সারোগেসি নিয়ে বালিগঞ্জ রেনবো থিয়েটারের নাটক
সারোগেসি নিয়ে উত্তাল দেশ। সেই বিষয় নিয়েই বালিগঞ্জ রেনবো থিয়েটারের নতুন নাটক ‘গর্ভকেশর’। সম্প্রতি পাঁচটি নাটক নিয়ে তাদের বাৎসরিক নাট্যোৎসব হল তপন থিয়েটারে। উৎসবের সূচনা হল এই নাটক দিয়েই। তাপসী রায়চৌধুরীর নির্দেশনায় নাটকটি বেশ মনোগ্রাহী হয়েছে বলা যায় এবং লাবণ্য চরিত্রে তাঁর অভিনয়ও মনে দাগ কাটে। নাটকের শুরুতে সাতাশ বছরের তরতাজা যুবকের মৃত্যু। সেই যুবকের দেহ নিয়ে চলে যাবার পর যে সংলাপ শুরু হল তাতেই নাট্যকার এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করালেন প্রতিটি দর্শককেই। শিল্পপতি হীরক চৌধুরীর (রজত গঙ্গোপাধ্যায়) তিন ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রী লাবণ্য (তাপসী রায়চৌধুরী)। বাবা (সত্যপ্রিয় সরকার)। দুই ছেলে বাবার কোম্পানিতে কর্মরত, এক মেয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে এম এ করছে, আর ছোট ছেলে প্রাক্তন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। একদিন জানা গেল ছোট ছেলে হীরকের সন্তান নয়। অথচ সে হীরকের স্ত্রীর গর্ভে জন্মেছে। তিনি সারোগেট মাদার। নাটকের মুন্সিয়ানায় ফুটেছে নতুন চিন্তার ফসল। ছোট্ট একটি চরিত্রে মণীশ (সুজয়) সাবলীল। ভাল অভিনয় করেছেন আভেরী, সুপ্রভাত, অনুভব, অর্পণও। নাটকে তাপসীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতটি ‘দেখ চাহি চারি ধার’ নাটকটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। আলোর দিকে আরও একটু নজর দিলে ভাল হতো। নাটকের ছোট ছোট কিছু ভুলও শুধরে নেওয়া প্রয়োজন।
একই অঙ্গে
সম্প্রতি উত্তমমঞ্চে সান্তালি ডান্স অ্যান্ড মিউজিক ইনস্টিটিউটের অস্টম বর্ষপূর্তিতে ছিল নৃত্যের অনুষ্ঠান। ছোট থেকে বড় এই দুইয়ের মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ হল ‘নারী শক্তির চিরন্তন মহিমা’। পুরাতনী যুগ থেকে আজও নারী কখনও দুর্গাচণ্ডী, কখনও বা মাতৃময়ী। এই নারী-ই আবার ভানুমতী। ঘরে বাইরে সমান দক্ষতার ছাপ। তাই শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল ‘নারী শক্তি’। যৌথ পরিচালনায় ছিলেন সান্তালি ও সোনিয়া সরকার। নৃত্য জগতে বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী শিখা সরকারের বিভিন্ন নৃত্যভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর দুই কন্যার নৃত্য ভাবনাতেও। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন রিয়া, স্বর্ণালি, দেবলীনা, অভিজিৎ প্রমুখ।
উত্তরণের পথ
আমার পৃথিবী সন্ত্রাস মোছে...’ শিরোনামে রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হল কবিতা কোলাজের অনুষ্ঠান। ভাবনায় এবং ভাষ্যে ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। গানে পল্লব কীর্তনীয়া এবং শান্তনু রায়চৌধুরী। পাঠে ছিলেন বিপ্লব চক্রবর্তী এবং মুনমুন মুখোপাধ্যায়। তাঁদের নির্বাচনে ছিল রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত, সুনীল থেকে ভবানীপ্রসাদ মজুমদার প্রমুখের কবিতা। সন্ত্রাসের আবহই হোক কিংবা যে কোনও প্রতিকূলতা, ভালবাসাই পারে তা থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে। সেই সত্যই যেন আরও একবার উঠে এল এ দিনের অনুষ্ঠানে। উল্লেখের দাবি রাখে মুনমুন মুখোপাধ্যায়ের পরিণত কণ্ঠে ‘ভালবাসি ভালবাসি’ কবিতাটি। প্রশংসার দাবি রাখে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘এত লাশ রাখব কোথায়’। আয়োজক সংজ্ঞা। পিয়ালী দাস
কী ধ্বনি বাজে
বিড়লা সভাঘরে আয়োজিত প্রয়াস ও আদি কলাতীর্থের অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল শাশ্বতী সেনগুপ্তের কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। গানগুলি মধ্যমানের হলেও তাঁর কণ্ঠটি সুশ্রাব্য। তবে তাঁর গানের স্কেল নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। এ দিন যেমন ‘যারে নিজে তুমি’ গানটি ভুল স্কেলে ধরে পরে ঠিক করলেন। আবার অন্য দিকে ‘কি ধ্বনি বাজে’র মতো গান এখনও তাঁর নির্বাচনের মধ্যে রাখা ঠিক হয়নি। সহজ তালবদ্ধ গানেই তিনি স্বচ্ছন্দ বোঝা গেল। এর পরে অভিরূপ সেনগুপ্তর পরিকল্পনা ও নৃত্যপরিচালনায় ‘কৃষ্ণমাধুরী’ শীর্ষক নৃত্যালেখ্য, যেখানে ছোট কৃষ্ণরূপী ঋষণা চক্রবর্তী সকল দর্শকদের মন কেড়ে নেন। যশোদা হয়েছিলেন অলিভিয়া বিশ্বাস। বড় কৃষ্ণ অভিরূপ নিজে এ বার রাধা অনুরাধা গঙ্গোপাধ্যায় উভয়েই যৌথ ভাবে যে সব নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন সেগুলিও নজর কাড়ে। সঙ্গীতা সরকারের স্মৃতিতে ‘স্পেশাল চিলড্রেন’দের পরিবেশিত ‘তুমি রবে নীরবে’ গানের সঙ্গে নাচটি অপূর্ব। সংবর্ধনা জানানো হয় অলকানন্দা রায়, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় ও অগ্নিমিত্রা পলকে।
প্রথম পর্বের শেষার্ধে ছিল রায়া ভট্টাচার্যের কণ্ঠে রবীন্দ্র কবিতার আবৃত্তি। কৃষ্ণকলি, বাঁশিওয়ালা, এমন দিনে তারে বলা যায় ও বিদায় এই চারটি কবিতাতেই রায়া তাঁর নিজস্বতার ছবি আঁকলেন। সুন্দর নিবেদন তাঁর।
‘দুর্গাস্তুতির’ নামের মধ্যেই ছিল এই নৃত্যালেখ্যর বিষয়বস্তু। নাচে, গানে বেশ জমজমাট। শেষ হল ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ গানে। নৃত্যনাট্যতে ছিল যেমন গতি তেমনই প্রাণের আনন্দ। প্রথমেই নজর কাড়েন দুর্গারূপী রেশমী বাগচী। পদ সঞ্চালন, হস্তপ্রক্ষেপণ, যাবতীয় মুদ্রা সব কিছুই নিখুঁত এবং প্রাণবন্ত। চণ্ডীরূপী অনামিকা সাহু ও মহিষাসুর রূপী প্রদ্যুমন মুখোপাধ্যায়ও বিশেষ নজর কাড়েন। এই নৃত্যনাট্যে অভিরূপ সেনগুপ্তের বিশেষ উপস্থিতিতেও বেশ উজ্জ্বলতা ছিল এবং তিনি যে নাচের প্রতি বেশ মনোযোগী হয়েছেন তা দেখে ভাল লাগল। চমৎকার স্তোত্র পাঠ করেছেন কোরক বসু।
বারীন মজুমদার
বেলফুলের গন্ধে
সম্প্রতি তপন থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হল বিজয়গড় মনপ্রাণ প্রযোজিত নাটক ‘বেলফুল’। জীবন যেন এক প্রবহমান নদী। পারিবারিক সম্পর্কও অনেকটা তাই। কখনও ভাঙে, কখনও গড়ে। প্রিয়তোষ এবং মালিনীর দাম্পত্য জীবনে চিড় ধরে বোঝা পড়ার অভাবে। তাদের কোনও সন্তান নেই। অবধারিত ভাবেই যেন আজ সেখানে অশান্তির কালো মেঘ। এদিকে চরিত্রহীন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যে কিনা বিভিন্ন মহিলাকে দীর্ঘ দিন অনুসরণ করে, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে সেই মহিলাকে দিয়ে পর্নগ্রাফি শ্যুট করায়। এভাবেই মালিনীকে অনুসরণ করে, ছলে-বলে-কৌশলে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায়। তাকে দিয়ে পর্নগ্রাফি শ্যুট করাতে চায় কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে মালিনী নিজের ভুল বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়।
সব জেনেও প্রিয়তোষ কি মালিনীকে আবার ঘরে তুলবে? নাটকের গতি পৌঁছয় চূড়ান্ত ক্লাইম্যাক্সে। প্রতিটি দৃশ্যই দর্শকদের ভাবায়। ভাল অভিনয় করেছেন প্রিয়তোষ (প্রবীর আদিত্য), মালিনী (স্বাতী মুখোপাধ্যায়) এবং বাবুলাল (বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়) যথাযথ। তবে চরিত্রহীন-এর ভূমিকায় সঞ্জীব সরকারের প্রাণবন্ত অভিনয় মনে দাগ কাটে। নাটক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এবং নির্দেশনায় বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
পিনাকী চৌধুরী
দরদ দিয়ে
সমবেত সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু বাংলা অ্যাকাডেমিতে। পরে ছোটদের নৃত্যনাট্য ‘খেয়াপার’ বেশ নজর কাড়ে শ্রোতাদের। প্রত্যেকের অভিনয়ে ধরা পড়ে চর্চা ও নিষ্ঠার ছাপ। অনুষ্ঠানের সব শেষে রবীন্দ্রসংগীত শোনালেন মধুছন্দা ঘটক। ‘তোমায় গান শোনাবো’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাবো না’ প্রভৃতি গানগুলি বেশ দরদ দিয়েই শোনালেন শিল্পী।
খাটুরা চিত্তপট
খাটুরা চিত্তপট নাট্য সংস্থা নাট্যমেলা ও নাট্য কর্মশালার আয়োজন করেছিল। যেখানে মূল প্রশিক্ষক ছিলেন অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। নাট্য প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল বাচিক অভিনয়ে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই এসেছিলেন এই সম্মেলনে। উল্লেখ্য, তরুণ প্রজন্মদের আগ্রহ ছিল লক্ষণীয়।
এ রকম নাট্যশালায় নতুন প্রতিভারও সন্ধান মেলে। আর তাই উদ্যোক্তা শুভাশিস রায়চৌধুরীর মতে, থিয়েটার নিয়ে আরও মানুষের কাছে পৌঁছনোই আমাদের সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তব প্রেম সুধারসে
সরলা রায়ের জন্মদিবসে সম্প্রতি গোখেল মেমোরিয়ালের স্কুল প্রাক্তনীদের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় বেদগান পরিবেশনের মাধ্যমে। স্ত্রোত্র পাঠ করলেন দীপশিখা। পরে ছিল নৃত্য ও গানের একটি সম্মিলিত পরিবেশনা। নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন অনুশ্রী চাকী। গানে ছিলেন মধুমিতা ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য পর্বটি ছিল নৃত্য গীতিআলেখ্য ‘মনের কথা’। নারী মনের নানা ভাব ও আবেগের কালপর্ব ভিত্তিক একটি পাঠধারা। যেখানে সুচিন্তিত বিন্যাসে গাঁথা হয়েছিল গানগুলি। বনানী দে পাঠ ও গানে মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছেন। পাঠে আরও ছিলেন স্বাতী রায়। গানগুলির মধ্যে ‘আমরা এমনি এসে’ উল্লেখযোগ্য। সুছন্দা ঘোষের ‘আমি সন্ধ্যাদীপের শিখা’ এই আলেখ্যে এক অনন্য সংযোজন। ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’ সমবেত নৃত্য ও সম্মেলক গানে আলেখ্যটিকে সত্যিই উজ্জ্বলতা এনে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অনিন্দিতা সর্বাধিকারীর একক সংলাপ সমন্বিত নাটক উপস্থাপনার গুণে ছিল বড়ই আন্তরিক। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন রঞ্জনী ও দীপশিখা।
সুলগ্না বসু
সন্ধিক্ষণে
অনুপম মল্লিকের পরিচালনায় পাঁচপোতা সন্ধিক্ষণ তিন দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। শুরুতেই ছিল প্রদর্শনী চার্লি চ্যাপলিন। এ ছাড়াও ছিল শিশু নাটক ‘ভীম বধ’। পূর্ণাঙ্গ নাটক ‘নিঃসঙ্গতা’। তৃতীয় দিনে ছিল ‘পড়শি’। অনুষ্ঠানে নজর কেড়েছে প্রাদেশিক লোকনৃত্য, নৃত্যালেখ্য ও পাপেট শো। অনুপমের ইচ্ছা, পরের বছর থেকে এই উৎসব চলবে টানা সাতদিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy