Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলা নাটকের হল হকিকত

রামায়ণ’ নয় ‘সীতায়ন’। সীতার চোখ দিয়ে কিংবা বলা যায় আজকের নারীর চোখ দিয়ে দেখা অন্য রামায়ণ। রোকেয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাংলার রঙ্গমঞ্চে মলয় রায় নির্মাণ করলেন এমনই এক নাটক। সমস্ত নারীর অবচেতনে বছরের পর বছর রামায়ণ নিয়ে নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে দৃঢ় ও যথাযথ প্রশ্নচিহ্নগুলোই এক অভূতপূর্ব নাট্যমোড়কে উঠে এসেছে সীতায়নে।

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

বদলেছে সীতার মূল্যায়ন

মলয় রায়ের ‘সীতায়ন’ নাটকে। দেখে এলেন বিপ্লবকুমার ঘোষ

রামায়ণ’ নয় ‘সীতায়ন’। সীতার চোখ দিয়ে কিংবা বলা যায় আজকের নারীর চোখ দিয়ে দেখা অন্য রামায়ণ। রোকেয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাংলার রঙ্গমঞ্চে মলয় রায় নির্মাণ করলেন এমনই এক নাটক। সমস্ত নারীর অবচেতনে বছরের পর বছর রামায়ণ নিয়ে নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে দৃঢ় ও যথাযথ প্রশ্নচিহ্নগুলোই এক অভূতপূর্ব নাট্যমোড়কে উঠে এসেছে সীতায়নে। রামায়ণে রামচন্দ্র এক মহামানব। তাঁর বীরত্ব, স্বার্থত্যাগ, মহানুভবতা তাঁকে দেবত্বের আসনে বসিয়েছে। কিন্তু সীতা? জন্ম থেকেই দুর্ভাগ্য তাঁর ছায়াসঙ্গিনী। বাহ্যিক দুঃখ সীতার মনকে কখনও মলিন করতে পারেনি। কিন্তু প্রিয়তম মানুষটি যখন সবার সামনে অপমান করেন, তখন আগুনকেই যেন নিশ্চিন্ত আশ্রয় বলে মনে হয়।

আগুন সীতাকে পোড়াতে পারেনি। কিন্তু অগ্নিদহনের থেকেও হাজার গুণ বেশি অপমানের জ্বালা সীতার হৃদয়কে জ্বলন্ত অঙ্গারে পরিণত করেছিল। তিনি সেই জানকী, যশস্বী জনক যাঁকে কন্যা করে নিয়েছিলেন। তিনি সেই বৈদেহী, যাঁর অতুল রূপে দেশের সমস্ত রাজারা বিয়ে করতে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি সেই মৈথিলি, যিনি স্বেচ্ছায় রাজসুখ ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে বনজীবনকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সেই সীতা, যিনি রাবণের সমস্ত প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শনকে উপেক্ষা করে শুধু স্বামীর পথ চেয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ রামচন্দ্র যখন রাজা হলেন, তা শুধু তাঁরই স্বত্ব। রানির যেন কোনও অধিকার নেই রাজকুলে। শুধু রাজা ইচ্ছা করলেই নির্বাসন দিতে পারবেন—এ কেমন ব্যবস্থা! এ কেমন রাষ্ট্র! ‘যে কুল ওই নির্বাসনের প্রতিকার করতে পারেনি, সেখানে আমি আর ফিরে যাব না। ওই কুল আমার নয়, ওই রাষ্ট্র আমার নয়, ওই স্বামীও আর আমার নয়। এমনকী ওই পুত্ররাও আর আমার থাকবে না। আমার শরীর, মন, সমগ্র জীবন যার জন্য উৎসর্গ করেছিলাম, তারা বড় নিষ্ঠুর। আমরা মেয়েরা যেন অন্য লোক, যেন মানুষ না, এই সমাজেরও কেউ না। আমার প্রকৃতির কোলে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, সব মানুষ থেকে দূরে, যেখানে কেউ আমাকে আর খুঁজেও পাবে না।’

তবে নাটকের শেষ প্রান্তে অসহায় সীতা বদলে যান এক প্রতিবাদী নারীচরিত্রে। ‘সতীত্বনাশ একটা দুর্ঘটনামাত্র, লঙ্কাযুদ্ধে আপনার বা লক্ষ্মণের নাগপাশে বদ্ধ হওয়ার মতোই শারীরিক আক্রমণ, ধর্ষিতা নারীর শরীর তাতে পরিবর্তিত হয় না, মনও না…. তৈরি করেছেন নারীদের আয়ত্তে রাখার জন্য। সতীত্ব এক অস্ত্র যা আপনারা নারীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেন। পুরুষের জন্য যদি সতীত্বের প্রয়োজন না হয়, নারীর জন্যই বা কেন তা প্রযোজ্য হবে।’ রোকেয়ার কণ্ঠের এই চরম সত্যটা শুধু যে দর্শকদের চেতনাকে স্পর্শ করছে তাই নয়, চোখে জল আনিয়েছে। এখানেই নাটকটির প্রাসঙ্গিকতা এবং প্রকৃত সার্থকতা।

মল্লিকা সেনগুপ্তর উপন্যাসকে অবলম্বন করে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে এই নাটক। নাট্যকার, পরিচালক মলয় রায় এই আঙ্গিকটাকে বলছেন ‘স্টোরি টেলিং ফর্ম’। এ নাটকে মূলত দুজন কুশীলবকে ব্যবহার করে গোটা রামায়ণের সীতার অধ্যায়গুলির নির্যাসকে তুলে ধরা হয়েছে। সীতাময় এই নাটকে রোকেয়া একই সঙ্গে গল্পকার, আবার তিনিই কৌশল্যা এবং অবশ্যই সীতা। অসাধারণ অভিব্যক্তি রোকেয়ার অভিনয়ে। রোকেয়ার যোগ্য সঙ্গত সুমন। রোকেয়ার কণ্ঠের অপূর্ব ওঠাপড়া এবং রোকেয়া-সুমনের শরীরী অভিনয় নাটকটির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য কুশীলবদের মধ্যে ছিলেন সম্পূর্ণা, রাত্রি, সোমনাথ, উপদেশ, সন্দীপন, প্রীতম, প্রসেনজিৎ ও সৌরদীপ। জয়দীপ ও সংযুক্তার নেপথ্য কণ্ঠ, আলোর চমৎকার ব্যবহার প্রশংসনীয়।

নাক যখন বড় হয়

উষা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দর্দে নাক’ দেখলেন মনসিজ মজুমদার

রঙ্গকর্মীর নতুন নাটক ‘দর্দে নাক’ (কাহিনী মহঃ বশির, নাটক ও পরিঃ উষা গঙ্গোপাধ্যায়)। গানে, নাচে, দৃশ্যময়তায় এক বর্ণাঢ্য কৌতূক নাটক হলেও মূলত বিচার বোধহীন অস্থির জনমানসিকতা নিয়ে তীব্র প্রহসন। উপকথার মতো গল্পে এক দরিদ্র পাচকের নাক হঠাৎ একদিন বিশাল লম্বা হয়ে যায়। প্রথমে জনতা ভয় পায়। পরে কোনও ঐশ্বরিক ব্যাপার মনে করে পয়সা দিয়ে অলৌকিক নাক দর্শন করে। ফলে দরিদ্র রাঁধুনি একদিন ধনী প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বনে যায়। কিন্তু রাজনীতি করতে না চাওয়ায় তার নাক নকল বলে প্রচার হয় এবং জনতা আবার রেগে যায়। বিদেশি ডাক্তাররা পরীক্ষা করে নাক নকল নয় প্রমাণ করলে আবার তার জনপ্রিয়তা ফিরে আসে কিন্তু এই ওঠা-পড়া জনপ্রিয়তার খাঁচা থেকে এখন মুক্তি চায় সে।

দু-তিন পাতার গল্পকে উষা সুষ্ঠু পরিচ্ছন্ন পূর্ণাঙ্গ নাটকের রূপ দিয়েছেন। মঞ্চায়ন প্রযোজনা অর্জন করেছে গল্পের লোকসারল্য ও গ্রামীণতার মেজাজ। কোরাসের সমবেত নাচগান, অস্থিরমতি জনতার উচ্ছল মঞ্চ-চারণা এবং বর্ণময় দৃশ্য পরিকল্পনা সমেত নাটক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শককে যেমন কৌতুকে রঙ্গে উদ্দীপ্ত রাখে তেমনই অস্থিরমতি জনতার অনিশ্চিত বিচারবোধ সম্পর্কে সচেতন করে। মুখ্য ও পার্শ্ব চরিত্রগুলির অভিনয় দক্ষতায় কাহিনির লোকচরিত্র অটুট থেকেছে। প্রায় একই গল্প নিয়ে যদিও লেখক মনোজদার লেখা নিয়ে কটকের চেতনা নাটক করেছে ‘আবু’। লম্বা নাকের বদলে নায়কের খ্যাতি বিশাল বিশাল আবের জন্যে। দুটি প্রযোজনার মেজাজ ও প্রয়োগ ভিন্ন, একটির বিষয় জনমনস্তত্ত্ব, অন্যটির অভিমুখ ব্যক্তি চরিত্রে খ্যাতি ও ক্ষমতার লোভ।

নৃত্যের নতুন রূপে

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে দর্পণীর শিল্পীরা আয়োজন করেছিল দু’দিনের নৃত্যোৎসব। ওড়িশি, ভরতনাট্যমের মতো শাস্ত্রীয় নৃত্যের পাশাপাশি বর্ষাকে কেন্দ্র করে রবিঠাকুরের গান ও আবৃত্তি সহযোগে অর্ণব ও সৌমিলীর দ্বৈতনৃত্যে আবেগ ও অনুভূতির যুগপৎ প্রকাশ ঘটে ‘ভরা ভাদর’ উপস্থাপনাটিতে। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা গ্রাস করে বর্তমান যুবসম্প্রদায়ের স্বপ্ন। অর্ণব এই কঠিন বাস্তবটিকে মর্মে উপলব্ধি করে মহাভারতের অভিমন্যুর আখ্যানটিতে, যার ফলশ্রুতি তার ‘যুগান্ত’ পরিবেশনাটি। যেখানে আধুনিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে-অভিমন্যুর জীবনের আক্ষেপ, টানাপড়েন ও বলিদান প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপিত হয় অর্ণবের সুচারু নৃত্যবিন্যাসে। শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে ছৌ, থাংটা, কলারিপায়টু, লোকনৃত্য ও থিয়েটারের সমন্বয়ে অভিমন্যুর জন্ম, পাশাখেলা, চক্রব্যূহ, বৃহন্নলার নিকট উত্তরার নৃত্যশিক্ষা ইত্যাদি দৃশ্যগুলি ছবির মতো দৃশ্যমান হয়। রবিঠাকুরের ‘মায়ার খেলা’ অবলম্বনে ‘মায়া’ ছিল অর্ণবের আরও একটি নতুন প্রযোজনা। মায়ার ভূমিকায় অর্ণব ও অমরের ভূমিকায় ছিলেন মনোজিৎ সাহা। শান্তা চরিত্রে আলোকপর্ণা গুহ ও প্রমোদার লাস্যময়ী চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলেন অলকানন্দা রায়। মমতাশঙ্কর ব্যালে ট্রুপের ‘উৎসব’, বিম্বাবতী দেবী পরিচালিত ‘শক্তি’, অলকা কানুনগোর পরিচালনায় ‘মহাবিদ্যা’, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নবদুর্গা’, সারস্বতের কীর্তনম্ ও মহুয়া মুখোপাধ্যায় পরিচালিত কৃষ্ণভাবমাধুরী ও অসীমবন্ধু ভট্টাচার্য পরিচালিত তালচক্রপরিক্রমা উপস্থাপনাদ্বয় ছিল ভিন্নস্বাদের। অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে রণি ও মিতুল ঘোষের ফিউশন নৃত্যপদটির মাধ্যমে।

চৈতী ঘোষ

পদাবলীর সাফল্য

সম্প্রতি পদাবলীর মূকাভিনয় উৎসবের শুরুতেই ছিল প্রকৃতি দত্তের স্তোত্র পাঠ। এর পরে পরিবেশিত হয় রূপশীর্ষ ও রাজশীর্ষ দাসের দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। এ দিন মুকাভিনয়ে যোগেশ দত্তের পরিচালনায় অরিন্দম বর্মন নিখুঁত অভিনয়ে ফুটিয়ে তুললেন ‘থার্ড আম্পায়ার’। ‘আগুন’ ও ‘আমাকে বাঁচতে দাও’ মূকাভিনয়ে সুন্দর অভিনয় করলেন অরিন্দম, সুশান্ত, অনুদীপা, শ্রীকান্ত বসু। দ্বিতীয় দিনেও নজর কাড়ে ‘রোবট’, ‘প্রত্যাশা’। উন্মীলন সংস্থা কুমারদীপ্ত মাইতির পরিচালনায় পরিবেশন করল ‘পাঞ্চ’, ‘মনের খেলা’ ও ‘দুর্গা’। মুকুল দেবের পরিচালনায় মূক অ্যাকাডেমি মঞ্চস্থ করল ‘পুতুল নাচ’ ও ‘বুদ্ধিযস্য’। শেষ দিনের চমক ছিল দেবেশ দত্তের পরিচালনায় ‘আর রক্ত নয়’। অন্যান্য সংস্থাদের মধ্যে ছিল ‘বর্ধমান নির্বাক’, ‘কাঁচড়াপাড়া মাইম’।

হাসি ও মজায়

‘সাড়ে চুয়াত্তর’ নাটকে।

সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল কলাক্রান্তি প্রযোজিত নাটক ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ (কাহিনি বিজন ভট্টাচার্য)। এই নাটকে হাসি এবং মজায় ভরা জীবনের কিছু টুকরো দৃশ্য উপস্থাপিত হয়েছে। অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউস মূলত পুরুষদের থাকা, খাওয়ার জায়গা। কিন্তু হঠাৎই সেখানে উপস্থিত হয় সুন্দরী রমলা। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় পুরুষদের মধ্যে, কে আগে রমলার কাছে যাবে ভাব জমাতে। কেদার (রাহুল পাল), থেকে শুরু করে বয়স্ক শিব বাবু (অর্জুন চক্রবর্তী), বাদ যায় না কেউই! ঘটতে থাকে মজার সব কাণ্ডকারখানা। কিন্তু পরে দেখা যায় রমলা ও রামপ্রীতি প্রেম বন্ধনে আবদ্ধ হয়। শুরু হয় চিঠি চালাচালি। শেষমেশ বিয়ে।

সূক্ষ্ম হাস্যরস এ নাটকের বড় সম্পদ। রজনী বাবুর ভূমিকায় রাহুল পাল যথাযথ। রমলা (শ্রীপর্ণা বসু) এবং মদন (জয়প্রকাশ দত্ত) সাবলীল। সে তুলনায় তারার ভূমিকায় সুপর্ণা বসু কিছুটা আড়ষ্ট। তবে নাটক যত গড়িয়েছে প্রত্যেকেই যেন যথাযথভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন। নাট্যরূপ দিয়েছেন রত্না ঘোষাল। সম্পাদনা ও নির্দেশনায় অনিমেষ কান্তি ঘোষাল।

পিনাকী চৌধুরী

শান্তির খোঁজে

‘ইতি আমাদের রথী’ নাটকে।

লিখছেন পিয়ালী দাস

কবিগুরুকে নিয়ে বাঙালির যত না চর্চা, কবি-পুত্র রথীন্দ্রনাথকে নিয়ে ততটা নয়। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তিনি খুব দৃঢ়চেতা ছিলেন। জীবনে চলার পথে সর্বদা বাবামশাইয়ের (রবীন্দ্রনাথ) সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। তবুও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একাকীত্বে ভোগা রথী গুরুত্ব দিয়েছিলেন নিজস্ব চাওয়া-পাওয়াগুলোকে। এবার এই রথীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ নয় বছরের বিতর্কিত অধ্যায়ের কথা উঠে এল মঞ্চে। বেহালা অনুদর্শী’র প্রযোজনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল ‘ইতি আমাদের রথী’ নাটকটি। নির্দেশনায় সুমনা চট্টোপাধ্যায়।

প্রয়াত পিতৃদেব রবীন্দ্রনাথ। ইতিমধ্যে সম্পর্কেও শিথিলতা দেখা দিয়েছে স্ত্রী প্রতিমার সঙ্গে। শান্তিনিকেতনের কলুষিত আবর্তও তাঁকে অস্থির করে তুলেছে। মুক্তি চেয়েছিলেন সংসার থেকে, পিতার প্রতিষ্ঠান, সাজানো বাগান সব কিছু থেকে। একটু শান্তি পেতে, নিরিবিলি আশ্রয়ের খোঁজে এই বয়সেই দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বভারতীর অনুজ অধ্যাপক নির্মল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রূপসী স্ত্রী মীরা ও তার শিশু পুত্রকে নিয়ে পাড়ি দেন দেহরাদুনে । এখানেই পরম নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেন জীবনের শেষ দিনগুলো। তবে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে বিশ্বভারতী জুড়ে, আত্মীয়-পরিজন মহলে। এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আত্মত্যাগও ছিল মীরার। স্বামী সন্তানকে নিয়ে গড়ে ওঠা সুখী সাজানো সংসার ছেড়ে যেতে হয়েছিল। এর জন্য অবশ্য তীব্র অভিমানও প্রকাশ পায় মীরার। নাটকে প্রত্যক্ষ করা যায় সে সব ঘটনা। স্বামী এবং রথীন্দ্রনাথ মিলে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবারও কী জানতে চেয়েছিল, মীরা কী চায়? এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ পায় তার।

নিপুণ অভিনয়ে স্পষ্টভাবে ধরা দিলেন চরিত্ররা। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরিত্রে সত্যপ্রিয় সরকারের অভিনয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। গুণী, স্নেহশীলা, নরম মনের মীরা চরিত্রে নির্দেশক সুমনা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় প্রশংসনীয়। সংসারে স্বার্থে জীবনের সঙ্গে আপস করে নেওয়া প্রতিমা ঠাকুরের চরিত্রে স্বাতী চক্তবর্তীও উল্লেখযোগ্য।

ঘর ছাড়ার ডাক

থিয়েটার প্রসেনিয়াম-এর প্রযোজনা ‘ঘর ছাড়ার ডাক’ (রচনা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের)। যাত্রাদলের এক প্রাক্তন অভিনেতা প্রসন্নের জীবনের আকাঙ্খা, ভালবাসা, ব্যর্থতা- নাটকের মূল বিষয়। প্রসন্নের অতিরিক্ত আবেগকে পাগলামি আখ্যা দিয়ে তারই যাত্রাদলের কর্মীরা দল থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায়, স্ত্রী সতী ও পুত্র কালো তাকে পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেয়। এক সময় সে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরে। কালো তখন কারখানার শ্রমিক। ভালবাসে প্রতিবেশীর কন্যা আশাকে। কিন্তু বিয়ের পর ছেলে যদি খেতে না দেয়, এই ভয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়। অপমানিত হতে হয় ছেলের কাছে। অবসাদ গ্রাস করে তাকে। এমন সময় ডাক আসে পুনরায় যাত্রাদলে অভিনয়ের। চাঁদ সদাগরের ভূমিকায়। কিন্তু কী করবে প্রসন্ন? নাটকটি সম্পাদনা করেছেন অম্বর চম্পটি। প্রসন্ন’র ভূমিকায় অম্বর, সতী’র চরিত্রে শিপ্রা চম্পটী, কালো রানা মুখোপাধ্যায় প্রমুখের অভিনয় যথাযথ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy