Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

নিয়মিত কম্পিউটারে কাজ করলে আধ-ঘণ্টা অন্তর চোখকে বিশ্রাম দিন

না হলেই নানা সমস্যা। উপদেশ দিচ্ছেন ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।না হলেই নানা সমস্যা। উপদেশ দিচ্ছেন ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

প্র: কম্পিউটারের সামনে একটানা কাজ। অথচ কিছুক্ষণ পরেই চোখ কড়-কড় করে, কখনও বা লাল হয়ে যায়।

উ: একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে চোখের পাতা পড়ে না। চোখের জল শুকিয়ে যায়। তার জন্য এত সব সমস্যা। বার বার চোখের পাতা ফেললে সমস্যা হবে না।

প্র: কাজের সময় সে কথা মনে থাকবে নাকি?

উ: না হলে তো সমস্যা হবেই। একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের পেশি ক্লান্ত হয়ে যেমন পায়ে ব্যথা হয়, এটাও তেমনই। চোখের পাতা না পড়লে চোখের পেশিও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কাজের ফাঁকে আধ ঘণ্টা অন্তর কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে চোখকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দেবেন। চোখে জলের ঝাপটা দেবেন।

প্র: চোখে জল দিলে জ্বালা করে।

উ: চোখ বন্ধ করে দেবেন। অথবা টিয়ার সাবসিটিউট ড্রপ দেবে। তাতেও কাজ হবে। মোট কথা চোখকে আর্দ্র রাখতে হবে।

প্র: আর মাথা-ব্যথা করলে?

উ: চোখের পাওয়ার বাড়তে পারে। বেশ কিছু দিন এমনটা হলে ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।

প্র: কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের পাওয়ার বাড়বে?

উ: হ্যাঁ। বিশেষ করে ছোটদের। একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ কাছের জিনিস দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধে হয়। তাতে মায়োপিয়া হয়। মানে চোখের মাইনাস পাওয়ারটা বেড়ে যায়। ছোটদের খুব দেখা যায়। একে বলে স্টুডেন্ট মায়োপিয়া।

প্র: কিন্তু কম্পিউটার ছাড়া চলবে কী করে?

উ: নিয়মিত কম্পিউটারে কাজ করলে ছয় মাস অন্তর চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। ছোটদের করতেই হবে। কম্পিউটার এমন ভাবে রাখবেন, যাতে চোখে খুব বেশি চাপ না পড়ে।

প্র: সেটা কী রকম?

উ: আমরা যখন ঘুমোই চোখের পাতা ও মণি দুটোই থাকে নীচের দিকে। মানে ওটাই চোখের বিশ্রাম অবস্থা। তাই কাজ করার সময় চোখকে সেই রকম রাখতে পারলে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে।

এ জন্য কম্পিউটারের স্ক্রিন সব সময় আই লেভেলের নীচে রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে চোখকে ওপরের দিকে দীর্ঘক্ষণ রাখতে না হয়। তা ছাড়া ঘাড়ের জন্যও এটা খুব দরকার।

প্র: ঘাড়েও সমস্যা হবে?

উ: হ্যাঁ। দীর্ঘক্ষণ ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘাড়ে ব্যথা হবে। মোট কথা পশ্চার ঠিক রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, শুয়ে বা ঘাড় কাত করে পড়াশুনো করলে বা টিভি দেখলেও কিন্তু চোখে চাপ পড়বে। তার থেকে সমস্যা হতে পারে।

প্র: শুয়ে শুয়ে বই পড়তে তো ভালই লাগে, অনেকেই তেমনটা করে থাকে...

উ: বললাম তো। চোখকে এমন ভাবে রাখতে হবে, যেন খামোকা চাপ না পড়ে। চোখ থেকে দেড় ফুট বা ৩৩ সেমি দূরে রাখতে হবে বই। আর ডিফিউস আলোয় পড়তে হবে। কম আলোয় পড়লে চোখে চাপ পড়ে।

প্র: অনেক সময় চোখে ঝাপসা দেখি। তখন কী করব?

উ: চোখে জলের ঝাপটা দেবেন। চোখ ড্রাই হলে এমনটা হতে পারে। কিন্তু যদি এমনটা প্রায়ই হয় তবে একটা চোখ চাপা দিয়ে দেখবেন অন্য চোখ দিয়ে দেখতে অসুবিধে হচ্ছে কি না। সমস্যাটা লেজি আই থেকে হচ্ছে কি না, বুঝে নিতে হবে।

প্র: লেজি আই কী ব্যাপার?

উ: একটা চোখ হয়তো খারাপ হয়েছে, সেটা দিয়ে দেখতে অসুবিধে হচ্ছে। যেহেতু দুটো চোখ দিয়ে দেখি আমরা, একটা চোখ খারাপ হলে সেটা টের পাই না। এই ভাবে অনেক দিন পর্যন্ত ধরা পড়ে না একটা চোখ খারাপ হয়ে আছে। একে বলে লেজি আই। হয়তো কারও রেটিনাতে স্ট্রোক হয়েছে। কিছু বুঝতে পারেনি। বছরখানেক পর অন্য চোখে সমস্যা হওয়ায় ব্যাপারটা ধরা পড়ল। আগে টের না পাওয়ায় সেটার ট্রিটমেন্ট করা হয়নি। যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। গ্লুকোমার ক্ষেত্রেও এমনটা তো প্রায়ই দেখা যায়।

প্র: গ্লুকোমা হলে তো একেবারে শেষ?

উ: প্রথম দিকে ধরা পড়লে অনেকটা ক্ষতি আটকানো যায়। এমন অনেক গ্লুকোমার রোগী আসেন, যাদের একটা চোখ বেশ কয়েক বছর ধরে খারাপ। কিন্তু টের পাননি। এবার যখন আর একটা চোখও বেশ খানিকটা খারাপ হতে শুরু করেছে, তখন টনক নড়ছে। তখন দেখা গেল অন্য চোখটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। হয়তো আগে ধরা পড়লে ক্ষতি অনেকখানি আটকানো যেত।

প্র: চোখ ভাল রাখতে কী কী করব?

উ: জন্মের পর থেকেই চোখের যত্ন নিতে হবে। সদ্যোজাতর অন্যান্য চেক-আপ’এর পাশাপাশি চোখও দেখিয়ে নিতে হবে। কারণ চোখের নানা সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে বাচ্চা। তাই চেক-আপ করলে বেরিয়ে আসবে। ৪-৫ বছরে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় বাচ্চাকে চোখ দেখাতে হবে। পাওয়ারের কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা সেটা ধরা পড়বে।

প্র: কম্পিউটারে কাজ করার সময় অ্যান্টিগ্লেয়ার চশমা চোখকে সুরক্ষা দেবে?

উ: না। ও সব কোনও কাজের নয়। বরং চোখে পাওয়ার না থাকলেও ধুলো বালির মধ্যে কাজ করতে হলে জিরো পাওয়ারের চশমা পরে নেবেন।

প্র: ধুলোবালি চোখের ক্ষতি করবে?

উ: ধুলো ঢুকলে চোখ কটকট করে। তখন অনেকে চোখ ডলে দেয়। তাতে কর্নিয়ার ক্ষতি হয়ে যায়। দূষণ থেকে ত্বকের ক্ষতি হয়। চোখ ড্রাই হয়ে যায়। তাই বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে চোখে জলের ঝাপটা দেবেন।

প্র: আর খাওয়া-দাওয়া?

উ: ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন থেকে চোখের ক্ষতি হয়। সুতরাং জাঙ্কফুড যতটা সম্ভব কম খাবেন। ভিটামিন এ, ই ও সি সমৃদ্ধ সবুজ শাকসব্জি ও ফল চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

যোগাযোগ- ৬৬৩৬০০০০

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy