Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

রূপের অস্ত্রেই দূষণ বধ

ত্বক, চুল, শরীর ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের বিষম শত্রু পরিবেশ দূষণ। সৌন্দর্য রক্ষার কয়েকটি কৌশলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভবত্বক, চুল, শরীর ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের বিষম শত্রু পরিবেশ দূষণ। সৌন্দর্য রক্ষার কয়েকটি কৌশলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চিরশ্রী মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫১
Share: Save:

কুচকুচে ধোঁয়া, চোখ-নাক জ্বালানো পোড়া ইটের গন্ধ, হাঁপ ধরানো ধোঁয়াশা, মাইক বা হর্নের অবিরাম হইচই— চারপাশের পরিবেশের একরাশ দূষণে একটু একটু করে ক্ষয়ে যাই আমরা। স্বাস্থ্যের ক্ষতিটা ঠিকঠাক টের পাওয়ার আগেই দূষণের কুলক্ষণগুলো ফুটে ওঠে আমাদের রূপে। চুল-ত্বক নিষ্প্রভ হতে শুরু করে। তবে স্বস্তি হল, সৌন্দর্যচর্চার কয়েকটা নিয়মেই দূষণকে হারিয়ে দেওয়া যায়।

আর মুশকিল হল, ক্রান্তীয় দেশের গুমোট আবহাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসে আমাদের মহামূল্যবান ত্বক। দূষণের প্রকোপে ত্বকের প্রচণ্ড পিগমেন্টেশনে কুদৃশ্য বাদামি ছোপ ফুটে ওঠে। সময়ের আগেই বয়স হানা দেয়। ত্বক স্পর্শকাতরও হয়ে ওঠে! অ্যালার্জি, র‌্যাশ, ফুসকুড়ি ঘন ঘন বার হয়।

বাইরের যাবতীয় কাজ তো সূর্যাস্তের পরে করা সম্ভব নয়। তাই বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে মুখে, গলায়, হাতে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। বড়সড় হাতাওয়ালা সুতির জামা, ‘ইউভি প্রোটেকশন’ দেওয়া ছাতাকে সঙ্গী করলেও দূষণ দূরে থাকবে। রূপবিশেষজ্ঞদের মতে, এপিডারমিস বা ত্বকের উপরিভাগটাই তো বিরূপ আবহাওয়ার শিকার হয়। সেখানেই ভাঁজ, বলিরেখার সূক্ষ্ম আভাস মেলে। ক্ষতিটা ভিতরের ত্বকে জাঁকিয়ে বসার আগেই সতর্ক হওয়া ভাল। সানস্ক্রিন বা ভাল মেকআপ ব্যবহার করলে সেই ক্রিমের পাতলা আস্তরণেই রোদ, ধুলো, ময়লা আটকে যাবে। ত্বকের গভীরে ঘেঁষতেই পারবে না। যতই ক্লান্ত থাকুন, বা়ড়ি ফিরে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভাল করে ঘষে মুখ-হাত-পা ধুয়ে নেবেন। এতে ওই ধুলো-ময়লা লাগা সানস্ক্রিন বা মেকআপের পরতটার সঙ্গেই অল্পবিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ত্বকের এপিডারমিস অংশও উঠে যাবে। নরম ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রেটিনল ক্রিম মাসাজ করুন। ঈষৎ গোলাকৃতি ভঙ্গিতে আলতো করে, উপরের দিকে আঙুল বুলিয়ে। এর পরে যখন আপনি ঘুমোবেন, শরীরই কোষের পুনর্গঠন এবং বাকি মেরামতির কাজটা সেরে নেবে।

দূষণ জব্দ করতে

• আনাজপাতি, ফল, দই, বাদাম, তৈলাক্ত মাছ খান। দিনে আট থেকে দশ গ্লাস জল

• অ্যাপল সাইডার ভিনিগার জলে মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। এতে টিসু ভিজিয়ে মুখ মুছলে সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল হবে। এক মগ জলে আধ কাপ এই ভিনিগার মিশিয়ে শ্যাম্পুর পরে ধুয়ে নিলে চুল হবে পশমের মতো। এক গ্লাস জলে এক চা চামচ এই ভিনিগার মিশিয়ে পান করুন। শরীরের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক থাকলে দূষণের প্রভাব কমবে • নখে কিউটিকল ক্রিম লাগান। সাদা অংশ বিবর্ণ হবে না

• মনের দূষণ থেকেও সাবধান। কম্পিউটার বা স্মার্টফোন যত পারেন দূরে রাখুন। এগুলোর তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে কোষক্ষয় হয়। মানবজীবনে এ সবের দান হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা, উৎকণ্ঠাও। সব ক’টিই সৌন্দর্য ও সুস্থতার শত্রু। মোকাবিলা করতে রোজ মেডিটেশন অভ্যেস করুন

দূষণের প্রবল প্রতাপে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। এই মোলায়েম যত্নে তা ফিরে পাবেন। রাতেই ত্বক সারা দিনে হারিয়ে ফেলা অক্সিজেন আবার সংগ্রহ করে। সময় পেলে ফলের প্যাক তৈরি করে ত্বকের যত্ন নিন। ফলের অ্যাসিড এপিডারমিসের মরা কোষের আস্তরণ উঠিয়ে দেয়। সজীব ত্বকটি ফেরত এলেই তাকে ‘ময়শ্চারাইজড’ করে রক্ষা করুন। মধু, গোলাপজল মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। ‘স্কিন টনিক’-এর মতো ব্যবহার করবেন। রোদে বেশি ক্ষণ থাকলে ঠোঁটের পেলবতা, এমনকি গোলাপি রংটাও নষ্ট হয়। ওষ্ঠরেখা সামঞ্জস্য হারায়। লিপস্টিক লাগালেও ফুটিফাটা হাল ফুটে ওঠে। গরম ও বর্ষাতেও ‘অ্যাবসর্বিং লিপ বাম’-এর উপরে লিপস্টিক লাগান।

এই দূষণের জন্যই স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারী মানুষ এখন আর পাওয়াই যায় না। সবারই ত্বক হয় শুষ্ক, নয় তৈলাক্ত। শুষ্ক ত্বক তাড়াতাড়ি কুঁচকে মাছের আঁশের মতো হয়ে যায়। আর প্রচণ্ড জ্বলে। গরমকালেও ত্বক ফাটে! জেল-ফেসওয়াশে ত্বক পরিষ্কার করে অ্যালো ভেরা আর ভিটামিন ই-যুক্ত পুরু ময়শ্চারাইজ়ার লাগালে রেহাই মিলবে। তৈলাক্ত ত্বকের রোমকূপে তেল-ঘাম থাকলে ময়লা টানবেই। সেখান থেকেই অ্যাকনে, ব্ল্যাকহেডসের উৎপাত। সমাধান এক দিন অন্তর স্ক্রাবিং। রোজকার ব্যবহার্য ময়শ্চারাইজ়ার হবে পাতলা। বাইরে বেরোলে ওয়েট টিসু দিয়ে আধ ঘণ্টা অন্তর মুখের বাড়তি তেলটা মুছে নিলে তরতাজা বোধ করবেন।

দূষণে নাজেহাল হয় চুলও। রোদ, জল, ওজ়োন স্তরের ফুটো দিয়ে ঢুকে আসা অতিবেগুনি রশ্মির দাপটে চুল ভঙ্গুর, খসখসে, জৌলুসহীন, ‘ফ্রিজ়ি’ হয়ে যায়। পরিবেশকণার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় লালচে ভাব আসে। অকালপক্বতা দেখা দিতে বেশি সময় লাগে না। চুলের ডগা ফাটে, প্রাকৃতিক গোছটাই চলে যায়। ময়লা আঁকড়ে বসে মাথায়। ধুলো ঢুকলেই চুলে জট। চুল পড়ে পাতলা হয়ে যাবে। যখনই সম্ভব, পরিষ্কার হেয়ারব্রাশ দিয়ে ভাল করে চুলটা আঁচড়ে নিন। ধুলোবালি বেরিয়ে যাবে। বর্ষার দিনগুলোয় বৃষ্টির জলে চুল ভিজলেই চিত্তির। ভেজা চুলে রাজ্যের নোংরা আটকায়। তাই সুন্দর স্কার্ফে চুল-মাথা ঢেকে রাস্তায় যান।

হঠাৎ মাথার কোনও অংশ ফাঁকা লাগছে? দূষণের কারণে চুলে প্রোটিনের ঘাটতি হচ্ছে। গঠন ও ধরন বুঝে তেল ও শ্যাম্পুর পরিচর্যা করতে পারলে চুল মজবুত থাকবে। নিজেই দূষণের মোকাবিলা করতে পারবেন। কুড়ি মিনিট নারকেল তেল লাগিয়ে রাখলেই চুল তার প্রোটিন ফেরত পাবে। মাসাজে বন্ধ রোমকূপ খুলে রক্ত সঞ্চালন হবে। খুশকির সমস্যা মিটবে। তবে শ্যাম্পুর পরে জল ঝরিয়ে নেবেন। শুধু ছুটির দিনে চুলের জন্য একটু বাড়তি সময় দিন। চটকানো কলা, মধু ও বেকিং সোডা দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। কুড়ি মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে তোফা থাকবে মাথার চামড়া। খেয়াল রাখুন চুলের গোড়ায় ব্যথা লাগছে কি না। এটি জীবাণু সংক্রমণের উপসর্গ। সে ক্ষেত্রে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ধুলো-ময়লা লেগেই ভ্রুজোড়া তার চেকনাই হারিয়ে ফেলে, সরু হয়, পেকেও যায়। হেয়ার কম্বিংয়ের সময়ে বেবি ব্রাশ দিয়ে ভ্রুর ময়লা ঝেড়ে নেবেন।

আসলে দূষণের সঙ্গে লড়াইয়ের ব্রহ্মাস্ত্রটি প্রকৃতিরই ভাণ্ডারে। প্রাকৃতিক সম্পদে আস্থা রাখলে প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। দূষণ আটকানোর বর্ম তৈরি হবে। তাই ঘরে গাছ লাগান, পাত্রে জল ভরে জুঁই, বেল, রজনীগন্ধা, চাঁপা ফুলের সুগন্ধি পাপড়ি ভাসিয়ে রাখুন। দূষণে হারানো আর্দ্রতা ফিরে আসবে। অন্দর ও অন্তর দুয়েরই শ্রীবৃদ্ধি হবে।

মডেল: হিয়া, অঙ্কিতা, অন্বেষা; ছবি: অমিত দাস, মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত, পোশাক: ইমেজ অ্যান্ড স্টাইল, গড়িয়াহাট।

অন্য বিষয়গুলি:

Skin care Tips Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy