা দিয়ে ফোটান। জল একদম শুকিয়ে এলে ২৫০ মিলিলিটার নারকেল তেল দিয়ে অপেক্ষা করুন। যখন জল শুকিয়ে তেল পড়ে থাকবে, আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। ডগাফাটা চুলের যত্নে এই তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মাখুন।
• কারিপাতার তেল: চুল পড়া বন্ধ করতে এই তেল কার্যকর। এর জন্য নারকেল তেলের মধ্যে কারিপাতা দিয়ে ফোটান। খানিকক্ষণ পরে দেখবেন, কালো অবশিষ্টাংশ পড়ে রয়েছে। এটাই তুলে চুলের গোড়ায় মাসাজ করুন। এই তেল চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে অব্যর্থ।
তেল মাখার অভ্যেস না থাকলে এই ঠান্ডার মরসুমে শুরু করে দেখুন। ত্বক ও চুলের জেল্লা ফিরবে অচিরেই।
মডেল: সৃজলা গুহ, শ্রীতমা বৈদ্য; ছবি: শুভদীপ সামন্ত, মেকআপ: চয়ন রায় (সৃজলা), সুবীর মণ্ডল (শ্রীতমা), লোকেশন: বিবনি, কসবা
নিউ মার্কেট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy