Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

একটানা স্ক্রিনে চোখ রাখবেন না

দিন-রাত স্মার্ট ফোন, ই-বুক, ল্যাপটপের ফাঁদে পড়ে হাঁপিয়ে উঠছে চোখ। ছাপ পড়ছে ঘুমে-শরীরেও। ডা. শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বললেন সুজাতা মুখোপাধ্যায় প্র: আমরা আজকাল পড়ছি ই-বুক। কিন্তু বই পড়ার আরাম নেই তাতে। উ: থাকবে না তো। সাদা কাগজের বুকে কালো হরফের লেখা পড়া এক জিনিস, আর স্ক্রিনে চোখ রেখে পড়া অন্য ব্যাপার। কাগজ-কলমের সঙ্গে চোখের ফিক্সেশন রেট কম, রিফ্রেশ রেট বেশি। সে আরাম ই-বুকে কোথায়!

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

প্র: আমরা আজকাল পড়ছি ই-বুক। কিন্তু বই পড়ার আরাম নেই তাতে।

উ: থাকবে না তো। সাদা কাগজের বুকে কালো হরফের লেখা পড়া এক জিনিস, আর স্ক্রিনে চোখ রেখে পড়া অন্য ব্যাপার। কাগজ-কলমের সঙ্গে চোখের ফিক্সেশন রেট কম, রিফ্রেশ রেট বেশি। সে আরাম ই-বুকে কোথায়!

প্র: মানে?

উ: বই পড়তে পড়তে আমরা তাতে মগ্ন হয়ে যেতে পারি, কারণ চোখ অক্ষরগুলিকে স্ক্যান করে যায় তার স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে। একটা অক্ষর পড়তে এক পলকও লাগে না, অর্থাৎ অক্ষরের পিছনে লেগে থাকতে হয় না চোখকে। একেই বলে রিফ্লেক্স রেট কম থাকা। প্লাস চোখের পাতা বন্ধ হয়, খোলে নিজের নিয়মে, বজায় থাকে চোখের আর্দ্রতা। ফলে ছাপা ভাল হলে ও ঘরে আলো ঠিক থাকলে অনেকখানি পড়ে যাওয়ার পরও চোখ ফ্রেশ থাকে।

প্র: আর ই-বুকের বেলায়?

উ: স্মার্ট ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটার মনিটরের যত ভাল পিকচার কোয়ালিটি, তত কষ্ট কম। অর্থাৎ স্ক্রিনের রেজোলিউশন কত সেটা বিচার্য বিষয়। চোখের রেজোলিউশন ৭৪ মেগাপিক্সেলেরও বেশি। এবার পর্দার রেজোলিউশন যত এর কাছাকাছি হবে তত কষ্ট কম হবে।

প্র: তাহলে তো বিরাট পার্থক্য! কিন্তু সেই অনুযায়ী তো কষ্ট হয় না!

উ: কষ্ট বলতে চোখে স্ট্রেইন পড়া। মাথা ব্যাথা, চোখ ভারী লাগা, চোখ জ্বালা, জল পড়া। তবে এ সব আজকাল এত কমন যে মানুষ মেনেই নিয়েছেন।

প্র: কিন্তু সে তো ডিসপ্লে সেটিং ঠিক করে নিলে কম থাকে?

উ: থাকে তো। ব্রাইটনেস, কালার, কনট্রাস্ট, হরফের সাইজ কম-বেশি করে নিলে কষ্ট কমে যায়। গামা কারেকশন করা গেলে তো কথাই নেই। তাও ১০০য় ১০০ হয় না। কিছু অসুবিধে থেকেই যায়।

প্র: সে আর কী করা যাবে?

উ: করার অনেক কিছু আছে।

প্র: যেমন?

উ: যে ঘরে বসে কাজ করবেন, সেখানে পর্যাপ্ত আলো যেন থাকে।

প্র: স্ক্রিনে তো থাকে?

উ: স্ক্রিনে ভাল আলো আর বাইরে কম, এমন হলে চোখে চাপ পড়ে। ঘরেও ভাল আলো থাকা দরকার। তবে যেমন-তেমনভাবে নয় কিন্তু।

প্র: মানে?

উ: মাথার উপর ফ্লুরোসেন্ট আলো জ্বললে সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। লাগাতে হবে সাধারণ আলো। ওয়ার্ক স্টেশনের পিছনে ও সাইডে। বাঁ সাইডে হলে সবচেয়ে ভাল। ডান দিকে হলেও চলবে।

প্র: তাহলেই চোখ সেফ?

উ: এটা একটা নিয়ম। এরপর আছে ২০-২০-২০।

প্র: সে আবার কী?

উ: ২০ মিনিট পর পর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরের কোনও কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকা।

প্র: তাতে কী হবে?

উ: চোখ আরাম পাবে। টানা স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে কষ্ট বেশি হয়।

প্র: সে জন্য তো মাঝে মাঝে উঠে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে আসি।

উ: চোখে মধ্যে ঝাপটা দেবেন না। কারণ চোখের জলে বহু উপকারি জিনিস আছে, সে সব ধুয়ে গেলে কিছু দিন পর শুরু হবে চোখ জ্বালা।

প্র: ক্লান্ত লাগলে তবে করব?

উ: জল দিতে ইচ্ছে করলে চোখ বন্ধ করে কপালে, মুখে, ঘাড়ে দিন।

প্র: কষ্টটা তো চোখে।

উ: পরিষ্কার ঠাণ্ডা ফ্রিজের জল ড্রপারে করে এক ফোঁটা দিয়ে খানিক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখুন। তবে কখনও যেন গরম জল দেবেন না চোখে।

প্র: আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ড্রপ?

উ: ড্রাই আই হলে, ডাক্তার যদি বলেন, অবশ্যই দেবেন।

প্র: কন্ট্যাক্টলেন্স না পরলেও ড্রাই আই হয়?

উ: কম্পিউটারে যাঁরা বেশি সময় কাজ করেন তাদের মধ্যে ১০-৫০ শতাংশের হয়। কন্ট্যাক্ট লেন্স পরলে তা হয়ে যায় ১৭-৯৬ শতাংশ।

প্র: ট্যাব বা মোবাইলের ক্ষেত্রেও এত নিয়ম?

উ: আরও বেশি নিয়ম।কারণ পোর্টেবিলিটির কারণে আমরা আজকাল ল্যাপটপের বদলে ট্যাব বা স্মার্টফোনই ব্যবহার করি বেশি। ফেসবুক করা থেকে, গেম খেলা, ভিডিও দেখা, মেল চেক করা, লেখা-পড়া, সব। এর স্ক্রিন ছোট। কাজেই সে স্ক্রিনের রেজোলিউশন ভাল না হলে বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে অনেক বেশি সমস্যা হয়। বাচ্চাদের তো আরও বেশি।

প্র: স্মার্ট ফোনেও সমস্যা?

উ: বড় স্ক্রিনের, এলইডি দিয়ে ব্যাক লিট করা, দামি স্মার্ট ফোনে কিছুটা ছাড় অবশ্যই আছে। তবে তাতে আবার অন্যের সমস্যা বেশি।

প্র: অন্যের সমস্যা বলতে?

উ: সারারাত কাজ বা চ্যাট করে গেলে ঘর ভরে থাকে মোবাইলের আলোয়। দফারফা হয় অন্যের ঘুমের। অনিদ্রা রোগ হতে পারে আপনার নিজেরও।

প্র: অনিদ্রা রোগ?

উ: হ্যাঁ, রাতে মোবাইল, ল্যাপটপ এমনকী টিভি নিয়েও বেশি মত্ত থাকলে স্লিপ সাইকল্ বদলে যায়। গ্রাস করে অনিদ্রা, এ তো এখন ওপেন সিক্রেট।

যোগাযোগ ৯৮৮৩০৮৩০৮৩

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy