মিলিয়ে দিল এপার ওপার
শঙ্খমালার তিন দিনের অনুষ্ঠানে
দুই দেশের দুই আবৃত্তির দল আয়োজন করেছিল ‘এপার ওপার বাচিক উৎসব’। তিনদিনের এই উৎসবের উদ্বোধন করেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। উৎসবের প্রথম দিন শঙ্খমালার প্রযোজনা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাব্যনাটক ‘রাজসভায় মাধবী’ উল্লেখযোগ্য। আবৃত্তি শিল্পী রত্না মিত্রর কণ্ঠে বুদ্ধদেব বসুর ‘রুমি কে’ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘চিরদিনের দাগা’ অসাধারণ পরিবেশন। বাংলাদেশের শিল্পী মহম্মদ মজুহিদুল ইসলাম ও শ্রাবণী দাশগুপ্তর আবৃত্তি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। কবিতার গান ও লালন ফকিরের গানে মাতিয়ে দিয়েছেন অভীক মুখোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের শিল্পী আল তুষি। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে দুটি বাচিক প্রযোজনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে মহম্মদ মুজাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় ‘জননী জন্মভূমি’ ও সুমন্ত্র সেনগুপ্তর পরিচালনায় শঙ্খমালার প্রযোজনা বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রথম পার্থ’। উৎসবের দ্বিতীয় দিন শেষ হয় ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তি দিয়ে। শিল্পীর নিবেদনে রবীন্দ্রনাথ থেকে শ্রীজাত প্রার্থিত মর্যাদার মান ছুঁয়ে গেছে।
উৎসবের তৃতীয় তথা শেষ দিনে উৎপল কুন্ডুর আবৃত্তিতে ভিন্নতর গবেষনার প্রকাশ। জসীমউদ্দিনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’-এর শ্রুতি নাট্যরূপ গানে গল্পে অভিনয়ে বেশ জমজমাট প্রযোজনা হলেও একটু মেদ ঝরানোর প্রয়োজন ছিল। সেদিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন ছিল সুমন্ত্র সেনগুপ্তর পরিচালনায় শঙ্খমালার ‘অশেষ করেছ’।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী শৌণক চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির বিভিন্ন কবিতার এক সার্থক যুগল-বন্দি মন কেড়ে নেয়।
তবে বলতেই হয়, আবৃত্তিতে রঞ্জনা সেনগুপ্ত বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখেন। তিন দিনের উৎসব শেষ হয় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।
গান-সাধক
আশিস ভট্টাচার্যের একক শুনলেন শিখা বসু
রবীন্দ্রনাথের গান। বিশেষত পূজার গান তাঁর গলায় এক অন্য মাত্রা পায়। আমারা ঋদ্ধ হই, অনুভবে সিক্ত হই। বুকের মধ্যে সেই পরম সত্তার পায়ের ধ্বনি শুনতে পাই। আশিস ভট্টাচার্য গান করছেন অনেক দিন। কিন্তু আজও তিনি তাঁর গায়কির মধ্যে কোনও ভাবেই সহজ জনপ্রিয়তার পথ খুঁজে নেননি। গুরু শৈলজারঞ্জন মজুদারের আদর্শই তাঁর লক্ষ্য। পরিবেশনে তিনি তন্নিষ্ঠ। যখন গান করেন, তখন তা পূজার ঘর হয়ে ওঠে। কোনও বিশেষ গানের অনুরোধ এনে তিনি অনুগত শিশিক্ষুর মতো বলে উঠতে পারেন, ও গানটা আমার ভাল করে শেখা নেই। যদি গলায় তুলতে পারি, পরে কখনও শোনাব। ঠিক, পুজোতে তো ফাঁকি চলে না।
তাঁর গুরুর প্রতিষ্ঠিত ‘রবিরঞ্জিনী’-র ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত হয়েছিল গানের আসর। প্রথম পর্বে ছাত্রছাত্রীদের সম্মেলক-আটটি গানের সংকলন, ‘শোনো তাঁর সুধাবাণী’। প্রতিটি গানই সুগীত।
দ্বিতীয় পর্বে আশিস ভট্টাচার্যের এককে সুপ্রযুক্ত শিরোনাম ‘চিত্ত পিপাসিত রে’। সেই পিপাসা থেকেই তো ‘গানের ভিতর দিয়ে যখন’। সেই গানের ওপারেই ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি’। ‘আমার যে গান তোমার পরশ’ বুঝি সেখানেই পাবে।’ ‘হার মানালে গো’-র পর ‘নয়ন তোমারে পায় না’ আশিসের গায়নে এক অন্য মাত্রা পায়।
পূজা প্রেম প্রকৃতি অনায়াসে মেশে তাঁর গানে। কী ভাল লাগে ‘বসন্ত তার গান’, আর নাতনির বিবাহ উপলক্ষে লেখা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। অনায়াস নিমগ্ন ‘অনেক দজিনের মনের মানুষকে’ আর ‘শুকনো পাতা কে যে’। আমাদের নিয়ত খোঁজ তো এই ‘কে’-র জন্যই।
‘নিশীথ রাতের প্রাণ’ চড়ার যে পরদায় সুরে বেঁধে নেন, তৈরি হয়ে যায় অপরূপ সুরঋদ্ধ ছবি। পরের গান ‘পূর্বাচলের পানে তাকাই’ – আর তার পরেই শেষ নিবেদনে শিল্পী যেন নিজেই সুর হয়ে বেজে ওঠেন, হয়ে ওঠেন মন্ত্র – ‘তুমি কিছু দিয়ে যাও’। মালা গাঁথা সম্পূর্ণ হয় – সমস্ত পিপাসা মেটে। আমরা প্রস্তুত। এবারই তো ‘তুমি কিছু দিয়ে যাও’।
এক ঘণ্টার গানে সামান্য ক্লান্তি নেই। গুরুর নির্দেশ মতো বাদ্যযন্ত্র শুধু তানপুরা আর এসরাজ। তালবাদ্য, তবলা, খোল। মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের পাশে গুরুর ছবি, পিছনের পরদায়ও এসরাজ বাদনরত শৈলজারঞ্জন। সব মিলিয়েই তো ছবি সম্পূর্ণ হয়।
রূপান্তর তেতাল্লিশ
তিনদিন ধরে পালিত হল রূপান্তর নাট্যোৎসব। উদ্বোধন করলেন প্রবীণ নাট্য-ব্যক্তিত্ব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই নাট্যকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য ৬ জনকে সম্মান জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। উৎসবে যে নাটকগুলি প্রাধান্য পেয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘গন্ডি’, ‘জার্মানের মা’, ‘বিভুঁই’, ‘জতুগৃহ’, ‘অন্ধ খোঁড়ার গপ্পো’। উৎসবের মূল উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন শ্যামল দত্ত, মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়, শশাঙ্ক দত্ত, আশিস পাল, প্রভাত দত্ত।
কানাইলাল সম্মান
খাঁটুরা চিত্তপট সম্প্রতি শিশির মঞ্চে প্রদান করল কানাইলাল চৌধুরী স্মৃতি সম্মান। নাট্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কানাইলাল চৌধুরীর প্রতি উৎসর্গীকৃত এই সম্মান দর্শকদের কাছে খুবই মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তাঁর কন্যাকে বিশেষ অভিবাদন জানালেন প্রদীপ রায়চৌধুরী।
সাফল্যের কথাপ্রসঙ্গ
গোবরডাঙ্গা ‘কথাপ্রসঙ্গ’ নাট্যদল প্রায় পনেরো বছর ধরে নানা প্রয়াস নিয়েছে। প্রতিটি উদ্যোগই সফল। এ বছর আয়োজন করেছিল জাতীয় নাট্য উৎসবের। শিরোনাম ‘আঙিনায় জাতীয় নাট্যমেলা’। সভাপতি বিকাশ বিশ্বাসের ভাষণের পর শুরু হয়ে যায় তিন দিনের নাট্যোৎসব। নজরকাড়া নাটকগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক এসেছিল ভিন রাজ্য থেকে। নজর কেড়েছে সুপ্রিয় চক্রবর্তী ও বিকাশ বিশ্বাসের ‘আমাদের রবিঠাকুর’।
মহাবিশ্বে মহাকাশে
সম্প্রতি কল্যাণ গুহের পরিচালনায় অরবিন্দ ভবনে অনুষ্ঠিত হল ‘ওহে জীবন বল্লভ’। গাইলেন চৈতালি দাস, ইন্দ্রদীপ দাস, সীমা দে, শুক্লা সেনগুপ্ত। রামমোহনের গান গাইলেন সুপ্রিয়া চক্রবর্তী। অন্যান্য গানে ছিলেন কৌশিক দে, কাকলি বন্দ্যোপাধ্যায়, দর্পনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। বন্দনা সিংহের পরিচালনায় আনন্দধারার শিল্পীরা গাইলেন ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’। সুমিতা দাসের পরিচালনায় ‘অরিত্র’র শিল্পীরা শোনালেন ‘আনন্দধ্বনি জাগাও’। অসাধারণ গাইলেন নূপুরছন্দা ঘোষ ও তাঁর ছাত্রীরা। শ্রোতাদের মনে থাকবে ভাস্বতী দত্তের ‘বসে আছি হে কবে শুনিব’।
কৃষ্ণকলি....
আবির্ভাবের অনুষ্ঠানে তাপস নাগ শোনালেন বেশ কয়েকটি কবিতা। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ছাড়াও ছিল নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও নজরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য কবিতা।
পরে কৃষ্ণা মজুমদার শোনালেন নজরুলের ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ কবিতাটি। সব শেষে মৌসুমি কর্মকার শোনালেন বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। তবে ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’ এ দিনের সেরা প্রাপ্তি।
এখনও হেমন্ত
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সমবেত গান শোনাল ছোট্ট শিশুরা। ‘একাল ও সেকাল’ শীর্ষক গীতিনাট্যে গাইলেন অনন্যা, সহেলি, সায়নী, অন্বেষা প্রমুখ। অরুণ রায় শ্রোতাদের মাতিয়ে দিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গানগুলি গেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy