মধ্যযুগের কাব্যে কি সমকালীন কোনও বার্তা পাওয়া যায়? তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল নান্দীপটের নতুন নাটক মনসামঙ্গল-এ (নাট্যরূপ: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, পরি: প্রকাশ ভট্টাচার্য)। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে বিরোধী শক্তিকে বশে এনে জনস্বীকৃতি আদায় করেন অর্বাচীন অনার্য দেবী মনসা। অশুভ শক্তির প্রভাবে বিরোধী নেতা চাঁদ সর্বস্ব হারালেও মতাদর্শ আঁকড়ে থাকেন। পুত্রবধূ বেহুলা আঞ্চলিক শক্তির অত্যাচারের প্রতিকারের জন্যে কেন্দ্রীয় শক্তির কাছে পৌঁছে যান এবং দেবরাজকে নৃত্য-উৎকোচ দিয়ে তুষ্ট করায় তাঁরই নির্দেশে মনসা চাঁদের সন্তান ও সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাবানের সঙ্গে অনৈতিক আপস কেবল বণিক সমাজের নয় আমাদের জাতীয় দস্তুর। মনসার কেড়ে-নেওয়ার ও পাইয়ে-দেওয়ার ক্ষমতাই চাঁদকে নিমরাজী করে আপস করতে এবং মনসাকে জনসমর্থন এনে দেয়। এমন তাৎপর্যের জন্যে পরিচালক নাটকের কোনও ভাঙাগড়া করেননি। শক্তিশালী প্রযোজনার অভিঘাতে দর্শকমন সমকালীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। লোকনাট্যের কাঠামোয় বহু শিল্পীর সমন্বয়ে নির্মিত প্রযোজনার সুসংহত সাংগাঠনিক সৌকর্য লক্ষণীয়। নাচ, গান, অভিনয়ে মঞ্চচারণার বিন্যাসে প্রত্যেকটি সমবেত অনুষ্ঠান সুমসৃণ ও দৃশ্যময়। মূল চরিত্রগুলির একক অভিনয়ে কাহিনি নির্দিষ্ট ভূমিকার অতিরিক্ত এক ব্যঞ্জনা আছে বলেই নাটক সমকালীন তাৎপর্য অর্জন করে। বিমল চক্রবর্তীর চাঁদসদাগর মনসার স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী মুখ। মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়ের বেহুলা কঠোর সংগ্রাম করে সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায় বিচারের জন্যে চাঁদের সর্বনাশ করার তীব্র স্পৃহা, অশুভ ক্ষমতা প্রয়োগে আত্মতৃপ্তি এবং সর্পসঙ্গিনীদের নিয়ে হানাদারি নাচের উল্লাসে সনকার (সঞ্জিতা) মুখে যে ক্রূর হাসি খেলে তাতেই এই প্রযোজনার আধুনিক অভিঘাত সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমস্ত প্রযোজনা যে করুণ সুরের অনুরণনে নিষিক্ত তা সন্তানহারা সনকার (সর্বাণী ভট্টাচার্য) করুণ আর্তি, সুতীব্র প্রসব বেদনা, সর্পদষ্ট লখিন্দরের মৃত্যুতে হাহাকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy