প্র: আজকাল বেশি বয়সে বাচ্চা হয় বলেই কি অসুস্থ শিশুর ছড়াছড়ি?
উ: সেটা একটা কারণ অবশ্যই। তবে ছড়াছড়ি বললে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। ১০০ জন নবজাতকের মধ্যে ৩-৪ জনের জন্মগত কিছু অসুখ থাকতে পারে। তবে একটু সচেতন হলে তার প্রায় সবগুলিকেই ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।
প্র: সচেতন বলতে? গর্ভসঞ্চার হলে ডাক্তার তো দেখানো হয়ই।
উ: আগেই দেখাতে হবে। ডাক্তার দেখিয়ে ওজন, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন সব ঠিকঠাক আছে কিনা জেনে, না থাকলে সে সব ঠিক করে তবে গর্ভধারণের চেষ্টা শুরু করতে হবে। অসুখ-বিসুখ থাকলে সে সবও বশে নিয়ে আসতে হবে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। প্রেশার, সুগার, থাইরয়েড ইত্যাদি আছে কিনা, শরীরে যৌন রোগের বীজ আছে কিনা, সে সব কিছু জেনে-বুঝে নিতে হবে। পরিবারে জেনেটিক অসুখ থাকলে ক্রোমোজোমাল স্টাডিও করতে হতে পারে। অর্থাৎ প্রি-ন্যাটাল কাউন্সেলিং করিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে কাজে নামতে হবে।
প্র: গর্ভসঞ্চারের আগে কিছু ওষুধও তো খেতে হয় বোধহয়?
উ: হ্যাঁ স্পাইনা বাইফিডা নামে শিশুর জন্মগত শিরদাঁড়ার ত্রুটি এড়াতে গর্ভসঞ্চারের তিন মাস আগে থেকে ফোলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করতে হয়। অপুষ্টি, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি থাকলে খেতে হয় সে সব ওষুধও। কোনও অসুখ-বিসুখের জন্য ওষুধ খেলে, সে সব ভ্রূণের জন্য নিরাপদ কিনা দেখে নেওয়া জরুরি। না হলে ওষুধ পাল্টে দিতে হয়।
প্র: হঠাৎ গর্ভসঞ্চার হলে তো প্রি-ন্যাটাল কাউন্সেলিং-এর সুযোগ নেই?
উ: সে ক্ষেত্রে গর্ভসঞ্চার হওয়ামাত্র ডাক্তারের কাছে যাবেন। তাঁর পরামর্শ মতো চলবেন। ভ্রূণের জন্য বিশেষ কিছু পরীক্ষা করাতে বললে মনে দ্বিধা না রেখে করিয়ে নেবেন।
প্র: সোনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা এ সব তো হয়ই?
উ: এটুকু যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে ভাবী মায়ের বয়স যদি ৩৫-এর বেশি হয়, তাঁর ডায়াবেটিস-হাইপ্রেশার-থাইরয়েডের সমস্যা-মৃগী ইত্যাদি থাকে, তাঁর বা তাঁর পরিবারে থ্যালাসিমিয়া-ডাউন সিনড্রোম-সিকল সেল ডিজিজ-মাসকুলার ডিসট্রফি জাতীয় জেনেটিক অসুখ থাকে। এ সব ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিতে হয় ভাবী সন্তান নিরাপদ কিনা।
প্র: যেমন?
উ: ধরা যাক জেনেটিক অসুখ। এই সমস্যা ধরতে গর্ভাবস্থার ১১-১৪ সপ্তাহে ডাবল মার্কার টেস্ট নামে একটি রক্ত পরীক্ষা ও নিউক্যালি ট্রান্সলুসেন্সি স্ক্যান নামে একটি বিশেষ ধরনের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয়। যাকে বলে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার স্ক্রিনিং। তারপর হিসেব করে দেখা হয় ভাবী সন্তানের এই সব রোগ হতে পারে কিনা। কিন্তু অনেকেই এ সব করাতে চান না।
প্র: কেন? পরীক্ষাগুলি কি জটিল?
উ: পরীক্ষা জটিল নয়। কিন্তু অনেকে ঠিক করে নেন যাই হোক না কেন, তাঁরা ভ্রূণ নষ্ট করবেন না, কারও পরিবারে আপত্তি থাকে। কেউ আবার করেন না সচেতনতার অভাবে। কারও ভাবতে ভাবতেই সময় পার হয়ে যায়।
প্র: সময় পার হয়ে গেলে আর করে লাভ নেই?
উ: অন্য পরীক্ষা করাতে হয়। ১৫-২১ সপ্তাহে করা হয় কোয়াড্রুপল টেস্ট। তাতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে জরায়ুর তরল বা প্ল্যাসেন্টা থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সন্তানের রোগ আছে কি নেই।
প্র: এই সব পরীক্ষা করলে শুনেছি গর্ভপাতের আশঙ্কা বেড়ে য়ায়?
উ: পরীক্ষা যে সময় করা হয়, তখন গর্ভপাতের আশঙ্কা এমনিতেই বেশি থাকে। পরীক্ষার জন্য সে আশঙ্কা বাড়ে ১ শতাংশ। ব্যাপারটা তা নয়। সন্তানের জটিল জেনেটিক অসুখ বা ক্রোমোজোমাল ত্রুটি থাকলে প্রাকৃতিক কারণেই গর্ভপাত হয়ে যায়।
প্র: ভাবী সন্তানের জেনেটিক রোগ থাকলে কী করণীয়?
উ: জটিল অসুখে গর্ভপাত করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তারপর যথাযথ সাবধানতা নিয়ে পরের সন্তানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
প্র: ওষুধ খাইয়ে বা অপারেশন করে এই সমস্যা সামলানো যায় না?
উ: না।
প্র: গর্ভাবস্থায় থাকাকালীনই শুনেছি বাচ্চার অপারেশন করা যায়?
উ: সেটা কিছু ক্ষেত্রে করা যায় বাচ্চার গঠনগত ত্রুটি থাকলে।
প্র: গঠনগত ত্রুটি আছে কিনা তা কীভাবে বুঝব?
উ: অ্যানাটমি বা অ্যানামোলি স্ক্যান নামে বিশেষ ধরনের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করলেই ধরা পড়বে তার সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক আছে কিনা।
প্র: না থাকলে সার্জারি?
উ: কিছু ক্ষেত্রে সোনোগ্রাফির দিক নির্দেশ ইন্ট্রা-ইউটেরাইন সার্জারি করা যায়। ধরা যাক, শিশুর ব্লাডারের মুখ আটকানো আছে, ইউরিন জমে জমে কিডনি খারাপ হচ্ছে। গর্ভসঞ্চারের তিন মাসের মধ্যে এই সমস্যা ধরা যায়। তখন অপারেশন করে ব্লাডারের মুখ চওড়া করে টিউব পরিয়ে দিলে সমস্যা তখনকার মতো মিটে যায়। এর পর বাচ্চা জন্মালে আবার অপারেশন হয়।
প্র: হার্টে বা অন্য কোথাও সমস্যা থাকলে?
উ: সে সব সামলাতে হয় জন্মের পর। এমন জায়গায় প্রসব করাতে হয় যেখানে বাচ্চার দেখভালের ব্যবস্থা আছে। এবং প্রয়োজনে জন্মের পরই অপারেশন করা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy