প্র: চলতে ফিরতে মাঝে-মধ্যে মনে হচ্ছে মাথা ঘুরছে, পড়ে যাব...
উ: পড়ে গেছেন কখনও ?
প্র: না, তেমনটা হয়নি। কিন্তু প্রায়ই এমনটা মনে হচ্ছে।
উ: হয়তো টেনশনে ভুগছেন। বা রোজকার স্ট্রেস সামলাতে পারছেন না।
প্র: স্ট্রেস তো আছেই। কিন্তু তার জন্য মাথা ঘুরবে?
উ: হ্যাঁ। স্ট্রেস থেকেও মাথা ঘোরে। শুধু স্ট্রেস নয়, যে কোনও মানসিক সমস্যা থেকে আকছাড় মাথা ঘোরে। ধরুন, আপনাকে কয়েকটা ইট পাশাপাশি সাজিয়ে তার ওপর দিয়ে হাঁটতে বললাম। দিব্যি হেঁটে চলে যাবেন। কিন্তু যদি সেই ইটগুলোকে ১০ ফুট উঁচু করে দিয়ে হাঁটতে বলা হয়, পারবেন না। মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। আসলে একটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। আর তার থেকেই মাথা ঘোরে।
প্র: বাব্বা, নিরাপত্তার অভাব বোধ হলেই মাথা ঘুরবে!
উ: হ্যাঁ। বয়স্করা প্রায়ই বলেন চলাফেরা করতে গিয়ে টাল খাচ্ছি। মাথা ঘুরছে। বিশেষ করে যাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এঁদের একাকীত্ব গ্রাস করে। সঙ্গে অসহায় বোধ, নিরাপত্তাহীনতা। আর তার বহিঃপ্রকাশ হয় ওই টাল খাওয়া দিয়ে। অথচ যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কি পড়ে গিয়েছেন কখনও, বা কেউ কি বলে আপনি টাল খাচ্ছেন, উত্তর আসবে, না। মানে ভীতি থেকে মাথা ঘোরে। আবার মাথা ঘুরলে একটা ভয় কাজ করে, এই বুঝি পড়ে যাব। তার থেকে টেনশন, ভীতি তৈরি হয়।
প্র: মানে দুটোই হয়?
উ: হ্যাঁ। এক জন রোগীর কথা বলছি। যিনি বহু বছর হয়ে গেলে শুয়ে ঘুমোতে পারেন না। বসে বসে ঘুমোন। কারণ শুলেই তাঁর মাথা ঘোরে। তাঁকে শোওয়ানোর চেষ্টা করলেই তিনি লাফিয়ে উঠে পড়েন। মনে ভয় ঢুকে গেছে শুলেই বুঝি মাথা ঘুরবে।
প্র: এ সব ক্ষেত্রে সমাধান কী?
উ: কাউন্সেলিং করতে হয়। সঙ্গে হালকা অ্যান্টিডিপ্রেশনের ওষুধ দিলেই কাজ হয়।
প্র: কিন্তু মাথা ঘোরার পেছনে অনেক কঠিন অসুখও তো থাকে শুনেছি?
উ: ২৫% ক্ষেত্রে রোগীর পজিশনাল ভার্টিগো হয়। মানে মাথা নাড়ালেই মাথা ঘোরে। আসলে কানের ভেতরের কিছু ছোট ছোট পার্টিকল স্থানচ্যুত হয়ে যায়। তখন মাথা নাড়ালেই মাথা ঘুরতে থাকে। শুতে গেলেন, বসতে গেলেন, নীচের দিকে তাকালেন, নিচু হয়ে ঠাকুর প্রণাম করলেন, চট করে মাথা ঘুরে যাবে।
প্র: এ রকম হলে কী করব?
উ: যদি পজিশনাল ভার্টিগো হয় মানে মাথা নাড়লেই মাথা ঘোরে, তবে ভয় পাবেন না। মাথা বেশি উঁচু নিচু করবেন না। শোওয়ার সময় মাথাকে চার-পাঁচটা বালিশের ওপর রেখে শোবেন। কয়েক দিন পর নিজের থেকে কমে যায়।
প্র: আর ওষুধ?
উ: মাথা ঘোরার ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। খেলেও এক-দুই দিন। তার বেশি নয়।
প্র: কিন্তু তার পরও যদি না কমে?
উ: পজিশনাল ভার্টিগো নিজের থেকে কমে যায়। না কমলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ম্যানুভার করতে হতে পারে। এতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাথা ঘুরিয়ে সমস্যা মেটানো হয়। আর অন্য কারণে মাথা ঘুরলে ডাক্তার দেখিয়ে কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করতে হবে। তবে নিজে নিজেই দোকান থেকে মাথা ঘোরার ওষুধ মুড়িমুড়কির মতো কিনে খাবেন না। তাতে উল্টে ক্ষতি হবে।
প্র: কিন্তু অনেক সময় শুনি মাথা ঘোরার ওষুধ নিয়মিত খেয়ে যেতে হয়। নইলে আবার মাথা ঘুরতে থাকে...
উ: মাথা ঘোরার ওষুধ বেশি দিন খেলে আপনার ব্যালেন্স সিস্টেমটাই বিগড়ে যেতে পারে। শরীরকে ব্যালেন্স করার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। মাথা ঘুরলে মস্তিষ্ক নিজে নিজেই সেটা ব্যালেন্স করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ ধরনের ওষুধ বেশি খেলে মস্তিষ্ক আর মাথা ঘোরা উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে ব্যাপারটা আর নিজের থেকে ঠিক হয় না। বাজারে যে সব মাথা ঘোরার ওষুধ মেলে সেগুলো উপসর্গ কমিয়ে দেয়। কিন্তু কী কারণে মাথা ঘুরছে সেটা জানা যায় না। ফলে তার চিকিৎসাও হয় না। বলতে পারেন পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
প্র: তবে?
উ: কথায় কথায় মাথা ঘোরার ওষুধ খাবেন না। এমনিতে মাথা ঘুরলে কষ্ট হয়। বমিও হতে পারে। কিন্তু সেটা কিছুক্ষণ। হয়তো কয়েক ঘণ্টা হল। বা দিন দুয়েক থেকে চলে গেল। যদি কেউ বলে তার এক মাস ধরে বাই বাই করে মাথা ঘুরছে, তবে বুঝতে হবে সে অন্য কিছুর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। সত্যিকারের মাথা ঘোরা থেমে যেতে বাধ্য।
প্র: কীসের সঙ্গে?
উ: মাথা ঘোরা এমন একটা অনুভূতি যেখানে মনে হয় চারপাশটা ঘুরছে। আর টাল খাওয়ায় সে রকম হয় না। মনে হয় পড়ে যাচ্ছি। এটা অনেকে আলাদা করতে পারেন না। ধরুন পর উঠতে গিয়ে দেখলেন, সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাব। এটা ঠিক মাথা ঘোরা নয়। এটা সিনকোপ। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে গিয়ে এমনটা হয়।
প্র: ধরুন চলতে ফিরতে মাথা ঘুরছে?
উ: চলতে ফিরতে মাথা ঘুরলে মোশন ভার্টিগো হয়। এক রকমের মাইগ্রেন থেকে এমনটা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করতে হবে। আর যদি দেখেন কানে আওয়াজ হচ্ছে, কান ভারী হয়ে যাচ্ছে আর তার পর মাথা ঘুরছে। সেটা কানের এক রকমের অসুখ থেকে হয়। সে ক্ষেত্রের সেই অসুখের চিকিৎসা করতে হবে।
প্র: মাথা ঘুরলে কী করব?
উ: জ্বর হলে যা করেন তাই করবেন। জ্বরে যেমন তিন দিন চুপচাপ ক্রশিন খেয়ে বিশ্রাম নিতে বলা হয়, পরে যদি দেখা যায় জ্বর কমছে না, তবে অন্য পরীক্ষা করা হয়, এটাও তেমনি। বিশ্রাম নেবেন। পজিশনাল ভার্টিগো হলে মাথা নিচু করবেন না। মাথা সোজা রেখে কাজ করতে হবে। তবে বেশি দিন সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে। কারণ কিছু ক্ষেত্রে মাল্টিপল স্কেলোরোসিস বা সেরিবেলাম স্ট্রোক, বা মস্তিষ্কের টিউমার থেকেও মাথা ঘোরে।
প্র: স্পন্ডিলোসিস থেকেও তো মাথা ঘোরে?
উ: একদম না। অনেকেই এমনটা মনে করেন। কিন্তু স্পন্ডিলোসিস থেকে কখনই মাথা ঘোরে না।
যোগাযোগ- ৯৮৩০০৫২৫৮০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy