E-Paper

অবয়বহীন আকৃতি, মলিন বর্ণবিন্যাস

এ যেন সেইরকম শিল্পীদের প্রতিবাদে সরব এক প্রদর্শনী। এখানে যদিও সব কাজ‌ই নতুন ছিল না। বেশ কিছু কাজ সিমা গ্যালারির নিজস্ব সংগ্ৰহশালা থেকে নির্বাচিত।

ছবি সৌজন্য: সিমা গ্যালারি।

ছবি সৌজন্য: সিমা গ্যালারি।

শমিতা বসু

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১০
Share
Save

সম্প্রতি সিমা গ্যালারিতে যে প্রদর্শনীটি দর্শক দেখতে পেলেন, সেটি অন্যান্য প্রদর্শনীর চেয়ে স্বতন্ত্র— নামে এবং আকারে। এটির শিরোনাম হিসেবে কবি টি এস এলিয়টের বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য হলো মেন’-এর দু’টি পঙ্‌ক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘শেপ উইদাউট ফর্ম’-এর বাংলা আমরা করতে পারি ‘অবয়ববিহীন আকৃতি’ এবং ‘শেড উইদাউট কালার’কে বলা যেতে পারে ‘মলিন বর্ণবিন্যাস’।

যুগে যুগে স্বৈরাচারী আচরণে মানুষ অসহায়তায় ভুগেছে। আশাহীনতায় ডুবেছে স্বেচ্ছাচারী মানুষের অত্যাচারে। অব্যক্ত রাগ এবং ভয়ে অমানবিকরণ এবং মনুষ্যত্বচ্যুতি ঘটেছে সমাজের সাধারণ ভাল মানুষদের। তখন লেখক কবি এবং শিল্পীরা মুখর হয়েছেন তাঁদের প্রতিবাদী ভাষায়। সরব হয়েছে শিল্পীর ক্যানভাস, হাতের রং-তুলি এবং কলম।

এ যেন সেইরকম শিল্পীদের প্রতিবাদে সরব এক প্রদর্শনী। এখানে যদিও সব কাজ‌ই নতুন ছিল না। বেশ কিছু কাজ সিমা গ্যালারির নিজস্ব সংগ্ৰহশালা থেকে নির্বাচিত। তাই দর্শকের দেখার সৌভাগ্য হল সোমনাথ হোর, গণেশ পাইন, বিকাশ ভট্টাচার্য, যোগেন চৌধুরীর সঙ্গে সঙ্গে সুষেণ ঘোষ, বিমল কুণ্ডু, অর্পিতা সিংহ, চিত্রভানু মজুমদার, চিন্তন উপাধ্যায়, শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়,জয়া গঙ্গোপাধ্যায় ,সুমন চন্দ্র এবং আরও বহু শিল্পীর কাজ।

বিকাশ ভট্টাচার্যের বিসর্জন ছবিটি ২০০০ সালের। টেম্পেরা এবং তেলরঙে বোর্ডের উপরে করা একটি ট্রিপটিক। এখানে দুর্গা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা নারী-লাঞ্ছনা, নারী-বিসর্জনের করুণ বাজনার শব্দ কানে আসে। বিশাল অনবদ্য এক ছবি।

অ্যাক্রিলিক কালি এবং পেনসিলে করা ডিপটিক টি শিল্পী ইউসুফের ২০০৫ সালের কাজ। ভাঙনের মুখে সমস্ত পৃথিবীতে চলছে তোলপাড়। ইউসুফ অ্যাক্রিলিকের সঙ্গে পেনসিলের ব্যবহারে অপূর্ব টেক্সচার আনতে সফল হয়েছেন ছবিটিতে।

এরপর বলা যায় শিল্পী জয়া গঙ্গোপাধ্যায়ের শিরোনামহীন ছবির কথা ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিকে ২০০৯ সালে করা। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন আশাবাদী নন শিল্পী। একটি বিকলাঙ্গ নারী শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্নভিন্ন করে দেখিয়েছেন। মেয়েটির ওষ্ঠ, যোনি, মেরুদণ্ড সমস্তই যেন একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে ব্যস্ত। সবটাই শিল্পীর ক্যানভাসে কিছুটা যেন নকশা বা ডিজ়াইনের আকার ধারণ করেছে।

চিত্রভানু মজুমদারের শিরোনামহীন কাজটি মিশ্র মাধ্যমে করা। এটি ধর্ষণের ছবি, কিন্তু কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়। শুধুই ধর্ষণের বীভৎসতা খুব স্বল্প রঙে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন শিল্পী। ইচ্ছে করেই হয়তো এর কোনও সময় নির্ধারণ করতে চাননি শিল্পী, কারণ এ ঘটনা কালে কালে সত্যি।

‘ডিপার্চার’ বা ছেড়ে যাওয়া ছবিতে সুধাকর চিপ্পা কাঠে কাজ করেছেন মিশ্র মাধ্যমে। ২০২২ সালে করা এই কাজটিতে স্রোতের মতো মানুষ দলে দলে দেশ ছেড়ে বাসস্থান ত্যাগ করে চলেছে। একদিকে বহুতল বাড়ি, গাড়ি, মোটরবাইকে পুলিশ সার্জেন্ট... ইত্যাদি দেখিয়েছেন। অন্য দিকে আবার দেখা যাচ্ছে, মানুষের দল গ্রাম ত্যাগ করে শহরের দিকে চলেছে জীবিকার আশায়। এই ছবিতে বীভৎসতা নেই। শুধুই আছে এক সুস্থ জীবনযাপনের আশা এবং অভিলাষ।

সুধীর পটবর্ধনের ছবির নাম ‘ফোর পিপল’। চারটি মানুষের ছবি, কাগজে অ্যাক্রিলিকের ড্রয়িং ২০১২ সালে করা। চারজন মানুষ হেঁটে চলেছে। তারা নারী বা পুরুষ হতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকে পরিপূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্নতার প্রতিমূর্তি।

আর্ট কলেজে পড়াকালীন গণেশ পাইন অবন ঠাকুরের ছবির ভক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ছবিও খুব প্রিয় ছিল তাঁর। ডাচ শিল্পী রেমব্রান্টের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন এক সময়ে। বিশেষ করে রেমব্রান্টের আলো-কালোর ব্যবহারে। এখানে যে ছবিটি আমরা দেখতে পাই, সেখানে কৃষ্ণ-সারথিকে দেখিয়েছেন সম্পূর্ণ কালো রঙে। অর্জুন রথে মাথা নিচু করে বসে আছেন। মহাভারতের এই কাহিনি নিয়ে টেম্পেরার কাজ। আলো-কালোর বিন্যাস এবং টেক্সচার সমৃদ্ধ ছবি। টোনাল তারতম্যই কাজটির বিশেষত্ব।

আর এক শিল্পী অর্পিতা সিংহ ষাটের দশকে ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন। ক্রমশ একটি সম্পূর্ণ নিজস্ব ভিসুয়াল মাধ্যম সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাঁর ছবিতে অনেক চিহ্ন, প্রতীক, রেখা আকৃতি এবং রঙের প্রাচুর্য থাকে। এখানে প্রদর্শিত কাজটি ক্যানভাসে তেলরঙের ছবি। ‘উওম্যান চেঞ্জিং ক্লোদস’। অর্ধনগ্ন মাঝবয়সি এক রমণী পোশাক পরিবর্তন করছে। কোঁকড়ানো চামড়া, ভারী শরীর এবং অগোছালো বিছানা ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান নয়। কিন্তু মোটা তেলরঙের এই কাজটি অসামান্য।

সেন্টার অব ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন আর্টের (সিমা) তরফ থেকে এত জন শিল্পীর কাজ একত্রে যত্ন করে তুলে ধরার প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রদর্শনীর মূল বক্তব্য, পৃথিবীর এই প্রগাঢ় অস্থিরতা। একবিংশ শতাব্দীর মানুষ রোগব্যাধি, প্রকৃতির রুদ্ররূপ এবং মানুষের প্রতি মানুষের আচরণে বিপর্যস্ত। তা নিয়েই এই স্বতন্ত্র প্রদর্শনী মন কেড়ে নেয় শিল্পপ্রেমীদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

exhibition CIMA Art Gallery

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।