গোড়ার কথা
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। এক ভদ্রমহিলা এলেন জেকব ডব্লিউ ডেভিস নামক নেভাডাবাসী এক দর্জির কাছে। ভদ্রমহিলার স্বামী কাঠুরে। জঙ্গলের কাঁটাগাছে প্রায়ই জামা ছিঁড়ে যায়। তাই টেকসই পোশাক চাই। ডেভিসের মাথায় খেলে গেল বুদ্ধি। তখন এক ধরনের কাপড় পাওয়া যেত ফ্রান্সে। যার নাম সার্জ দে নিমে। তাই দিয়ে তৈরি হল প্যান্টস। দুশো জোড়া প্যান্ট বিক্রি হয়ে গেল চোখের নিমেষে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত কাপড় নেই যে ডেভিসের কাছে! ডেভিস যোগাযোগ করল কাঁচামালের হোলসেলার লেভি স্ত্রাউসের সঙ্গে। ১৮৭৩ সালে এর ইউ এস পেটেন্ট বার করা হয়। আর সে দিনটিকেই ধরা হয় ‘ব্লু জিনস’-এর জন্মদিন।
কিন্তু শ্রমিক, কৃষক, মজুর শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই পোশাক। তখন জিনসের সামনে দুটো ও পিছনে একটি পকেট লাগানো থাকত কপার রিভেট দিয়ে। পরে ঘড়ি রাখার জন্য সামনে ছোট পকেটের চল শুরু হয়। কারণ সময় ধরে শ্রমিক-মজুরদের কাজ করতে হত। তবে সময় সেখানেই থেমে থাকেনি। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান সেনার পোশাক তৈরিতে ব্যবহার শুরু হয় ডেনিমের। যুদ্ধের পরেও কিছু সেনা তা বাইরে পরতে শুরু করে। পরিচিতি বাড়ে ডেনিমের।
ডেনিম কাচার নিয়ম
• গরম জলে কখনও ধোবেন না ডেনিম। তার জন্য চাই ঠান্ডা জল
• বেশি ক্ষার দেওয়া সাবানে ডেনিম না কাচাই ভাল। এতে রং ফিকে হয়ে যায়। তাই সাবানও হতে হবে হালকা
• আছড়ে কাচবেন না। বরং কিছুক্ষণ সাবান জলে চুবিয়ে রেখে হালকা হাতে ঘষে নিন
• কাচার পরে তা নিংড়োবেন না। বরং কোনও দড়িতে মেলে ডেনিমের জল ঝরে যেতে দিন। তার পরে তা রোদে দিন।
• প্যান্টস কাচার আগে তা উল্টে নিতে হবে। শুকোতেও হবে উল্টো করে
তত দিনে ভারতও স্বাধীন হয়েছে। চিন্তাভাবনার স্বাধীনতার প্রকাশ ঘটছে সাজপোশাকে। জাতপাত, শ্রেণিগত বিভেদ মিটিয়ে দিতে এগিয়ে এলেন শিল্পীরা। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পেল ‘রেবেল উইদাউট আ কজ়’। সেই ছবিতে বিপ্লবী যৌবনের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয়তা পেল জিনস। ক্রমে ভারতেও বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করতে লাগল ডেনিম প্যান্টস।
ডেনিমের কাট
দিনে দিনে কাটছাঁট বদলে নতুন নতুন স্টাইল তৈরি করল ডেনিম। জিনসের সেলাইও খুব গুরুত্বপূর্ণ। জিনসের বাইরের অংশ দিয়ে চলে যাওয়া হেম ফ্যাশন-জগতে নতুন সংজ্ঞা তৈরি করল। চোখ রাখা যাক বিভিন্ন ধরনের ডেনিমে...
স্ট্রেট কাট: সাধারণ প্যান্টসের আদলে এই ধরনের কাট তৈরি হয়। সামনে-পিছনে পকেটও থাকে।
স্কিনি: লুজ় প্যাটার্ন ভেঙে স্কিনটাইট ফিটিংসের প্যান্ট তৈরি হল। যা স্কিনি জিনস নামেই বেশি পরিচিত। র্যাম্প মডেলদের মধ্যে এই ধরনের জিনস বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়।
স্লিম ফিট: এ দিকে আমজনতা পড়লেন মুশকিলে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কিনি জিনস পরা তো চাই, কিন্তু তা আরামের দফারফা করতে সময় নিল না। ফলে স্ট্রেটকাট ও স্কিনি জিনসের মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী স্লিম ফিট জিনস টেনে নিল সাধারণ মানুষ।
বুটকাট: একই ধরনের কাটে জিনসকে বেঁধে না রেখে হাঁটুর নীচ থেকে তা ছড়িয়ে দেওয়া হল। আগেকার দিনে বুট জুতো পরা হত বেশি। তা কভার করতেই এই ধরনের বুটকাট জিনস পরার চল শুরু হয়। যা আবার ফিরে এসেছে।
পালাজ়ো স্টাইল: আপাতত ফ্যাশন জগতে সবচেয়ে হিট এই কাট। ওয়াইড লেগ এই জিনস গরমেও পরা যায়। তাতে স্টাইলও বজায় থাকে, আবার আরামও।
পোশাকে ডেনিম
শুধু প্যান্টসেই থেমে থাকল না ডেনিমের রাজত্ব। ক্রমশ তা ঊর্ধ্বাঙ্গের পোশাকেও তার রাজত্ব বিস্তার করল।
জ্যাকেট: নীল, কালচে, আকাশি... বিভিন্ন রঙের ডেনিম জ্যাকেট অনেক বছর ধরেই ফ্যাশনে ইন। আমাদের মতো দেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে হওয়ায়, এ দেশের হালকা শীতেও কাজে দেয় এই জ্যাকেট।
শার্টস: ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে মানানসই ডেনিমের শার্টও পরতে পারেন। সাদা শার্টের কলারে বা হাতায় ডেনিমের প্যাচওয়র্কও নজর কাড়ে।
কুর্তি: ডেনিম কুর্তি বা টপ এখন সব রিটেল স্টোরেই পাওয়া যায়। এরও আবার অনেক ভাগ আছে। ছোট পাথরকুচি বা মুক্তো কুচি বসানো এমবেলিশ্ড ডেনিম, সুতোর টানে নকশা তোলা এমব্রয়ডার্ড ডেনিম বা অ্যাসিড ওয়াশ করা ডেনিমের টপ এখন র্যাম্পের প্রথম সারিতে। এ ছাড়াও অ্যাসিমেট্রিক কাটে ডেনিম কুর্তি বা টপও রাখতে পারেন নিজের ওয়ার্ডরোবে।
পুরনো ডেনিম নতুন করে পরুন
• সাদা কুর্তির ভোল বদলাতে তার উপরে বসিয়ে নিতে পারেন ডেনিমের পকেট। পুরনো জিনসের প্যান্টস পকেটের আকারে কেটে বসিয়ে নিতে পারেন। মিনিটে লুক বদলে যাবে রোজকারের কুর্তির।
• ডেনিম কাপড় কেটে কুশন কভারও বানিয়ে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জিনসের পকেটের অংশ বেছে নিলে আলাদা করে ডিজ়াইন করারও প্রয়োজন পড়বে না।
• গ্লাভ্স বানাতেও এর জুড়ি নেই। তা খুব একটা অসুবিধেজনকও নয়। পুরনো ডেনিমের প্যান্টসের উপরে নিজের হাত বসিয়ে আঙুল বরাবর পেন দিয়ে আউটলাইন টেনে নিন। তার পরে কাঁচি দিয়ে একই সঙ্গে নীচের কাপড়ও কেটে নিন। সুচ, সুতো দিয়ে ধার বরাবর সেলাই করে নিলেই উল্টে নিয়ে গলিয়ে নিতে পারবেন দু’হাতে।
• জিনসের কোমরের অংশ বা পায়ের বর্ডার কেটে চুলের ব্যান্ড বানিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য লাগবে শুধু আর একটি ইলাস্টিক। জিনসের সেলাইয়ের মাঝখান দিয়ে ইলাস্টিক ঢুকিয়ে সেলাই করে নিন।
• প্যান্টসের কাপড় কেটে রকমারি ব্যাগও বানানো যায়। নিজে না পারলে কাছাকাছি দর্জিকে দিয়েও তা বানিয়ে নিতে পারেন।
বছর ঘুরে যত ধরনের কাট আর পোশাক আসুক না কেন, ফ্যাশন-জগতে ডেনিমের জায়গা কিন্তু সুরক্ষিত। গরমের সময়েও ফ্যাশন বজায় রাখতে পুরোদস্তুর সঙ্গ দিতে পারে এই কাপড়।
মডেল: শতরূপা; ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; স্টাইলিং: সুমিত সিংহ; পোশাক ও ব্যাগ: গ্লোবাস, লেক মল; ভেরো মোদা, কোয়েস্ট মল; জুয়েলারি: সাক্ষী ঝুনঝুনওয়ালা; লোকেশন: সুইসোতেল; ফুড পার্টনার: ৬, বালিগঞ্জ প্লেস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy