Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
অনবদ্য কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’

তারকাসুরের পীড়ন

কাশ্মীরা সামন্তের পরিচালনায় ‘নৃত্য উপাসনা’ সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করেছিল নৃত্যাসন্ধ্যা। জয় সরকার রচিত একটি অভিনব যন্ত্রসঙ্গীতে আধারিত সমবেত নৃত্য ছিল তাদের প্রথম নিবেদন।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

কাশ্মীরা সামন্তের পরিচালনায় ‘নৃত্য উপাসনা’ সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করেছিল নৃত্যাসন্ধ্যা। জয় সরকার রচিত একটি অভিনব যন্ত্রসঙ্গীতে আধারিত সমবেত নৃত্য ছিল তাদের প্রথম নিবেদন। এর পর কচিকাঁচাদের নৃত্যে বন্দিত হয় আমাদের দেশমাতৃকা। সংস্থার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।

মূলপর্বের অনুষ্ঠানে কালিদাস রচিত ‘কুমারসম্ভবম’ ছিল একটি অনবদ্য প্রয়োজনা। তারকাসুরের পীড়নে অতিষ্ট দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে মদনকে প্রেরণ করা হয় শিবের ধ্যানভঙ্গের উদ্দেশ্যে। ক্রোধান্বিত শিবের রোষানলে মদন ভস্মিভূত হলে শিব ও পার্বতীর মিলনে কার্তিকের জন্ম হয়। এই কার্তিক সহিত যুদ্ধে তারকাসুর পরাস্ত ও নিহত হন। ‘কুমারসম্ভবম’-এর আখ্যানটি কাশ্মীরার নিখুঁত নৃত্যবিন্যাসে দর্শকের কাছে উপজীব্য হয়ে ওঠে।

শিবের ভূমিকায় কাশ্মীরার তেজস্বী ও বলিষ্ঠ দেহভঙ্গিমা এবং পার্বতীর ভূমিকায় অনিতা মল্লিকের লাস্যময়ী বিভঙ্গ ও মুখজ অভিনয় রসোসঞ্চার করে।

এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে তারকাসুরের ভূমিকায় রাজীব মণ্ডল ও কার্তিকের ভূমিকায় রাহুল সিংহ উল্লেখযোগ্য। শেষপর্বে চিত্রা বিশেস্মরণ পরিবেশিত ‘অনুভূতি দ্বিতীয়ন’ উপস্থাপনাটি সে দিনের অনুষ্ঠানের বড় প্রাপ্তি।

চৈতি ঘোষ

ঐতিহাসিক পরিবর্তন

‘শ্রীমধুসূদন’ নাটকটি দেখলেন বিপ্লবকুমার ঘোষ

নাট্যরঙ্গের প্রযোজনা ‘শ্রীমধুসূদন’। নাটকের গতি ও অভিনয় দুই-ই এই প্রযোজনার বড় সম্পদ। শুধু অভিনয়ই নয়, একাধিক নাট্যকারের কাছে ঋণ স্বীকার করলেও এই নাটক রচনার কৃত্বিত্ব তাঁরই। তিনি সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। মধুসূদনের চরিত্রে মিলিয়ে দিয়ে মঞ্চের ঘেরাটোপে তিনিই ‘জীবন্ত মধুসূদন’।

নাটকটি শুরু হয় চেন্নাইয়ের পটভূমিকায়। মধুসূদন তখন বিলেত যাওয়ার স্বপ্ন শিকেয় তুলে রেখে অরফ্যান স্কুলে পড়াচ্ছেন। আর নানাবিধ এশিয় ভাষা চর্চায় ব্রতী হয়েছেন। আবার মা-কে স্বপ্নে দেখছেন লেখার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ে। তার পর স্মৃতির সরণি বেয়ে নিজের বাবা এবং রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে ‘ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ’ এই কথপোকথন। ছোট্ট পরিসরে নাট্যকার, মধুসূদন কেন খ্রীষ্টান হলেন তা দর্শককে জানিয়ে দিয়ে নাটকের মূল গল্পে চলে গেলেন। তার পর দু’ঘন্টা কুড়ি মিনিটে চড়াই উতরাই পেরিয়ে ‘দাঁড়াও পথিকবর’ মানে মৃত্যু দৃশ্যে পৌঁছে গেলেন।

সুলিখিত এই নাটককে তীব্র গতি আর বৈচিত্র এনে দিয়েছে পরিচালক স্বপন সেনগুপ্তের মুন্সিয়ানা। গোটা মঞ্চটা যেন বই। মধুসূদনের লেখা নানা বই। সত্যিই তো সৃষ্টি-ই তো বেঁচে থাকে। স্রষ্টাকে তার পাতা উল্টে খোঁজা যায়। বিলু দত্ত’র মঞ্চ ভাবনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাটকের চরিত্ররা সঠিক সময়ে ও নির্দিষ্ট প্রয়োজনে এই বই-এর পাতা উল্টে, সোজা করে, ঘুরিয়ে মধুসূদনের জীবনের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক পরিবর্তনগুলো ঘটিয়ে দিয়েছেন। মধুসূদনের বন্ধুরাই তো ওঁর জীবনের অনেকখানি নিয়ামক।

মধুসূদন ও দেবকীর প্রেমের তুঙ্গ মুহূর্তটি বাদ দিলে আলোক ভাবনা খুব একটা বেশি দাগ কাটেনি। কিন্তু গৌতম সোমের আবহ এ নাটকের সম্পদ। মহম্মদ আলির রূপসজ্জা প্রশংসনীয়। অভিনয়ে সুরজিৎ-এর পাশাপাশি অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রোকেয়া রায় অসামান্য। অন্য দিকে অমিয়শঙ্কর হালদারের বিদ্যাসাগর এক বলিষ্ঠ চরিত্রায়ণ। তাঁর ধ্রুপদী উচ্চারণ চরিত্রানুগ। আর তৎকালীন সাহেব তোষণ করা কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে রসিক চক্রবর্তীর চরিত্রে স্বপন সেনগুপ্তের সাবলীল ও শ্লেষাত্মক অভিনয় অনেক দিন মনে থাকবে। তবে ভাল লাগে সিপাহী বিদ্রোহী বেশে সুমন পালকে। নাটকের দুর্বলতার দিকটিও হল কিছু অভিনয়। যা মাঝে মধ্যেই ধরা পড়ে।

হৃদমাঝারে রাখব

রবীন্দ্রসদনে ষষ্ঠ সহজিয়া উৎসব।

১৯৯১ ডিসেম্বর মাসে বাউল গানের আকর্ষণে ভারতে এসেছিলেন জাপানের তরুণী মাকি কাজুমি। এখানে এসে সাধন দাসের কাছে শিখলেন বাংলা ভাষা পড়তে ও বলতে, বাউল গান গাইতে ও ভাব-তত্ত্ব বুঝতে। পরবর্তীতে জাপানের বেশ কিছু মানুষও বাউল গানের চর্চা শুরু করেন। সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ষষ্ঠ সহজিয়া উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করলেন সাধন দাস বৈরাগ্য, মাকি কাজুমি সহ জাপানের ওসাকা থেকে আগত বাউল শিল্পীরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাতোশি নাকমুরা, কাজুমি ফুকাজাওয়া, শোকো নিশিমুরা, তোমোমি ফুকুবে, কানাকো শিমিজু প্রমুখ এবং সহজিয়া লোকগানের দল। এই জাপানি বাউলেরা কিছু প্রাচীন মহাজনী পদ গেয়ে শোনালেন, যা ছিল এই অনুষ্ঠানের অন্যতম পাওনা।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সহজিয়া মাতিয়ে দিল ‘শ্যাম অঙ্গে রাই অঙ্গ’, ‘তিন পাগলের হল মেলা’, ‘চল মিনি আসাম যাব’, ‘বসন্ত বাতাসে’, ‘হৃদমাঝারে রাখব’ জনপ্রিয় লোকগানের ভান্ডার দিয়ে। সহজিয়ার দেব চৌধুরী তাঁর নিজস্ব স্বাক্ষর রেখে পরিবেশন করলেন দরবেশি গান ‘অধর মানুষ’ এবং আবদুল শাহ করিমের রচিত পদ ‘সখি কুঞ্জ সাজাও গো’। সহজিয়ার সঙ্গে গলা মেলালেন সাধন দাস বৈরাগ্য, মাকি কাজুমি ও অন্যান্য জাপানি বাউলরা। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল সহজিয়া ফাউন্ডেশন।

নিজস্ব প্রতিনিধি

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy