ছোট্ট মেয়েটা ক্লাসে বসে প্রায় ঘুমিয়ে পড়ত। টিচার বকাবকি করতেন।
স্কুলের অফিস কাউন্টারে কাজ করতে করতে দুর্গা ব্যাপারটা অনেক বার দেখেছে। ফুলের মতো মেয়েটা যেন একটু বেশিই চুপচাপ থাকে, আর পাঁচ জনের সঙ্গে মেশে না তেমন। তার সঙ্গে ভাব জমানোও সোজা নয়। মেয়ে কথাই বলে না সে ভাবে।
দুর্গা তবু হাল ছাড়ে না। কী যেন একটা অজানা টান, কী যেন একটা রহস্য। খালি মনে হয়, সেটা ওকেই খুঁজে বের করতে হবে।
ছোট্ট মিনি দেওয়ানের শিক্ষকরা যা ধরতে পারেননি, স্কুলের অফিস-কর্মী দুর্গা কিন্তু সেটা পেরেছিল। তার নিজের জীবনটাও একই রকম ক্ষতবিক্ষত ছিল বলেই পেরেছিল।
কাহিনির এই চুম্বক আপাত ভাবে খুব থ্রিলার-ধর্মী মনে হচ্ছে কি?
যদি না হয়, তা হলে সেটা আদৌ ব্যর্থতা নয়। কৃতিত্ব। ‘কহানি টু’-এর কৃতিত্ব, সুজয় ঘোষের কৃতিত্ব।
ক্রাইম থ্রিলারের চৌহদ্দিকে প্রসারিত করে দেওয়ার কৃতিত্ব। চার বছর পর বড় ছবির কাজে হাত দিয়েছেন সুজয়।
‘কহানি’র পর তিনি কী করে দেখান, প্রত্যাশার একটা বড় চাপ ছিল অবশ্যই। সেখানে গল্প বাছাইয়ে তিনি কিন্তু একটা বড় চমক দিয়েছেন।
কী সাহিত্যে, কী সিনেমায় ক্রাইম থ্রিলারের মূলস্রোত যে ধরনের অপরাধকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠে সচরাচর, সুজয় তার থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
থ্রিলার দেখতে গিয়ে শিশু নিগ্রহের মতো বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে, এটা সাধারণ ভাবে অনুমানের মধ্যে থাকে না। ‘কহানি টু’ সে দিক থেকে একটা বড় ঝাঁকুনি।
মিনির সঙ্গে নিয়ত ঘটে চলা হিংস্রতার কোনও দৃশ্য পরোক্ষ ভাবেও ছবিতে রাখেননি সুজয়। সেটা আর একটা সঠিক সিদ্ধান্ত। যে অপরাধের চরিত্রই হল তার অদৃশ্যতা, তার কোনও ভিস্যুয়াল দলিল তো থাকতে পারে না।
একটা ভীষণ শরীরী অপরাধের অশরীরী উপস্থিতিই এ ছবিতে দর্শককে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি দিতে থাকে। ‘কহানি টু’র এটা আর একটা সাফল্য।
মিনির মামার ভূমিকায় যুগল হংসরাজের মতো এক জনকে ব্যবহার করা এবং মিনির দিদার ভূমিকায় অসামান্যা অম্বা সান্যাল, বিদ্যা বালনকে বাদ দিলে ‘কহানি টু’র কাস্টিং-এ সবচেয়ে বড় সম্পদ এই দু’জনই। আর বিদ্যা তো আছেনই। ‘কহানি’ যদি বিদ্যার ছবি হয়ে থাকে, ‘কহানি টু’তে ছবিটাই বিদ্যা। তাঁর জন্যই ছবির নাম ‘কহানি টু’। নইলে আগের বার পর্দায় তাঁর নকল নাম বিদ্যা বাগচী ছিল আর এ বার তাঁর নকল নাম বিদ্যা সিংহ হয়েছে — স্রেফ এইটুকু ছাড়া ‘কহানি’-র সঙ্গে ‘কহানি টু’-র কোনও যোগ নেই। এটা কোনও ভাবেই ‘কহানি’-র সিক্যুয়েল নয়। অর্জুন রামপালও পরমব্রতর কন্টিন্যুইটি নন।
এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল।
গোল বাধল গল্পের বিস্তারে গিয়ে। ‘কহানি টু’-র সমস্যা হল, প্রথমার্ধেই গল্পটা সবটা বলা হয়ে গিয়েছে। কে কারা কেন, কার সঙ্গে কার কী সম্পর্ক, অতীত-বর্তমান সব জানা হয়ে গিয়েছে। এ বার দ্বিতীয়ার্ধটা শুধু ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোর সাঁকো।
কী হতে যাচ্ছে, সেটা দর্শক বুঝেই ফেলেছেন। ফলে থ্রিলটা আর থাকেনি। উপরন্তু কী ভাবে হচ্ছে-র গতিপথটাও বেশ বিদঘুটে গাঁজাখুরি।
পেটে কাঁচা সেলাই নিয়ে কোমা-উত্তীর্ণ বিদ্যা হাঁটতে হাঁটতে নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে এলেন এবং যাবতীয় অ্যাকশনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, এ জিনিস সলমন খানকে মানাতে পারে, সুজয় ঘোষকে না।
ডকের দৃশ্যটাও খুবই ক্লিশে। আর বিদ্যার যে ভয়াবহ অ্যাক্সিডেন্ট দেখানো আছে, তাতে তাঁর বাঁচারই কথা নয়। বিশ্বাসযোগ্যতার এই ঘাটতি ছবি জুড়ে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়েছে।
কালিম্পং-য়ে র দেওয়ানদের বাড়িতে বিদ্যা দিব্যি আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ান, চাকরবাকরের দেখা নেই। হাসপাতাল থেকে প্রতিবন্ধী মিনিকে নিয়ে পালান, কেউ টের পায় না। চন্দননগরে এসে থাকেন, ভুয়ো পাসপোর্ট বানান, ভুয়ো পরিচয়ে চাকরি করেন — একা এত কিছু সম্ভব? ছক ভাঙা গল্প পেয়েও দুর্গা রানি সিংহ তাই বিদ্যা বাগচী হতে পারলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy