কিছু দিন আগে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা করতে এসেছিলেন এক দম্পতি। দু’জনেই এক প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বিয়ের পর তিন বছর কেটে গেছে, প্রেগন্যান্সির দেখা নেই। পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল, মহিলার হাইমেনই অক্ষত রয়েছে! বাস্তবে শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, বন্ধ্যত্বের পেছনে রয়েছে যৌনজীবন সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণাও। এই প্রসঙ্গে ডা. গৌতম খাস্তগীর জানালেন, ‘‘দেখা গেছে, অনেক শিক্ষিত মানুষও যৌনজীবন সম্পর্কে কম জানেন। সঠিক যৌনশিক্ষার অভাবের জন্যই এমনটা হয়।’’
তা ছাড়া সহবাস নিয়ে অনেকেই নানা রকম স্টিগমায় ভোগেন। ব্যাপারটাকে কেউ অপরিষ্কার, আবার কেউ অপরাধ বলে মনে করেন। ডা. খাস্তগীর জানালেন, অনেক পুরুষের মধ্যে সহবাস নিয়ে ভয় কাজ করে। স্ত্রী’র ব্যথা লাগতে পারে, এই ভয়ে অনেক পুরুষ সহবাস থেকে বিরত থাকেন। মেয়েদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা আমরা অনেক সময়ই শুনি। ব্যথার ভয়ে তারা সাবলীল ভাবে সহবাস করতে পারেন না। আর সেটাই প্রেগন্যান্সির অন্তরায়। মেয়েদের এই সমস্যাকে বলে ভ্যাজিনিসমাস।
শুনতে অবাক লাগলেও এ ধরনের ঘটনা নাকি আকছাড় ঘটে। তেমনই একটি ঘটনা। ছোট থেকেই পড়াশুনোয় খুব ভাল এক ভদ্রলোক পেশাগত জীবনেও দারুণ সফল। কিন্তু ছোট থেকেই জেনে এসেছেন, মেয়েদের শরীর সংক্রান্ত যে কোনও আলোচনা পাপ। যথারীতি বিয়ের পর কিছুতেই সহবাস করতে পারছিলেন না। অনেক কাউন্সেলিং-এর পরও সমস্যা মেটেনি। শেষমেশ ডিভোর্স।
এ সব ক্ষেত্রে সমস্যা ছেলেটির হোক বা মেয়েটির, দুই ক্ষেত্রেই তা মানসিক। দরকার উপযুক্ত কাউন্সেলিং। অবহেলা করলে সমস্যা উত্তোরত্তর বাড়তেই থাকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অয়নাংশু নায়ক জানাচ্ছেন, ‘‘মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে লিবিডো কমে যায়। কারণ যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছে অনেকটাই মানসিক। মুশকিল হল, সহবাসে অসুবিধে হলে অনেক দম্পতিই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চান না। পরিবর্তে অনেকে পর্নোগ্রাফির সাহায্য নেন। কিন্তু এটি আরও একটি ভুল। সহবাস সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার জন্য অবশ্যই প্রি কনসেপশন কাউন্সেলিং করা দরকার।’’
শুধু মাত্র ভীতি বা ধারণা থেকে নয়, শহুরে জীবনযাপন পদ্ধতিও কখনও কখনও সন্তান আসার পক্ষে অন্তরায় হয়ে ওঠে। শহুরে শিক্ষিতদের রিক্রিয়েশন অনেক কিছু। আজ পার্টি, কাল সিনেমা বা পরশু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।
ফলত তাঁরা হয়তো সপ্তাহে এক দিন বা মাসে এক দিন সহবাস করেন। ফলে প্রেগন্যান্সিও আসতে চায় না। ডা. খাস্তগীরের পরামর্শ, সন্তান না এলে প্রথমেই ভেবে বসবেন না, জটিল শারীরিক সমস্যার জন্যে এমনটা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রি কনসেপশন কাউন্সেলিং ভীষণ রকম সহায়ক হয়ে ওঠে।
কিন্তু বাস্তবে হয় কী, প্রেগন্যান্সির দেরি হলেই দম্পতিদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। হতাশাও আসে। মহিলারা এ ক্ষেত্রে খোলাখুলি ভাবে নিজেদের হতাশার কথা জানালেও পুরুষরা পারেন না। নিজেদের গুটিয়ে নেন। যদি বোঝা যায় সমস্যাটি পুরুষের, তাঁরাও ডিপ্রেশনে ভোগেন। তাই পুরুষের বন্ধ্যত্ব অনেক বেশি জটিলতা তৈরি করে। যা থেকে স্বাভাবিক সহবাসে বিঘ্ন ঘটে। ডিপ্রেশনে হরমোনের তারতম্য হয়। পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ডের ওপর চাপ পড়ায় হরমোনের সমস্যা হয়। যে হরমোনগুলো আমাদের সেক্সুয়াল ও রিপ্রোডাকশনের জন্য কার্যকরি।
এ সব ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স চিকিৎসার কথা ভাবা হলেও সমস্যা কমে না। সেখানেও সেই মানসিক উদ্বিগ্নতা। ডা. নায়ক জানালেন, দম্পতি যখন প্রেগন্যান্সির পরিকল্পনা করে, তখন সব সময় তাদের তাঁদের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় সেটি।
স্বভাবতই মানসিক চাপ বাড়ে। চাপ সামলাতে অনেকেই নেশার কবলে পড়েন। তাতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর কোয়ালিটি খারাপ হয়। ছেলেদের ইরেকশন হয় না।
ডা. খাস্তগীর জানাচ্ছেন, সহায়ক বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা করতে গিয়ে মেয়েদের আরও একটা অতিরিক্ত ভয় কাজ করে। এত ওষুধ খাওয়ার জন্য ক্যানসার হবে না তো? এ দিকে এত সময় নষ্ট হল। এখনও অনেক দম্পতি ডোনার এগ বা স্পার্ম-এর সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন।
প্রথম বারেই আইভিএফ করলে সন্তান আসবে, তার ১০০% নিশ্চয়তা কখনও নেই। দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বারের চেষ্টায় সন্তানের মুখ দেখেছেন, এমন দম্পতি বহু আছেন। কিন্তু খরচের কারণে বা ধৈর্য ধরতে না পারায় অনেক দম্পতি তার আগে ভেঙে পড়েন। কেউ বা আত্মহত্যাও করতে যান।
অথচ দত্তক নেওয়ার কথা সে সময় তারা মাথায় আনেন না। বয়সও বাড়তে থাকে। শেষমেশ যখন দত্তকের কথা ভাবেন, তত দিনে তাদের বয়সও পেরিয়ে গেছে।
ডা. গৌতম খাস্তগীর: যোগাযোগ ৯৮৩০৬৬৬৬০৬
ডা. অয়নাংশু নায়ক: যোগাযোগ ৯৮৩০০৫৭৩২৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy